বিএনএ ডেস্ক: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে রান্নার সরঞ্জাম নিষিদ্ধ ও শিক্ষার্থীদের অকারণে শোকজ বন্ধসহ সকল দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবি মেনে নিয়ে সেখানে সই করেছে খুবি প্রশাসন।
বুধবার (১৭ আগস্ট) মধ্যরাতে শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আলোচনা পর শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়া হয়। দাবি মানার পর রাত ২ টা ৮ মিনিটে আন্দোলন সমাপ্ত ঘোষণা করে হলে ফিরে যান ছাত্রীরা।
এর আগে রাত ১১ টার দিকে অপরাজিতা হল গেটের তালা ভেঙে হলের সামনের সড়কে অবস্থান নেন ছাত্রীরা। পরে সেখানে থেকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদি চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। অপরাজিতা হলের ছাত্রীদের বিক্ষোভে একাত্মতা প্রকাশ করে যোগ দেয় বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব হল ও বিভিন্ন হলের ছেলেরা। এসময়ে দাবি মানতে স্লোগান দিতে থাকেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
পরে মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে সকল দাবি মেনে নেন।
খুবি ছাত্রীদের ১১ দফা দাবি
১. রাইস কুকার ও রান্নার সরঞ্জামাদি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া।
২. যৌন হয়রাণির প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলার কারণে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও পারিবারিক শিক্ষা তুলে কথা বলায় ক্ষমা চাওয়া।
৩. হলে প্রয়োজনে অভিভাবক ও মহিলা আত্মীয় থাকার অনুমতি দেয়া।
৪. পানির পোকা ও খাবারের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা।
৫. প্রভোস্ট তার নিজ ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের ডেকে ব্যক্তিগত এবং একাডেমিক বিষয়ে হয়রাণি বন্ধ করার পাশাপাশি ক্ষমা চাওয়া।
৬. হলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার বন্ধ করা।
৭. যেকোন পরিস্থিতিতে সিট বাতিলের হুমকী দেয়া বন্ধ করা।
৮. যেকোন পরিস্থিতিতে হলের ছাত্রীদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া।
৯. হলের মিল খাওয়া বাধ্যতামূলক না করা।
১০. আন্দোলন করায় কোন শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিগতভাবে হুমকী না দেয়া।
১১. শিক্ষার্থীদের উপরের দাবি সমূহ না মানলে প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগ করা।
![বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদি চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন খুবি শিক্ষার্থীরা](https://bnanews24.com/wp-content/uploads/2022/08/KU-1-2-726x416.jpg)
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে অপরাজিতা হলে ঘটে এক অনাকাঙ্খিত ঘটনা। টয়লেটে গিয়ে এক শিক্ষার্থী গলায় বটি চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। হল প্রশাসন এ ঘটনা জানার পর সন্ধ্যায় অপরাজিতা হলে ছাত্রীদের ব্যবহৃত দা,বটি, চাকু, ছুরি, রাইচ কুকারসহ রান্নার যাবতীয় সামগ্রী নিষিদ্ধ করে। পরে ছাত্রীদের রুমে রুমে গিয়ে এসব রান্নার সরঞ্জাম জব্দ করে হল প্রশাসন। পাশাপাশি ছাত্রীদের বাধ্যতামূলক ডাইনিংয়ের খাবার গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়। যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন ছাত্রীরা।
অপরাজিতা হলের শিক্ষার্থীরা জানান, হলের ডাইনিংয়ের খাবারের মান খুবই জঘন্য। ডায়নিংয়ের খাবার টানা খেলে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খাবারের মান আরও কমিয়ে দেয়া হয়েছে। যার ফলে হলের খাবার খেয়ে জীবনধারণ করা অনেকের জন্য কষ্টকর হয়ে গেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, অনেকের আর্থিক সংকটও আছে। একবেলা সামান্য কিছু রান্না করে সেই খাবার দিয়ে পুরো দিন চলে যায় অনেক শিক্ষার্থীর। সেখানে বাড়তি টাকা দিয়ে নিম্নমানের খাবার খাওয়া অনেকের পক্ষে কষ্টকর। হলের খাবার খেয়ে পরীক্ষার সময় অনেকে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার মত ঘটনাও ঘটে বলে জানান বিক্ষোভকারীরা।
আন্দোলনকারীরা বলেন, এই কঠিন পরিস্থির মধ্যে রাইচ কুকার নিষিদ্ধ করা হলো। রান্নার সকল জিনিসপত্র নিষিদ্ধ করা হলো। তাহলে শিক্ষার্থীরা এখন যাবে কোথায়?
শিক্ষার্থীরা বলেন, শুধু রান্নার সরঞ্জাম নিষিদ্ধ বা জব্দের বিষয় নয়। বিভিন্ন সময় হল প্রভোস্টদের বাজে আচরণ, অকারণে নোটিশ দেয়া, সেই নোটিশ অভিভাবকদের কাছে পাঠানো, কথায় কথায় ছিট বাতিলের হুমকীদেয়াসহ নানা ইস্যুতে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, কিছুদিন আগে ফেসবুকে কমেন্ট করায় এক ছাত্রীকে ৪৫ মিনিট ধরে ধমকানো ও শাসানো হয়। বিভিন্ন সমস্যার কথা হল প্রশাসকে জানালে সমাধান না করে উল্টো ছাত্রীদের ধমকান তারা।
বিএনএ/এ আর