27 C
আবহাওয়া
১১:৫৭ অপরাহ্ণ - মে ৭, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২২৪ (সুনামগঞ্জ-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২২৪ (সুনামগঞ্জ-১)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে সুনামগঞ্জ-১ আসনের হালচাল।

সুনামগঞ্জ-১ আসন

সুনামগঞ্জ-১ সংসদীয় আসনটি ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলার নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২২৪ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: সিপিবির নাজির হোসেন বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৯ হাজার ৫ শত ৬২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৪ শত ৩৩ জন। নির্বাচনে সিপিবির নাজির হোসেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৪ হাজার ১ শত ১৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাসদ এর আলী আমজাদ। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩০ হাজার ১ শত ৮৭ ভোট।

সুনামগঞ্জ-১ আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে সিপিবির নাজির হোসেন ১৪ দলীয় জোট থেকে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৫ অক্টোবর ১৯৯৩ সালে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে বিএনপির নাজির হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। নির্বাচনে বিএনপির নাজির হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সৈয়দ রফিকুল হক বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৪ হাজার ৪ শত ৮২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬৪ হাজার ৪ শত ১৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সৈয়দ রফিকুল হক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৮ হাজার ৭ শত ৮৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির নাজির হোসেন । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৭ হাজার ৩ শত ১২ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির নাজির হোসেন বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৯৫ হাজার ৯ শত ৩৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২৫ হাজার ৫ শত ৭৫ জন। নির্বাচনে বিএনপির নাজির হোসেন বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৮ হাজার ৪ শত ৪৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের সুরনঞ্জিত সেন গুপ্ত । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৯৫ হাজার ৫ শত ৭৪ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৩০ হাজার ৫৫ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৬৭ হাজার ৩ শত ৯২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫১ হাজার ৮ শত ৭৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ডা: রফিক চৌধুরী । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৩ হাজার ৩ শত ৯৫ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৫০ হাজার ৯ শত ৪৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২৩ হাজার ৪ শত ৪৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৮ হাজার ৯ শত ৮১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ রফিকুল হক । ফুটবল প্রতীকে তিনি পান ৩২ হাজার ৫ শত ৮১ ভোট।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বিজয়ী হন 

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৩ শত ৫৯ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯ শত ৮ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মোয়াজ্জেম হোসেন রতন , ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির নাজির হোসেন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফখর উদ্দিন, হারিকেন প্রতীকে মুসলিম লীগের বদরুদ্দোজা সুজা ,গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির আমানউল্লাহ আমান প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৬৪ হাজার ২৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির নাজির হোসেন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৭৮ হাজার ৯ শত ১৫ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি, পঞ্চম, সপ্তম ,নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশিরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর সুনামগঞ্জ-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ-১ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪৭.৮৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৬.৯৪%, বিএনপি ১৭.৯১%,জামায়াত ইসলামী ৭.০১% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩৮.১৪% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৩.২৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪১.৮৪%, বিএনপি ৪০.৯৪%জাতীয় পার্টি ১০.১৪% জামায়াত ইসলামী ৩.৮৬% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.২২% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৬.২৩ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪২.৩৭%, ৪ দলীয় জোট ৫৬.৯৪%, জাতীয় পার্টি ০.৬৯ % ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৬.৯৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৮.১০%, ৪ দলীয় জোট ৩৫.৩৫% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৬.৫৫% ভোট পায়।

সুনামগঞ্জ-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ রফিকুল হক সোহেল, সুনামগঞ্জ-মৌলভীবাজার সংরক্ষিত আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীমা শাহরিয়ার, আওয়ামী লীগের প্রয়াত সংসদ সদস্য আবদুল হাকিম চৌধুরীর ছেলে ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল হাসান চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও সাবেক যুগ্ম সচিব বিনয় ভূষণ তালুকদার ভানু, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি রেজাউল করিম শামীম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হায়দার চৌধুরী লিটন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক ড. রফিকুল ইসলাম তালুকদার, বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেন, অধ্যাপক ডা. রফিক চৌধুরী, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও তাহিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল হক, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যারিস্টার হামিদুল হক আফিন্দি লিটন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ-১ পর্যটন সমৃদ্ধ ও খনিজ সম্পদে ভরপুর। এই আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। মাছের প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য টাঙ্গুয়ার হাওরও এই আসনের তাহিরপুরে। গত ১৫ বছর ধরে এই আসনের শাসনকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। তবে তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাই যেন বেশি। ক্যাসিনো কাণ্ড, বিদেশে অর্থপাচারের মতো অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থ আত্মসাৎ, অন্যের জায়গা জোরপূর্বক দখল, বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন।

এই আসনে গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগে বিভক্তি বিদ্যমান। অনেক নেতাকর্মী তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। পুরো আসনের ৩টি উপজেলায় রতন ও এন্ট্রি রতন নামে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ কাজ করছে। এই আসনে আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্ধী।

বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত না হলে একেবারে নড়বড়ে নয়। মাঠ পর্যায়ে সাংগঠনিক তৎপরতা দৃশ্যমান না হলে প্রচুর নিরব ভোট রয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিএনপিতে প্রতিযোগীতা থাকলে আওয়ামী লীগের মতো গ্রুপিং নেই।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২২৪ তম সংসদীয় আসন (সুনামগঞ্জ-১) আসনটিতে আওয়ামী লীগের ধারাবাহিক বিজয় অব্যাহত রাখা কঠিন হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

আরও পড়ুন : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২২৩ ( শরীয়তপুর-৩)

বিএনএ/ শাম্মী,রেহানা, এমএফ, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ