20 C
আবহাওয়া
৬:১৪ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস


বিএনএ,ঢাকা: আজ ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য এক দিন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এদিনে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। পরে এই বৈদ্যনাথতলাকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়।

এর আগে একই বছরের ১০ এপ্রিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথতলায় এই সরকার শপথ গ্রহন করে। পরের দিন ১১ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ দেশবাসীর উদ্দেশে বেতার ভাষণ দেন, যা আকাশবাণী থেকে একাধিকবার প্রচারিত হয়। এ ভাষণে তিনি দেশব্যাপী পরিচালিত প্রতিরোধ যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন। এছাড়াও ১৭ এপ্রিল মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের তারিখ নির্ধারিত হয়। তাজউদ্দিনের ভাষণের মধ্য দিয়েই দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারেন বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনার লক্ষ্যে একটি আইনানুগ সরকার গঠিত হয়েছে। এরই পথপরিক্রমায় ১৭ এপ্রিল সকালে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এর আগে ১০ এপ্রিল মুজিবনগরে গঠিত হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার। ১৭ এপ্রিলে মুজিবনগর সরকার শপথ নেয়। মুজিবনগর সরকারের অধীনেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়।

বাঙালির ওপর চেপে বসা পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ অতিক্রমায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। এর আগে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। এর পর ২৫ মার্চ কাল রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অতর্কিতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায়। এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেই ওয়ারলেসের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার ঘোষণার পরই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। এই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করা হয়।

এর পর ১৭ এপ্রিল শপথ নেওয়া মুজিবনগর সরকারের ঘোষণাপত্রে দেশের সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে প্রজাতন্ত্রের উপ-রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

এই সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তাজউদ্দিন আহমদ। এছাড়া খন্দকার মোশতাক আহমেদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মনসুর আলী অর্থমন্ত্রী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী নিযুক্ত হন। এই সরকারের উপদেষ্টা হন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, কমরেড মণি সিংহ, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ।

জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার এবং মেজর জেনারেল আবদুর রব চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথগ্রহণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তার নির্দেশিত পথ অনুযায়ী মুজিবনগর সরকার সফলভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে বিজয় ছিনিয়ে আনে। সদ্য জন্ম নেওয়া রাষ্ট্রের নবগঠিত সরকারের এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জনগণকে তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী কার্যক্রমের মাধ্যমে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা লাভের লক্ষে অদম্য স্পৃহায় মরণপণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত সৃষ্টি ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার পরিচালনায় নবগঠিত এই সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এই সরকারের যোগ্য নেতৃত্ব ও দিক-নির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধ দ্রুততম সময়ে সফল সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। এই সরকার গঠনের ফলে বিশ্ববাসী স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামরত বাঙালিদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন।

দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ চলতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়। বাংলাদেশ দখলদার মুক্ত হয় এবং বিশ্বের বুকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে চলমান লকডাউন পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে নানা কর্মসূচি নিয়েছে সরকার।

শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার মেহেরপুরের মুজিবনগরের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্রে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসটির সূচনা হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল সাড়ে ৯টায় মুজিবনগরের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্রে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।

এদিন সকাল ১০টায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।

এদিন বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ভার্চুয়ালি আলোচনা সভার আয়োজন করবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এমন কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের শিক্ষা ও চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বাঙালি জাতিকে অনুপ্রেরণা ও শক্তি জোগাবে।

তিনি মুজিবনগর দিবসের শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়তে সবাইকে নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার আহ্বান জানান।

বিএনএনিউজ/মনির

Loading


শিরোনাম বিএনএ