33 C
আবহাওয়া
৩:১৬ অপরাহ্ণ - মে ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ‘ককবরক’ ভাষায় বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী

‘ককবরক’ ভাষায় বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী

কুবি

বিএনএ, কুমিল্লা:  ‘কক’ অর্থ ভাষা আর ‘বরক’ অর্থ মানুষ। তাই ককবরক ভাষা হলো মানুষের ভাষা। অথচ এই মানুষের ভাষাই কিনা হারিয়ে যেতে বসেছে মানুষের মুখ থেকে। পৃষ্ঠপোষকতা, পাঠ্যপুস্তকের অভাবসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ভাষায় পাঠদান না থাকায় দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ত্রিপুরা সম্প্রদায় আজ ভুলতে বসেছে তাদের মাতৃভাষা। এমন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ককবরক ভাষায় অনুবাদ করে তাক লাগিয়ে দিলেন যুবরাজ দেববর্মা।

গত এক বছরের চেষ্টায় ককবরক ভাষায় বইটি অনুবাদ করেছেন এই ত্রিপুরা যুবক। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী যুবরাজ দেববর্মার বাড়ি শ্রীমঙ্গলের ডলুছড়া ত্রিপুরাপল্লিতে। ত্রিপুরা ভাষায় বইটির নাম পাইথাকয়া লাংমা। যার অর্থ অসমাপ্ত আত্মজীবনী। পৃথিবীর ২০টি ভাষায় এ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী লেখা হয়েছে। তবে কোনো নৃগোষ্ঠীর ভাষায় এটিই প্রথম। এ নিয়ে উচ্ছ্বসিত ককবরক ভাষাভাষী শ্রীমঙ্গলের ত্রিপুরাপল্লির বাসিন্দারা।

তাদের মতে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নিজেদের মাতৃভাষা ঠিকমতো পৌঁছে দেয়া নিয়ে তারা যখন উদ্বিগ্ন আর হতাশাগ্রস্ত, ঠিক সে সময়েই ককবরক ভাষায় অনূদিত এ বইটি তাদের মধ্যে আশা জাগিয়েছে, পুরো ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠীকে গৌরবান্বিত করেছে।

এ বিষয়ে নিজের অনুভূতি জানিয়ে যুবরাজ বলেন, ‘করোনার সময় আমার মা মারা যান। তখন আমি হতাশায় ডুবে যাই। সেই হতাশা থেকে মুক্তি পেতে আমি ব্যতিক্রমী কিছু করার চেষ্টা করি। সেই লক্ষ্যে ২০২০ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি ককবরক ভাষায় বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী অনুবাদ শুরু করি। ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে তা শেষ হয়।’

তিনি আরও বলেন, নৃবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে সমাজ ও সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করতে শিখেছেন তিনি। সে হিসেবে এ কাজটি করতে পেরে তিনি নিজেও পরিতৃপ্তি লাভ করছেন। এখন তার একটিই চাওয়া, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন তার অনূদিত বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন।
শিক্ষার্থীর এমন অর্জনে উচ্ছ্বসিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও কুবি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এন এম রবিউল আউয়াল চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থী যুবরাজ ক্লাসে সব সময় একটু ব্যতিক্রমী চিন্তাভাবনা করত। তারই প্রতিফলন ঘটল ককবরক ভাষায় বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে।’

চলতি বছর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন সালমানপুর এলাকায় ত্রিপুরাপল্লির বাসিন্দাদের জন্য একটি ককবরক স্কুল নির্মাণ ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ককবরক ভাষার কিছু বই তুলে দিয়েছিলেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুভাশিস ঘোষ। যুবরাজের সফলতায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘চমৎকার একটি কাজ করেছেন যুবরাজ দেববর্মা। তার এ কাজের মধ্য দিয়ে ককবরক ভাষাটিও সমৃদ্ধ হলো। এ ভাষাভাষীর মানুষজনও তাদের মতো করে বঙ্গবন্ধুকে জানতে পারবে।’

প্রসঙ্গত, ত্রিপুরা ভারতীয় উপমহাদেশের এক প্রাচীন জাতিগোষ্ঠী। ধারণা করা হয়, ভারতের ত্রিপুরা অঞ্চল থেকে এসে এ দেশে বসতি স্থাপন করে ক্ষুদ্র এ নৃগোষ্ঠী। বাংলাদেশে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকসংখ্যা প্রায় তিন লাখ। ত্রিপুরাদের বড় একটি অংশ বাস করে পার্বত্য চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গলে। এদের অধিকাংশই তাদের মাতৃভাষা ককবরক ভুলে যাচ্ছে।

বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ