বিএনএ ডেস্ক: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ দেশের উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করেছে। উপকূলীয় বেশ কয়েকটি জেলায় তাণ্ডব চালিয়েছে। এর প্রভাবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে অনেক এলাকা। ভেঙে পড়েছে গাছপালা, বাড়িঘর ও বিদ্যুতের খুঁটি। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এসব এলাকায়। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ।
শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরের দিকে উপকূলীয় প্রায় ১১টি জেলায় আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় মিধিলি। এর প্রভাবে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়োহাওয়া বয়ে যায়। সঙ্গে ছিল প্রবল বৃষ্টি। ভারী বৃষ্টিতে অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এছাড়া এর প্রভাবে এদিন সারাদেশেই ঝরে বৃষ্টি। বরিশাল অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে ঝড়ে গাছচাপায় এবং বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে দুই জেলায় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে শিশু ও বৃদ্ধ এবং টাঙ্গাইলে এক ব্যবসায়ী মারা গেছেন।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রবল ঝড়ে গাছপালা, বাড়িঘর ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে উপড়ে গেছে বড় বড় গাছ। পানি উঠে ক্ষতি হয়েছে মৌসুমি ফসলের। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা ঘর ভেঙে গেছে।
বরগুনা প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাবে দিনভর টানা তুমুল বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে লণ্ডভণ্ড জেলার তালতলী উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকা। কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে অনেক পরিবার। সার্কিট হাউসে গাছ পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার রামগতি ও কমলনগর এলাকায় বিভিন্ন গ্রামে ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। দুই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভেঙে পড়ছে বিদ্যুতের খুঁটি। ক্ষেতের আধাপাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। শীতকালীন সবজি পানিতে নষ্ট হয়েছে।
ভোলা প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আঘাতে ভোলায় সাড়ে তিন শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ভোলার বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এই তথ্য জানা গেছে। সবচেয়ে বেশি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে চরফ্যাশন উপজেলায়। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে জেলায় পাঁচ শতাধিক গাছপালা উপড়ে পড়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রচণ্ড ঝড়ে রেললাইনের ওপর গাছ পড়ে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেট ও নোয়াখালীর রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে সদর উপজেলার কালীসিমা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। দুই ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের কানাইনগর সংলগ্ন এলাকায় কয়লা বোঝাই লাইটার জাহাজ এমভি প্রিন্স অব ঘষিয়াখালী-১ ডুবে গেছে। এসয় সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হয়েছেন ডুবে যাওয়া লাইটারের কর্মচারীরা।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাবে বরগুনার পাথরঘাটা এলাকার এমভি নিশাত নামে একটি মাছ ধরার ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া আরও ২০টি ট্রলারসহ আনুমানিক ২০০ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।
মিধিলির প্রভাবে দেশের সর্বোচ্চ ভোলায় ২৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এছাড়া বরিশালে ২২১ এবং ঢাকায় ৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে সংস্থাটি।
এদিকে চলতি বছরে তিনটি ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি হলো দেশ। সেগুলো হলো- মোখা, হামুন ও মিধিলি। এক বছরে তিনটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানাকে অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ