বিএনএ,সিলেট : বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন(বিসিসিআই) এর অধীন সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত বিলুপ্ত ন্যাচারেল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরী লিমিটেড (এনজিএফএল) এর বিভিন্ন ধরনের স্ক্র্যাপ মালামাল বিক্রির ২য় বার আহ্বানকৃত দরপত্রও গভীর রাতে স্থগিত করেছে। এতে ৩০ জনেরও বেশি সিডিউল ক্রেতা এটিকে আমলাতান্ত্রিক ষড়যন্ত্র ও হয়রানি বলে দাবি করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক ব্যবসায়ি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারি অফিস খোলা থাকা অবস্থায় দরপত্র গ্রহণের কয়েক ঘণ্টা আগে শত কোটি টাকার দরপত্র গ্রহণ স্থগিত করা হলো কার স্বার্থে ? যারা সিডিউলে দর উল্লেখ করে দরপত্র বক্সে ফেলার অপেক্ষায় ছিল তাদের সিডিউল গুলোর কী হবে ? আগামী ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট লকডাউন শুরু হচ্ছে।
এ অবস্থায় আদৌ শিল্প মন্ত্রাণালয় এনজিএফএল এর স্ক্র্যাপ মালামালগুলো বিক্রি করতে আগ্রহী কীনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, গত ২৫ মে ২০২১ বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন এর অধীন সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত বিলুপ্ত ন্যাচারেল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরী লিমিটেড (এনজিএফএল) এর বিভিন্ন ধরনের স্ক্র্যাপ মালামাল বিক্রির ২য় বার দরপত্র আহ্বান করা হয় । দরপত্রের সিডিউল বিক্রির শেষ দিন ছিল ৪ জুলাই। দরপত্র গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয় ৭ জুলাই।
লকডাউনের কারণে তারিখ পিছিয়ে ১৮ জুলাই করা হয়। এ সময়ে সরকারি – বেসরকারি অফিস কার্যক্রমও চলছিল। সারাদেশ থেকে ৩০ টির বেশি প্রতিষ্ঠানের লোকজন দরপত্রে অংশ নিতে সিলেটের বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান নেন।
কিন্তু ১৮ জুলাই শিল্প মন্ত্রনালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা দরপত্র স্থগিতের জন্য শাহজালাল সার কারখানার ব্যপস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দেন।
ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে জেনারেল ম্যানেজার দরপত্র স্থগিত ঘোষণা করেন। এতে ব্যবসায়িদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা এটিকে বিশেষ মহলের যড়যন্ত্র ও হয়রানি হিসাবে দেখছেন।
দরপত্রে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন স্থান হতে সিলেটে আসা ব্যবসায়িরা অভিযোগ করেন, সারকারখানার কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারিদের একটি সিন্ডিকেট প্রথমবার দরপত্র আহ্বান করার পর থেকে কোটি কোটি টাকার মূল্যবান স্ক্র্যাপ মালামাল গায়েব করে দিচ্ছে।
দরপত্র স্থগিত হওয়ায় ওই মহলটি লাভবান হবে বলে মন্তব্য করেন দরপত্রে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা এবং সিলেটের ব্যবসায়িরা।
১৯৬১ সালে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মাইজগাঁও ইউনিয়নে স্থাপন করা হয় ‘ন্যাচারাল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেড’। জাপানের কোবে স্টিল কোম্পানি এটিকে জাপানি প্রযুক্তি দ্বারা নির্মাণ করে। শুরুতে এই কারখানা থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন হতো।পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে এ্যামোনিয়াম সালফেট প্ল্যান্টটি স্থাপন করা হয়েছিল। এ ফ্যাক্টরীর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১ লক্ষ ৬ হাজার মেট্রিক টন।
দেশের সারের চাহিদা পূরণে একসময় এই কারখানাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও দিন দিন যন্ত্রপাতি পুরনো হয়ে যাওয়ায় ও প্রযুক্তির দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়ায় কমতে থাকে উৎপাদন। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা সারকারখানাটি সংস্কার করে পুনরায় চালু না করে বিলুপ্ত ঘোষণা ও বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
এই কারখানা বন্ধ করে একই এলাকায় শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি নামে আরেকটি কারখানা নির্মাণ করা হয়। এ অবস্থায় পুরোনো কারখানাটির মালপত্র বিক্রির জন্য প্রথম লটে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর দরপত্র আহ্বান করে শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি।
গত ১৪ অক্টোবর ২০২০ দুপুরে দরপত্র খোলা হয়। এতে অংশ নেন ৯টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ১০৩ কোটি ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হন সিলেটের ‘মেসার্স আতাউল্লাহ’ নামক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে টাকা জমা দিতে পারেনি এই প্রতিষ্ঠান। ফলে ২য় বার দরপত্র আহ্বান করা হয়।
প্রথমবার দরপত্র আহবান,গ্রহণ ও নির্বাচন এবং মালপত্র বিক্রির আদেশ না দিতে উচ্চ আদালতে রিট ইত্যাদি নিয়ে কয়েক মাস টানাপোড়েন অবশেষে পুনঃদরপত্র আহ্বান করার পর রহস্যজনকভাবে ফের স্থগিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িদের মধ্যে আদৌ শিল্প মন্ত্রাণালয় এনজিএফএল এর স্ক্র্যাপ মালামালগুলো বিক্রি করতে আগ্রহী কীনা তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
বিএনএনিউজ,ওয়াই এইচ