।। শামীমা চৌধুরী শাম্মী ।।
বিএনএ, ঢাকা: ঘটনাটি ২০০০ সালের লালমনিরহাট শহরের খোচাবাড়ি এলাকার। এক শিশু, ধর্ষণের শিকার হন। ধর্ষণে জড়িত দুই আসামিকে সহযোগিতা করার অপরাধে রেখা খাতুনকে গ্রেপ্তার করা হয় ওই বছরের ৫ নভেম্বর। ২০০৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রেখা খাতুন ও দুই ধর্ষক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। ২৩ বছর সাজা ভোগের পর রেখার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩ ডিসেম্বর শেষ হয়। এরপরও জরিমানার এক লাখ টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তাকে আরও তিন বছর কারাগারে আটক থাকতে হতো। সেই হিসাবে তাকে ২০২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত লালমনিরহাট জেলা কারাগারে থাকতে হতো।
বিষয়টি জানতে পেরে রেখা খাতুনের মুক্তির জন্য এগিয়ে আসেন লালমনিরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মতিয়ার রহমান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ ও পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম স্বপন। তারা সম্মিলিতভাবে জরিমানার টাকা গত ৮ এপ্রিল ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করে দেন। এর ফলে ঈদের দুই দিন আগে ৯ এপ্রিল সকালে রেখা খাতুনকে লালমনিরহাট জেলা কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
রেখা খাতুনের বাবার বাড়ি ছিল লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের কলাখাওয়া ঘাট গ্রামে। দারিদ্র্যের কারণে ১৩-১৪ বছর বয়সে রেখা খাতুনের বিয়ে হয়। তার স্বামী কোরবান আলী তখন ৩৪ বছরের যুবক। পেশায় দিনমজুর ছিলেন কোরবান। বিয়ের পরও দুই-তিন বছর বাবার বাড়িতে তারপর ১৯৯৮ সাল থেকে স্বামীর বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। রেখা ও তার স্বামী কোরবান আলী লালমনিরহাট শহরের খোচাবাড়ি এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। সেখানে ঘটে শিশু ধর্ষণের ঘটনা।
ধর্ষণে সহযোগীতা করার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত রেখা খাতুন ও দুই ধর্ষক লালমনিরহাট শহরের নর্থ বেঙ্গল মোড় এলাকার দুলাল হোসেনের ছেলে আলমগীর হোসেন ও লালমনিরহাট শহরের কুড়াটারি গ্রামের ভোলা মিয়ার ছেলে ফরিদ হোসেনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। রায় ঘোষণার সময় ফরিদ হোসেন পলাতক ছিলেন। পরে গ্রেপ্তার হন। ওই দুই আসামি চার-পাঁচ বছর জেল খেটে উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভ করেন। এর মধ্যে আলমগীর হোসেন দাম্পত্য কলহের জের ধরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ফরিদ হোসেন বাবুর্চির কাজ করেন লালমনিরহাট শহরের একটি হোটেলে।
কারাগার থেকে বের হয়ে রেখা খাতুন জানতে পারেন বাবা, মা, দুই বোন, এক ভাইয়ের কেউই আর বেঁচে নেই। গত ২৩ বছরে তার ২৫ স্বজনের মৃত্যু হয়েছে। শুধু তাই নয়, স্বামী কোরবান আলী দ্বিতীয় বিয়ে করে নিরুদ্দেশ, বাবার ভিটেমাটিও বিলীন হয়েছে ধরলা নদীর গর্ভে। স্বামীর অবর্তমানে বাবার বাড়িতে জীবনের বাকি দিনগুলোতে আশ্রয় নেওয়ার স্বপ্নটাও ভেঙে গেছে। কারামুক্তির পর রেখার বয়স হয়েছে ৪৪ বছর। ছোট বোন টুম্পার শ্বশুরবাড়িতেই এখন রেখার ঠাঁয় হয়েছে।
বিএনএনিউজ/ বিএম/এইচমুন্নী