বিএনএ, নোবিপ্রবি: শিক্ষা, শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের নিয়ে মোটা দাগে যে কটি দিন বা দিবস রয়েছে যা অনেকের বিশেষ করে শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে সম্পর্কিত মানুষদের জানা। তা হলো ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস, ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবস, ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এর সঙ্গে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবানুসারে ২০১৯ সাল থেকে যুক্ত হয়েছে ২৪ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস।
‘পরিবর্তনশীল ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে সাক্ষরতার প্রসার’—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ও মহান শিক্ষা দিবস পালিত হয়েছে।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন ক্লাব ও শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদ এ উপলক্ষে র্যালি, সাক্ষরতা দিবস ও মহান শিক্ষা দিবস নিয়ে আলোচনা, তথ্যচিত্র প্রদর্শনীসহ বৈচিত্র্যময় আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল বাকী, নোবিপ্রবি’র কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর এবং শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. বিপ্লব মল্লিক।
অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মালালা ফান্ডের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টিভ মোশাররফ তানসেন। প্রোগ্রামে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষা প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক জি এম রাকিবুল ইসলাম।
এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ওয়ালিউর রহমান আকন্দ, সহকারী অধ্যাপক ফাতেমা বেগম পপি, সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ মো. সিয়াম, প্রভাষক শাহরিয়ার শফিক; শিক্ষা প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামসুল আরেফিন রুমি, অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক আফরিদা জিননুরাইন উর্বি। এডুকেশন ক্লাবের সভাপতি ইমরান হোসেন রিয়াজের সভাপতিত্বে অনুষ্টানটি সঞ্চালনা করেন এডুকেশন ক্লাবের সাধারন সম্পাদক রাফিউজ্জামান।
কর্মসূচিসমূহের শুরুতে এডুকেশন ক্লাব ও শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদ এর আয়োজনে একটি শোভাযাত্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সড়ক সমূহ প্রদক্ষিন করে। র্যালিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ- উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস অডিটোরিয়ামে এসে শেষ হয়। অডিটোরিয়ামে অনুষ্টানের অতিথিবৃন্দরা আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ও মহান শিক্ষা দিবস উপলক্ষে একটি আলোচনা সভায় অংশ নেন।
আলোচনা সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম বলেন, ‘সনদ কিংবা ডিগ্রি অর্জন শিক্ষার মূল লক্ষ্য হতে পারে না। শিক্ষার মাধ্যমে আমাদের আচরণ, অভ্যাস, দক্ষতায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসলে সেটাই সুশিক্ষা। সুশিক্ষা প্রসার ও প্রয়োগে আমাদের নজর দেয়া প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে খুব অল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষা খাতের উন্নয়নে বেশকিছু পদক্ষেপ নেন। যা এখনো আমাদের পথ দেখিয়ে চলেছে। বঙ্গবন্ধুর হাতে করা শিক্ষা কমিশন এখন পর্যন্ত দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা কমিশন।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য বলেন, ‘মানুষ ভুলের উর্দ্ধে নয়। তবে চেষ্টা করতে হবে, যত কম ভুল করে জীবন পরিচালনা করা যায়। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকার কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে তোমাদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছে। তোমরাও নিজেদের দক্ষ জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তুলে জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে, সেটাই প্রত্যাশা। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’
মুখ্য আলোচক মোশাররফ তানসেন বলেন, ‘উন্নয়নের সুফল মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হলে সাক্ষরতার বিকল্প নেই। সাক্ষর না হলে হাতে থাকা মুঠোফোনটিরও কার্যকর ব্যবহার করা সম্ভব নয়। তাই শিক্ষাজীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে যারা ঝরে পড়েছে এবং যারা ঝরে পড়ার ঝুঁকিতে আছে সে সকল শিক্ষার্থীদের সাক্ষরতা ও জীবনমুখী শিক্ষার আওতায় আনতে হবে।’
আজকের প্রোগ্রামে শিক্ষা প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সম্পাদন করা একটি শিক্ষা সম্পর্কিত স্বল্পদৈর্ঘ্য নাটিকা প্রদর্শন করা হয়। নাটিকাটি তৈরিতে শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা প্রদান করেছেন শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফাতেমা বেগম পপি।
এছাড়াও গত ১২ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক শিক্ষা সাক্ষরতা দিবস ও মহান শিক্ষা দিবস উপলক্ষে এডুকেশন ক্লাব ও শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদ কর্তৃক একটি সংসদীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। আজকের আলোচনা সভা শেষে উক্ত প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন শিক্ষা বিভাগ ও রানার্সআপ শিক্ষা প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানের শেষে সভাপতি ইমরান হোসেন রিয়াজ এই প্রোগ্রামে উপস্থিত প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিবৃন্দ, মূখ্য আলোচকসহ কর্মসূচিসমূহ আয়োজনে সহায়তাকারী এডুকেশন ক্লাব ও শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের সকল শিক্ষক- শিক্ষার্থীবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন এবং অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
বিএনএ/শাফি, এমএফ