বিএনএ, ফেনী : ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতির জন্য ফেনীর পরশুরামের বিখ্যাত খন্ডলের মিষ্টিকে বাছাই করা হয়েছে। রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার এ কথা জানান।
জেলা প্রশাসক বলেন, জেলাভিত্তিক জিআই পণ্যের তালিকা পাঠানোর জন্য শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিয়েছে। খণ্ডলের মিষ্টির সঙ্গে ফেনীর ইতিহাস ঐতিহ্য জড়িত রয়েছে। তাই খণ্ডলের মিষ্টিকে জিআই পণ্য হিসেবে তালিকায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ফেনীর মিষ্টান্ন জাতীয় খাবারের মধ্যে সব থেকে ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় খাবার খণ্ডলের মিষ্টি। খণ্ডলের মিষ্টির ইতিহাস ৫০ বছরের পুরনো। ফেনীর পরশুরাম উপজেলার খণ্ডল নামক স্থানে এ মিষ্টি তৈরির প্রচলন শুরু হয়, আর উৎপত্তিস্থলের নামানুসারে এ মিষ্টির নামকরণ করা হয়েছে।
খণ্ডলের মিষ্টি তৈরি করা হয় গরুর খাঁটি দুধের ছানা, ময়দা ও চিনির সিরা দিয়ে। সব মিষ্টিই সাধারণত ঠাণ্ডা করে খাওয়া হয় কিন্তু খণ্ডলের মিষ্টি গরম গরম খেতে বেশি ভালো লাগে, আর এটাই খণ্ডলের মিষ্টির বিশেষত্ব।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার পরপরই স্থানীয় কবির আহাম্মদ পাটোয়ারী বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের খণ্ডল হাইস্কুলের পাশে মিষ্টির দোকান দেন। ওই দোকানে কারিগর হিসেবে কাজ নেন কুমিল্লার যোগল চন্দ্র দাস। অল্পদিনের মধ্যে তার তৈরি সুস্বাদু মিষ্টির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। এক সময় এলাকার নামে পরিচিত হয়ে ওঠে খণ্ডলের মিষ্টি নামে।
যেভাবে জনপ্রিয়তা পায় খন্ডলের মিষ্টি
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরুর বছরে ‘পাটোয়ারী মিষ্টি মেলা’ দোকানটি শুরু করেছিলেন কবির আহমদ পাটোয়ারী। ১৯৮৩-৮৪ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে মিয়াধন বিজয়ী হওয়ার পর আশপাশের ইউনিয়ন ও থানাজুড়ে মিষ্টি বিতরণ করেন। এরপর ছড়িয়ে পড়ে খন্ডলের মিষ্টির সুখ্যাতি।
আবার ১৯৯১ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় পরশুরাম ও ফুলগাজীতে আসেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। সেসময় নেতাকর্মীরা তার জন্য উপহার হিসেবে খন্ডলের মিষ্টি নিয়ে আসেন। মিষ্টির সুনাম শুনে ও চেখে দেখে ভীষণ মুগ্ধ হন তিনি। ঢাকায় ফেরার পথে গাড়িভর্তি করে মিষ্টি নিয়ে আসেন।
স্থানীয়রা জানান, এরপর খালেদা জিয়া যতবারই ফেনীতে গিয়েছেন ততবারই তিনি খন্ডলের মিষ্টি খুঁজেছেন। এভাবেই ছড়িয়ে পড়ে খন্ডলের মিষ্টির সুনাম। পরে স্থানীয় প্রবাসীদের মাধ্যমে খন্ডলের মিষ্টি ছড়িয়ে যায় অন্য দেশেও।
দেশে দেশে ছড়িয়ে থাকা ফেনীর প্রবাসীরাও প্রবাসে থাকা স্বজন ও বন্ধুদের জন্য খন্ডলের মিষ্টি নিয়ে যান।
পাটোয়ারী মিষ্টি মেলার স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ বেলাল বললেন, এক সপ্তাহে এই দোকান থেকে কাতার, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকায় প্রায় ৪০ কেজি খন্ডলের মিষ্টি নিয়ে গেছেন প্রবাসীরা।
বিএনএনিউজ/এইচ.এম/এইচমুন্নী