বিএনএ, ঢাকা : রাজধানীর চকবাজার এলাকা থেকে আমদানি নিষিদ্ধ ভেজাল কসমেটিক্স পণ্যসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) চকবাজার থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মোস্তাক আহম্মেদ (৫০), রায়হান (২৮), মোরসালিন (২৯) ও আরাফাত হোসেন (২২)।
এদিকে পুরান ঢাকার লালবাগের হায়দার বক্স লেনের একটি বাড়িতে অবস্থিত একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদ নাসের এবং আনোয়ার শেখ নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
চকবাজার মডেল থানার ওসি মওদুত হাওলাদার জানান, গোপন তথ্যে জানা যায়, চকবাজারের মকিম কাটারার রহমান মার্কেটের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আমদানি নিষিদ্ধ ভেজাল পণ্য বাজারজাত করার জন্য অবস্থান করছে। ওই সংবাদের ভিত্তিতে রোববার সন্ধ্যায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় প্রায় ১২ লাখ টাকার আমদানি নিষিদ্ধ ভেজাল কসমেটিক্স সামগ্রী জব্দ করা হয়েছে। এসব ভেজাল কসমেটিক্স পাকিস্তান থেকে আনা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে সোমবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে লালবাগের হায়দার বক্স লেনের একটি বাড়িতে অবৈধভাবে চলা বিপাশা কসমেটিকস এন্টারপ্রাইজ নামক একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়েছেন র্যাবের ভ্র্যাম্যমান আদালত। অভিযানে নেতৃত্ব দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। এ সময় বিএসটিআইয়ের একজন ফিল্ড অফিসার উপস্থিত ছিলেন।
র্যাব জানায়, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিএসটিআই থেকে লাইসেন্স না নিয়ে অবৈধভাবে লোগো ব্যবহার করে নকল পণ্য বাজারজাত করছিলো প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া অভিযানকালে কারখানায় শিশু শ্রমিকদের দিয়ে পণ্য তৈরির কাজ করতেও দেখতে পেয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে কোনও ধরনের সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার না করে সম্পূর্ণ অনিরাপদ উপায়ে পণ্য তৈরি করা হতো বলে তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে র্যাব।
অভিযান শেষে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদনবিহীন ও বিভিন্ন অনিরাপদ কেমিক্যাল ব্যবহার করে ত্বক ফর্সাকারী নানা ধরনের ক্রিম তৈরি করছিলো। অভিযানকালে দেখা যায়, লোকাল বাজারের কাঁচামাল ব্যবহার করে এসব পণ্য উৎপাদন করছে। ব্যবহৃত কাঁচামালের গায়ে লেখা বি-৩। কিন্তু এটি কোন জাতীয় কাঁচামাল তা কারখানার কারিগর ও বিএসটিআইয়ের প্রতিনিধি কেউই চিহ্নিত করতে পারেননি। একইভাবে বি-এক্স ও হলুদ রঙের আরও একটি কাঁচামালের বিষয়ে কোনও তথ্য দিতে পারেননি তারা। এগুলো প্রতিটিই লেভেলবিহীন। এভাবেই বিভিন্ন ধরনের অনুমোদনহীন কাঁচামাল ব্যবহার করে তারা স্কিন ক্রিম তৈরি করছিলো।
র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দেখাতে পারেননি মালিকপক্ষ। এমনকি কয়েক ঘণ্টা সময় দেয়ার পরেও মালিক আসেননি।
পলাশ কুমার আরও বলেন, তারা সনাতন পদ্ধতিতে পণ্য তৈরি করতো। গরম পানির সঙ্গে ভেসলিন, স্টারিক এসিড, বোরাস, এসারিক পাউডার, পালম্যাকসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশিয়ে ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম তৈরি করতো। তাদের কোনও কেমিস্ট নেই। কারখানার ভেতরে ছোট একটি ল্যাবরেটরি বানিয়ে সেখানে কিছু জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু তার ব্যবহার সম্পর্কে কিছুই জানে না কর্মচারীরা।
তিনি বলেন, পুরান ঢাকায় এমন আরও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা বিভিন্ন ধরনের নকল পণ্য তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছে। তাদের নকল পণ্য বাজারজাত করার নেটওর্য়াক খুবই শক্তিশালী। তাদের উৎপাদিত পণ্যগুলো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাশপাশি রাজধানীসহ সারাদেশের অভিজাত মার্কেটগুলোতেও বিক্রি হয়। এর ভুক্তভোগী আমাদের সমাজের প্রায় সবাই।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, অনিরাপদ উপায়ে এমন নকল পণ্য তৈরির অভিযোগে মোহাম্মদ নাসের নামে মালিকপক্ষের একজন প্রতিনিধি এবং কারখানার কারিগর আনোয়ার শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান থেকে সকল মালামাল জব্দ ও কারখানা সিলগালা করা হয়েছে। এ ঘটনায় লালবাগ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
বিএনএনউজ/এসকেকে, জেবি