বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ(১২তম) জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী হালচাল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। আজ(১৮ মার্চ ২০২৩) থাকছে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের হালচাল।
ঠাকুরগাঁও -৩ সংসদীয় আসন
ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা এবং রানীশংকাইল উপজেলার রানীশংকাইল পৌরসভা ,নেকমরদ, হোসেনগাঁও, লেহেম্বা , বাচোর, রাতোর ও নন্দুয়ার ইউনিয়ন নিয়ে ঠাকুরগাঁও -৩ সংসদীয় আসন গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৫ নম্বর আসন।
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি বগুড়া-৫ নামে পরিচিত ছিল। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৩ হাজার ৪ শত ৩৯ জন। এর মধ্যে ৬০ হাজার ৫ শত ৪৭ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবেদ আলী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫০ হাজার ৪ শত ২৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ন্যাপ মোজাফফর এর আমিনুর রহমান। কুড়েঁঘর প্রতীকে তিনি পান ৮ হাজার ৭ শত ৭১ ভোট।
দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি দিনাজপুর -৫ নামে পরিচিত ছিল। নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৭৪ জন। ভোট প্রদান করেন ৭০ হাজার ১ শত ২৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ শওকত আলী উকিল বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৯ হাজার ৩ শত ৬৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আনোয়ারুল হক চৌধুরী। তার প্রাপ্ত ভোট ২৬ হাজার ৬শত ১৭ ভোট।
তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
১৯৮৬ সালের ৭ অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৯১ হাজার ৯ শত ৫ জন।ওয়ার্কাস পার্টির শহীদ উল্লাহ বিজয়ী হন। হাতুড়ি প্রতীকে তিনি পান ৫৫ হাজার ৩ শত ৩৯ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ হাফিজ উদ্দিন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৩৪ হাজার ৭ শত ১৫ ভোট। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে।
চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন জয়ী হন। এই নির্বাচন আওয়ামীলীগ, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দল গুলো বর্জন করে।
৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭২ হাজার ২ শত ৬ জন। এর মধ্য পুরুষ ৮৯ হাজার ৬ শত ৭০ জন। নারী ৮২ হাজার ৫শত ৯৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোখলেসুর রহমান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫০ হাজার ২ শত ২১ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৩৮ হাজার ৫ শত ৩৮ ভোট।
সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই সংসদীয় আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮ শত ৭৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইমদাদুল হক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৫ হাজার ৯ শত ৫৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির ইকরামুল হক। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৫২ হাজার ৩ শত ৪২ ভোট।
৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪ হাজার ২ শত ৪৬ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৮৯ হাজার ৪ শত ৬৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের ইমদাদুল হক। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৮ হাজার ৯ শত ৫৮ ভোট।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ৬ শত ১২ জন। মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬০ হাজার ১ শত ৭ ভোট। তার নিকটমত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ৪ দলীয় ঐক্যজোটের মনোনীত বিএনপির জাহিদুর রহমান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৬ হাজার ৫শত ৪৫ ভোট।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬৪ হাজার ৮ শত ৭৪ জন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত ওয়ার্কাস পার্টির ইয়াসীন আলী বিজয়ী হন। হাতুড়ি প্রতীকে তিনি পান ৬২ হাজার ১ শত ১৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৩৭ হাজার ৬ শত ৭৩ ভোট। বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত ২০ দলীয় ঐক্যজোট এ নির্বাচন বর্জন করে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ভোটার ছিল ৩ লাখ ১ শত ৬৬ জন। নির্বাচনে বিএনপির জাহিদুর রহমান বিজয়ী হন। তিনি পান ৮৮ হাজার ৫ শত ১০ ভোট। মহাজোট সমর্থিত ওয়ার্কাস পার্টির ইয়াসীন আলী নৌকা প্রতীকে পান ৩৮ হাজার ৬২ ভোট। বিএনপি সারাদেশের নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখান করলেও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল সংসদ সদস্য হিসেবে শপথগ্রহণ করেন জাহিদুর রহমান। ২৭ এপ্রিল বিএনপি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে। পরবর্তীতে একই বছরের ৮ আগস্ট তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। ২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমানসহ বিএনপির ৭ জন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেন।
১ ফেব্রুয়ারি উপ-নির্বাচন
শূণ্য আসনে ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। জৌলুশ বিহীন এই উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছায়া সমর্থিত জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দীন বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৯৪ হাজার ৪৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গোপাল চন্দ্র রায়। একতারা প্রতীকে তিনি পান ৫০ হাজার ৩ শত ৯ ভোট।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রথম ও দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ঠাকুরগাঁও -৩ আসনে বিজয়ী হয়। তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয় ওয়ার্কাস পার্টি এবং চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী বিজয়ী হয়।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হয় পঞ্চম ও সপ্তম সংসদ নির্বাচনে । অষ্টম ও নবম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয় জাতীয় পার্টির প্রার্থী । দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে বিজয়ী হয় ওয়ার্কাস পার্টির প্রার্থী। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ওয়ার্কাস পার্টির প্রার্থী নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপি প্রার্থীর কাছে বিপুল ভোটে হেরে যান।
দ্বাদশ(১২তম) জাতীয় সংসদ নির্বাচন
ঠাকুরগাঁও-৩ সংসদীয় আসনটিতে প্রথম, দ্বিতীয়, পঞ্চম ও সপ্তম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলেও জাতীয় রাজনীতির কৌশলগত কারণে জাতীয় পার্টি এবং ওয়ার্কাস পার্টিকে সমর্থন দেয়। দ্বাদশ(১২তম) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কী কৌশল নেয় তার ওপর নির্ভর করছে ঠাকুরগাঁও – ৩ সংসদীয় আসনে কে হবেন পরবর্তী জনপ্রতিনিধি।
বিএনএনিউজ২৪/ এসজিএন, ওয়াইএইচ
প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন। অন্যদের জানার সুযোগ দিন। লাইক ও সাবস্ক্রাইব করে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর সঙ্গে থাকুন।