বিএনএ ডেস্ক: ৫০-৬০ বছরও সিলেট শহরের যেসব এলাকায় পানি ওঠেনি এখন সেখানে হাঁটু থেকে কোমর পানি। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে বন্যার পানি ঢুকেনি এমন জায়গা এখন সিলেটে খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
এছাড়া সারাদিন বিদ্যুৎ না থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে। মোবাইলসহ যোগাযোগের যে মাধ্যম আছে সেগুলোর চার্জ শেষ হয়ে গেছে অনেকের। আত্মীয়-স্বজন কে কোথায় কেমন আছেন সে খবর ও নিতে পারছেন না অনেকে।
তার চেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় উদ্ধার কাজেও বিঘ্ন ঘটছে। পাশ দিয়ে কোন নৌকা বা কেউ গেলে তাকে ডেকে উদ্ধার হওয়া ছাড়া আর তেমন কোন উপায় বানভাসী মানুষদের হাতে নেই। সন্ধ্যা পেরিয়ে ধীরে ধীরে রাত বাড়তে থাকলে বানভাসী মানুষগুলো একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন।
শনিবার (১৮ জুন) সকাল ৯টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরের উঁচু এলাকাও পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরীর মদীনা মার্কেট, বাগবাড়ি, সুবিদবাজার, কলাপাড়া, আম্বরখানা, চৌহাট্টাসহ অনেক উঁচু এলাকাও এখন পানির নিচে। ঢল আর বৃষ্টির পানি প্রবল বেগে বাসা বাড়িতে প্রবেশ করায় আতঙ্কিত বাসিন্দারা।
নগরবাসী জানান, সকাল থেকে টানা ভারি বৃষ্টিতে উঁচু এলাকায় পানি জমে গেছে। ঢলের পানি প্রবল বেগে প্রবেশ করায় এখন তারা কি করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। আগে কখনও এত পানি দেখেননি উল্লেখ করে নগরবাসী জানান, সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে নগরের ড্রেন-রাস্তা উপচে পানি প্রবেশ করছে ঘরবাড়িতে।
সিলেটের ৩৬ টি আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে বেশকয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্র। সেখান থেকেও তাদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্রসহ প্রতিটি বাড়িতে এখন ও সুপেয় পানির সংকট প্রকট। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে ছোট ছোট শিশুরা। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে বানভাসী মানুষদের জন্য। এছাড়া পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলো চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে সেনাবাহিনী ও বিদ্যুতের কর্মকর্তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলো চালু করা না গেলে পুরো সিলেট অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়বে।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল এক ১০৮.৭ মিলিমিটার। আজ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সেখানে বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ১৫৭ মিলিমিটার। এর মধ্যে সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ছিল ৪৭ মিলিমিটার এবং সকাল ৯টা থেকে দুুপুর ১২টা পর্যন্ত ছিল ১১০ মিলিমিটার। আবহাওয়া অফিস জানায়, আজ আরও বৃষ্টি হবে এবং এই অবস্থা আরও ২-৩ দিন অব্যাহত থাকবে।
এদিকে টানা বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলের কারণে বিমানের পর এবার বন্ধ হয়ে গেছে ট্রেন চলাচল। সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছাড়ছে না কোনো ট্রেন। সিলেট স্টেশনেও যাবে না কোনো ট্রেন।
শনিবার দুপুর সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার নুরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। বলেন বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির পর ট্রেন চলাচলের উপযোগী হলে পুনরায় চালু করা হবে।
ওসমানী মেডিকেলে সেবা বিঘ্নিত
শনিবার দুপুরের দিকে সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতালের নিচতলার ওয়ার্ডগুলোতে পানি ভরে যায়। এছাড়া হাসপাতালের বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় অস্ত্রোপচার বিভাগ ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) চিকিৎসা সেবায় বিঘ্ন ঘটেছে।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া জানান, হাসপাতালের জেনারেটরে পানি ঢোকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ একাবারে বন্ধ হয় যায়। তিনি বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের বিশেষ জেনারেটরটি হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সেটা চালু করা গেলে অন্তত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র ও অস্ত্রোপচার বিভাগটি সচল রাখা যাবে।
মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া জানান, শনিবার সকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ১ হাজার ৭৬০ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এখন সেটি আরও বাড়তে পারে। তবে হাসপাতালে পানি ঢোকায় কয়েকজন রোগী চলে গেছেন।
বিএনএ/ এ আর,জিএন