বিএনএ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা বলেছেন, আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশ ফিরে না আসলে আজকের শান্তি গণতন্ত্র, উন্নত সমৃদ্ধ দেশ পেতাম না। বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশে স্বদেশে ফিরে আসার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা; তা ছিল যুগান্তকারী।
বুধবার (১৭ মে) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সির ( বিএনএ) এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। পোর্টল্যান্ড গ্রুপের কনফারেন্স রুমে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সির (বিএনএ) নির্বাহী সম্পাদক ইয়াসিন হীরার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সির সম্পাদক ও ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান মজুমদার।
শামীমা হারুন লুবনা বলেন, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট আসনে জয়লাভ করে। এরপর বাংলাদেশকে পিছনে ফিরতে হয়নি। বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে; যা মোটেও সহজ কাজ নয়। এসব একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে সম্ভব হচ্ছে।
তিনি বলেন, ১৯৮১ সালের ১৭ মে তার দুঃসাহসী সিদ্ধান্তের কারণেই আওয়ামী লীগ আজ দল হিসেবে অনেক বেশি শক্তিশালী। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১৫ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বাংলাদেশে এর আগে কেউ এত বছর সরকারপ্রধান হতে পারেননি। এর বাইরে ১১ বছরেরও বেশি সময় তিনি ছিলেন জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। সততা, প্রজ্ঞা, দক্ষ আর দূরদর্শী নেতৃত্বগুণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।
আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী। এসময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চৌকস দূরদৃষ্টি সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়।প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে উন্নয়ন কার্মকাণ্ড গুলো হচ্ছে তা আজ দৃশ্যমান। দেশের অর্থনীতি, নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক উন্নয়ন সবই হয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারি নানান পদক্ষেপে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনএ সম্পাদক ও ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান মজুমদার বলেন, দেশের গণতন্ত্র আর প্রগতিশীলতার রাজনীতি ফেরাতে রাতে দুই শিশুসন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছোটবোন শেখ রেহানার কাছে রেখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন তিনি। দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু কন্যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশকে উন্নয়নের মাধমে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে সংগ্রাম শুরু করেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেদিন স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন, তখন রাজনৈতিক অবস্থা অনুকুল ছিল না! কাকতালীয়ভাবে প্রকৃতিও ছিল বৈরী! তখনকার রাজনীতির মতোই প্রকৃতিও ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ আচরণ করে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে ছিল কালবৈশাখীর হাওয়া, বেগ ছিল ঘণ্টায় ৬৫ মাইল। প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি আর দুর্যোগও সেদিন গতিরোধ করতে পারেনি গণতন্ত্রকামী লাখ লাখ মানুষের মিছিল। মুষলধারার বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে তারা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন নেত্রী কখন আসবেন এই প্রতীক্ষায়। “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় বাংলার আকাশ বাতাস। জনতার কণ্ঠে বজ্রনিনাদে ঘোষিত হয়েছিল ‘পিতৃহত্যার বদলা নিতে/লক্ষ ভাই বেঁচে আছে, শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’। অবশেষে জনতার অপেক্ষা শেষ হয়। বিকেল ৪টায় কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে জনসমুদ্রের জোয়ারে এসে পৌঁছান শেখ হাসিনা। তাকে একনজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত রাস্তাগুলো রূপ নিয়েছিল জনসমুদ্রে।
মিজানুর রহমান মজুমদার বলেন, স্বদেশের মাটিতে পা রেখে লক্ষ লক্ষ জনতার উদ্দেশ্যে আপ্লুত শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, “সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই’।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সির প্রকাশক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন, পরিচালক হাদিদুর রহমান ও বিভিন্ন গণ্যমাধ্যমের সাংবাদিকগণ।
বিএনএ/এমএফ