26 C
আবহাওয়া
৭:১৫ অপরাহ্ণ - জানুয়ারি ১৮, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » ফরহাদ মজহার সমন্বয়কদের ‘গুরু?

ফরহাদ মজহার সমন্বয়কদের ‘গুরু?


বিএনএ,ডেস্ক :  বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের রাজনৈতিক গুরু কী ফরহাদ মজহার? কেন তিনি জুলাই আন্দোলনের সাড়ে ৫মাস পর অন্তর্বর্তী সরকারকে সেনাসমর্থিত উপদেষ্টা সরকার আখ্যায়িত করে বেআইনি ও অবৈধ বলে ঘোষণা করলেন?

YouTube player

গত ১৫ জানুয়ারি লেখক, কবি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড পেজে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, ঘোষণাপত্র বা Proclamation জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছেই ফিরিয়ে দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক এবং আইনি অনুষ্ঠান। গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের অনুপস্থিতিতে সেনাসমর্থিত উপদেষ্টা সরকার বেআইনি ও অবৈধ।

ওই পোস্টে তিনি আরও বলেন, শুরু থেকেই আমি কয়েকটি স্পষ্ট কথা বলে এসেছি। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে একটি সেনা সমর্থিত উপদেষ্টা সরকার গঠন করা হয়েছে, অথচ এ ধরনের সরকারের কোনো সাংবিধানিক বা আইনি ভিত্তি নাই। অর্থাৎ জনগণের অভিপ্রায়ের বিপরীতে একটা অবৈধ সরকার জবরদস্তি কায়েম রাখা হয়েছে। আইন কিংবা রাজনৈতিক প্রক্রিয়া উভয় দিক থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফলে এ ধরনের, সেনা সমর্থিত, উপদেষ্টা সরকার গঠন, সম্পূর্ণ অবৈধ, অযৌক্তিক এবং কাণ্ডজ্ঞান বিবর্জিত সিদ্ধান্ত।

সতেরো কোটির অধিক জনগণ অধ্যুষিত বাংলাদেশের জন্য, এটা ভয়ানক দায়িত্বহীন ও বিপজ্জনক। ইতোমধ্যেই বৈরী ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় এই অবৈধ সরকার প্রকট বিপদ তৈরি করে রেখেছে। সীমান্তে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাপট ও দম্ভ তার প্রমাণ।

এই কবি, লেখক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, আফসোস, গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রছাত্রী তরুণদের দাবি মানা হচ্ছে না। যা গভীর রাজনৈতিক সংকট তৈরি করে রেখেছে। এই সংকট এড়িয়ে যাবার কোন উপায় নাই।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির ‘Proclamation of July Revolutions’ খসড়ায়- ১৯৭২ সালের সংবিধান সংশোধন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়েছে। এই ঘোষণাপত্র গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।

খসড়ায় বলা হয়, ‘…আমরা, ছাত্র-জনতা সেই অভিপ্রায়বলে আত্মমর্যাদা, সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের যে আদর্শে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে, সেই আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য সার্বভৌম জনগোষ্ঠী হিসেবে নিজেদের সংগঠিত করিলাম। আমরা, প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ ভেঙে দেওয়ার আহবান জানাচ্ছি এবং ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও অখণ্ডতা রক্ষার্থে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আহ্বান জানালাম। আমরা সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি রোধ নিশ্চিত করার জন্য, অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করবে, —এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করলাম।’

খসড়ায় আরও বলা হয়, ‘আমরা ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারকে লালন করার দলিল ১৯৭২ সালের সংবিধান সংশোধন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করিলাম। আমরা জুলাই গণ–অভ্যুত্থানকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংগঠিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুটপাটের অপরাধগুলোর উপযুক্ত বিচার করা হবে, এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করিলাম।’

ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, ‘আমরা এই ঘোষণা প্রদান করলাম যে ১৯৭২ এবং ১/১১ কালের রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পরিবর্তন ঘটানোর জন্য আমাদের একটি নতুন জনতন্ত্র প্রয়োজন, যা রাষ্ট্রে সকল ধরনের নিপীড়ন, শোষণ ও বৈষম্যর অবসান ঘটাবে এবং এ দেশের তরুণসমাজের প্রত্যাশাকে ধারণ করতে পারবে। আমরা এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করলাম যে এই ঘোষণাপত্রকে উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে।’

প্রসঙ্গত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি গত বছরের ৩১শে ডিসেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করতে চেয়েছিল। এ ঘোষণাপত্র নিয়ে তখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা তৈরি হয়। হঠাৎ ঘোষণাপত্রের বিষয়টি কেন সামনে আনা হলো, এর প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং, তখন, এ উদ্যোগের সঙ্গে সরকার সম্পৃক্ত নয় বলে উল্লেখ করেছিল।

অবশ্য পরে ৩০শে ডিসেম্বর রাতে জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ওই রাতে বৈঠক করে ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ দেওয়ার বদলে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।

ওই কর্মসূচি থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ই জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এর একদিন পর ১৬শে জানুয়ারি এই ঘোষণাপত্র চুড়ান্ত করতে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু প্রস্তাবিত ঘোষণাপত্রে বাহাত্তরের সংবিধান বাতিলের মতো স্পর্শকাতর বিষয় থাকায়—আপত্তি জানায় বিএনপি। ফলে কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। সেই সঙ্গে একটি ডেড ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। ‘Proclamation of July Revolution’ ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ‘Proclamation of July Revolution’ ঘোষণার আলটিমেটাম দিয়েও তা আদায় করতে না পারার মাধ্যমে, সমন্বয়কদের দ্বিতীয় দফা রাজনৈতিক পরাজয় হয়েছে। এর আগে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের আলটিমেটাম দিয়েছিল জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়করা। কিন্তু বিএনপি তাদের সমর্থন দেয়নি, বরং বিরোধীতা করে। ফলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি।

সৈয়দ সাকিব

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ