বর্তমান অর্ন্তবতীকালীন সরকার মামলা হামলার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক ভাবে মাইনাস করার নীল নকশা গ্রহণ করেছে এমন অভিযোগ করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা।
এবার জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মাইনাস করার অংশ হিসাবে একটি মহল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় রাখতে কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১৬ই সেপ্টেম্বর দুপুরে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির আয়োজনে ‘দ্বি-কক্ষ পার্লামেন্ট-উচ্চকক্ষ গঠন’ আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন ।
ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করে দেন। জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হলে অবশ্যই পার্লামেন্ট প্রয়োজন। পার্লামেন্ট না হলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। ফলে দ্রুত অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
হস্তান্তর করার পর সেই সরকার সিদ্ধান্ত নেবে কোথায়, কো্ন্ জায়গায় পরিবর্তন করতে হবে। তখন সংবিধান নতুন করে লিখতে হবে নাকি সংশোধন হবে সেটা সংসদ সিদ্ধান্ত নেবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, ছাত্র-জনতার বুকের রক্ত দিয়ে যে নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে সেটাকে নস্যাৎ করার জন্য একটি পক্ষ কাজ শুরু করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ লোক বিভ্রান্তমূলক কথা বলছে। এই সরকার যাদের দায়িত্ব দিয়েছে তাদের মধ্যে অনেকে বলছে নতুন দল করতে হবে। আমাদের বিস্মিত লাগে, নতুন দল গঠনের দায়িত্ব এদের কে দিয়েছে? এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির সঙ্গে সূর মিলিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন চায় গণ অধিকার পরিষদ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিএনপি ও গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে দ্বিমত পোষন করছে ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম বেনিফিশিয়ারি জামায়াত ইসলামী। দলটি এককভাবে ক্ষমতায় যেতে প্রশাসনিক পর্যায়ে নিজেদের মতাদর্শের লোকজনকে বসানোর পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে নিজেদের সংগঠিত করতে চায়। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটা করতে চায় অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সুসর্ম্পক রেখে।
অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ যত বেশি দীর্ঘ হবে জামায়াত ইসলামী রাজনৈতিকভাবে তত বেশি শক্ত ভিত তৈরি করতে সক্ষম হবে। ১৩ই আগষ্ট রাজশাহীতে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের এক সভায় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, গত ৮ই আগস্ট জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই ভাষণে জাতীয় নির্বাচন কবে কিংবা নির্বাচন কতদিন পর হতে পারে—এমন কোনো বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা ছিল না। যে কারণে এই বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচনের রোডম্যাপ না থাকায় অসন্তোষ জানান। এমন অবস্থায় বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের সমালোচনা করে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, এখনো শত শত মানুষ হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। রক্তের দাগ মোছেনি। বন্যায় দেশ আক্রান্ত। এই সময়ে কেউ নির্বাচন নির্বাচন জিকির তুললে জাতি তা গ্রহণ করবে না।
এই অবস্থায় যতই দিন যাচ্ছে বিএনপি ও জামায়াত ইসলামীর দুরত্ব ততই বাড়ছে। রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে মতের মিল থাকলেও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ইস্যুতে বড় দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে। মূলত ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্যে বড় দুই দলই যার যার অবস্থান থেকে তৎপরতা চালাচ্ছে।
এ ছাড়া জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমী গুম অবস্থা থেকে ফেরত আসার পর জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি তোলেন। বিএনপি সমর্থকদের অনেকেই এর কড়া সমালোচনা করেন। এসব নানা ইস্যুতে দল দুটির মধ্যে গত এক মাসে অনেকটা দূরত্ব বেড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর আওয়ামী লীগও মাঠে নেই। রাজনীতির মাঠে একধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। ফাঁকা জায়গায় একটি বড় শক্তি হিসেবে রাজনীতিতে সামনে আসার পাশাপাশি সমমনা ইসলামী দল এবং বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে চায় জামায়াতে ইসলামী ।
বিএনএ,ওজি /এইচমুন্নী