বিএনএ ডেস্ক: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ সামরিক শাসনামলে বাংলাদেশে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। এমন মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (১৭ আগস্ট) সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেল সৌজন্য সাক্ষাৎ করার সময় এ কথা বলেন তিনি। বলেন, তখন আমাদের বিচার চাইতেও বাধা দেয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তিনি এবং তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা তখন বিদেশে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধ করতে তৎকালীন সেনা সমর্থিত সরকার ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল। জোরপূর্বক নির্বাসন থেকে দেশে ফেরার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই অধ্যাদেশের কারণে তাদের বিচার চাইতে বাধা দেয়া হয়। বলেন, তৎকালীন সামরিক সরকার বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছিল।
এসময় চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল ব্যাশেল বলেন, যখন তাঁর দেশে অত্যাচারী সরকার ক্ষমতায় ছিল তখন তাঁর পরিবারকেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মতো অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। জাতিসংঘের হাইকমিশনার বলেন, তিনি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করে ‘গভীরভাবে আলোড়িত’ হয়েছেন।
বৈঠকে তাঁরা বর্তমান বিশ্ব সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিক তা মিয়ানমার অস্বীকার করে না। তবে, তারা এখনও তাদের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের প্রত্যাবাসনে সাড়া দেয়নি। বলেন, মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের তাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ কখনও কারো সঙ্গে যুদ্ধ চায় না বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই চুক্তির পর ৬২ হাজার শরণার্থী বাংলাদেশে ফিরেছে এবং ১৮শ’ সশস্ত্র ক্যাডার আত্মসমর্পণ করেছে।
ব্যাশেলে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের জন্য শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। প্রধানমন্ত্রী জবাবে বলেন, ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের জন্য তাঁরা সেই সুযোগের ব্যবস্থা করতে পারেন।
বৈষম্য দূর করার জন্য বাংলাদেশের এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতি এবং কাজের প্রশংসা করেন জাতিসংঘের প্রতিনিধি। তিনি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। উভয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়েও আলোচনা করেন তারা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা উপকূলীয় অঞ্চলে বনায়নের ওপর জোর দিয়েছেন কারণ তারা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গুয়েন লুইস উপস্থিত ছিলেন। ব্যাশেল চারদিনের সফরে গত রোববার সকালে বাংলাদেশে এসেছেন ।
বিএনএ/এ আর
