বিএনএ, চবি:নানান আয়োজনে মধ্য দিয়ে আয়োজিত হচ্ছে ৫৬তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) দিবস। সকাল থেকে ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছে নবীন-প্রবীনদের এক মিলন মেলায়। এদিন সবার মাঝে উৎসাহ- উদ্দীপনা যেমন ছিল তেমনি উদযাপন বাস্তবায়নে ছিল বেশ কিছু অব্যবস্থাপনাও। তবে এ অব্যবস্থাপনার মাঝেও করোনা পরবর্তী এমন আয়োজন উপভোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমানরা।
বিশ্ববিদ্যায় দিবস উপলক্ষে গতকাল থেকে নববধূর সাজে সেজেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। আজ বেলা ১১টায় শোভাযাত্রার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন শুরু হয়। শোভাযাত্রা শেষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন উপাচার্য শিরীণ আখতারসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় জারুলতলায় জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় মূল আলোচনা সভা। ৫৬তম দিবস উপলক্ষে উপাচার্যসহ অতিথিরা কেক কাটেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শুধু পাঠদান, সার্টিফিকেট প্রদানের জন্যই নয়, পাশাপাশি এখানে জ্ঞান, বুদ্ধি, মুক্তবুদ্ধি, সংস্কৃতি, ন্যায় চর্চার। এছাড়া গণতন্ত্র সুসংহত হয়না, মুক্তমতকে অবদমন করা হলে দেশ এগোয় না। এখানে যেন হিন্দি গান, ইংরেজি গান কিংবা হিন্দি সিরিয়ালের চর্চা নাহয়, আমাদের আবহমান সংস্কৃতির অবাধ চর্চা রাখতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় উপ উপাচার্য প্রফেসর বেনু কুমার দে, সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ারুল আজিম আরিফ, প্রফেসর ড. বদিউল আলম, চাকসুর সাবেক ভিপি নাজিম উদ্দীন, মাজহারুল হক শাহ চৌধুরী এবং বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এস এম মনিরুল হাসান। অনলাইনে সভায় যোগ দিয়ে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল করিম ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম।
আলোচনা সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মহিবুল আজিজ। বিকেলে শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানের শব্দে সমস্যায় পড়েছে পরীক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে সকল ধরণের ক্লাস বন্ধ থাকলেও অনুষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন বিভাগের পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষা। জারুলতলার পাশে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের কয়েকটি বিভাগেও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালীন অনুষ্ঠানের উচ্চশব্দে অসুবিধায় পড়েছেন পরীক্ষার্থীরা।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রোকনুজ্জামান বলেন, শব্দের কারণে আমাদের পরীক্ষা দিতে সমস্যা হয়েছে। উচ্চ আওয়াজে গান চলায় আমাদের পরীক্ষার হলে থাকা হল- পরিদর্শকও গানের সাথে গলা মেলান। অনুষ্ঠানের স্থান নির্ধারণের আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত ছিল।
সঞ্চালনা নিয়ে ছিল অসন্তুষ্টি
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া। তবে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা নিয়ে বেশ অসন্তুষ্টি ছিল সাবেক – বর্তমানদের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয় জন্মদিনকে ‘জরমোদিন’ বলা, বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনায় এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মুখ্য সচিব আব্দুল করিমকে মুখ্যমন্ত্রী বলে সম্বোধন করা, চাকসুর দুই ভিপির নাম সম্বোধনে তালগোল পাকিয়েফেলাসহ নানান অসঙ্গতি ছিল সঞ্চালনায়।
সঞ্চালকের এসব ভুলের সময় শোরগোল ওঠে সাবেক-বর্তমানদের মধ্য থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক অভিজ্ঞ সঞ্চালক থাকতে এমন একটি অনুষ্ঠানে অনভিজ্ঞ একজনকে এমন দায়িত্বে রাখা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বলে মনে করেন অনেকে।
উপভোগ করেছেন সাবেক-বর্তমানরা
বেশকিছু অব্যবস্থাপনা থাকলেও করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার পরে এমন একটি অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। দিনভর আনন্দে মেতেছিলেন তাঁরা। অনেকদিন পর ক্যাম্পাসে ফিরে বেশ আবেগপ্রবণ ছিলেন সাবেক শিক্ষার্থীরা।
সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাকিলা নাসরিন। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে আসা নিয়ে তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, সেই ৯৬-৯৭সালের দিকে বের হয়েছি। অনেকদিন পর আসলাম। মনে হচ্ছে আমি এখানের বর্তমান ছাত্রী। খুব ভালো লাগছে।
ঢাকা থেকে এসেছেন রসায়ন বিভাগের ৩৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি এখানে সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্য ছিলাম। বেতন ফি বৃদ্ধি ও অনন্য ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলাম। অনেকদিন পর এসেছি, সাথে বন্ধুরাও এসেছে। খুব ভাল লাগছে, মনে হচ্ছে পুরনো দিনে ফিরে গিয়েছি।
অনুষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য প্রফেসর বেনু কুমার দে তার বক্তব্যে বলেন, চার-পাঁচদিনের মধ্যে প্লান করে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস বাস্তবায়ন করায় কিছু সমস্যা হয়েছে। আশাকরি সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে।
বিএনএ/ নাজমুস সায়াদাত, ওজি