ঢাকা,১৭ জানুয়ারি ২০২৫: হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) একটি ‘আরএনএ’ ভাইরাস, যা সাধারণত মানুষের শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এটি কোনো নতুন ভাইরাস নয় এবং অন্যান্য ফ্লু ভাইরাসের (যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা রেসপিরেটরি সিনসাইশিয়াল ভাইরাস) মতোই। সাধারণত শীত ও বসন্তকালে এ ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। আক্রান্তদের মধ্যে সাধারণ ফ্লুর মতো উপসর্গ প্রকাশ পায়, যা ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই সেরে যায়। তবে বয়স্ক, ক্যানসার আক্রান্ত, বা একাধিক রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ ভাইরাস গুরুতর সমস্যার কারণ হতে পারে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শাহিনুল আলম বলেন, হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) নিয়ে অনেকে ভয় পান। মনে করেন, কোভিড চলে এসেছে কি না! কিন্তু ভাইরাসটি আগে থেকেই দেশে ছিল, এখনো আছে। কিছুটা হয়তো বেড়েছে। এর ভয়াবহতা ও মৃত্যুহার করোনাভাইরাসের চেয়ে কম। তাই আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ভাইরাসটি শনাক্তকরণের পরীক্ষা ও আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউর সব রকমের প্রস্তুতি রয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত বিএসএমএমইউ উপাচার্য আরও বলেন,যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের সিজনাল ভ্যাকসিন বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে।
বিএসএমএমইউ ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত সাংবাদিকদের বলেন, এইচএমপিভি ভাইরাসটি সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি ও কাশির ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়। তাই কিছু নিয়ম মেনে চললে সহজে এর বিস্তার রোধ করা সম্ভব। যেমন: বাইরে গেলে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা, সাবান, পানি দিয়ে ঘনঘন হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় টিসু দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা, টিসু না থাকলে হাতের কনুই ভাঁজ করে সেখানে মুখ গুঁজে হাঁচি-কাশি দেওয়া। আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা এবং জনসমাগম বা ভিড় এড়িয়ে চলা।
দেশে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) আক্রান্ত নারী নিউমোনিয়া ছাড়াও মাল্টি অর্গান ফেইলরের (একাধিক অঙ্গের নিষ্ক্রিয়তা) কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
এইচএমপিভি ভাইরাসে সানজিদা আক্তার (৩০) নামে এক নারীর মৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী বলেন, ‘সাধারণ স্বাস্থ্যবিধির পাশাপাশি কিছু নিয়ম মেনে চললে এ ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। সানজিদা নামের যে রোগী মারা গেছেন, তিনি এক মাসের বেশি সময় আগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই সময় তিনি বাসার কাছে স্বীকৃত চিকিৎসক নন, এমন ব্যক্তিদের কাছে চিকিৎসা নিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘পরে তার অবস্থার অবনতি হলে তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে আসেন। সেখানে ওই নারীকে অ্যান্টিবায়োটিক ও অক্সিজেন দেওয়া হয়। এর চার দিন পর অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে ঢাকার আরেকটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তখন পরীক্ষায় তার এইচএমপিভি পজিটিভ পাওয়া যায়।’
এখন পর্যন্ত এইচএমপিভি ভাইরাসের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়নি। তবে, এটি অন্যান্য সাধারণ সর্দিজ্বরের মতোই, যার জন্য আলাদা কোনো বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা গ্রহণ করলেই আক্রান্ত ব্যক্তিরা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন।
উদাহরণস্বরূপ, জ্বর হলে প্যারাসিটামল সেবন করতে হয়, আর সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ কার্যকর। এছাড়াও রোগীর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার, যেমন পানি ও ফলের রস, এবং পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বিএনএ,এসজিএন