।। বাবর মুনাফ ।।
বাংলাদেশে এখন মোট নিবন্ধনকৃত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৯টি। তবে এই তালিকায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ৬ মাসে ৫টি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে। সর্বশেষ নিবন্ধন পাওয়া দলটির নাম বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি। জামায়াতে ইসলামীর ছায়ায় গঠিত এই দলটির দলীয় প্রতীক ফুলকপি। এরই মধ্যে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে নতুন এই রাজনৈতিক দলটি ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে আত্মপ্রকাশ করবে এটা প্রায় নিশ্চিত। একই সঙ্গে আত্মপ্রকাশ করবে দলটির নতুন ছাত্র সংগঠনও।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম রোববার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ক্ষমতার চেয়ার ছেড়ে জনতার চেয়ারে বসবেন।
তবে নতুন দলের দ্বিতীয় শীর্ষ পদ সদস্যসচিব কে হচ্ছেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সারির সমন্বয়কদের সবাই এই পদের প্রার্থী। তবে এই দলটি তিন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। বাম সংগঠন, ইসলামী ছাত্র শিবির এবং ছাত্র পরিষদ ও ছাত্র শক্তি থেকে আসা এই তিন ধারার সমন্বয়করা নিজেদের মধ্যে লবিং গ্রুপিং চালিয়ে যাচ্ছেন। ছাত্র পরিষদ ও ছাত্রশক্তির অংশটি সমর্থন দিয়েছে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির বর্তমান সদস্য সচিব আখতার হোসেনকে।
ইসলামী ছাত্র শিবির থেকে আসা গ্রুপটি চায় জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদকে। তিনি ইসলামী ছাত্র শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি।

বাম ভাবধারার গ্রুপটি চায় জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারীকে। এর বাইরে ছাত্রলীগ থেকে আসা গ্রুপটি সদস্য সচিব পদে চায় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমকে। তবে জুলাই শহীদ ফাউন্ডেশন থেকে পদত্যাগ করায় অনেকে তার সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সেকারণে তাকে নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটিতে বিভক্তি রয়েছে।
এছাড়া উপদেষ্টা মাহফুজ আলম চায় তার বড় ভাই মাহবুব আলমকে। যিনি ছাত্রদলের সাবেক নেতা ছিলেন। এদিকে রোববার নাগরিক কমিটির সাধারণ সভা বয়কট করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ অনুসারীরা।
নতুন রাজনৈতিক দলের পদ পদবি নিয়ে দলাদলি ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সমন্বয়ক, কর্মী- সমর্থকদের মধ্যে। চলছে উত্তেজনা। পক্ষে-বিপক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের কথা তুলে ধরেছেন। বিভক্তির কথা উঠে এসেছে সমন্বয়ক সারজিস আলমের কন্ঠে। তিনি ফ্যাসিবাদ হঠাতে দলাদলি বাদ দিয়ে ঐক্যের ওপর জোর দেন।
প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ইচ্ছা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ছাত্রদের এই রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশকে বিএনপিসহ সব দল স্বাগত জানিয়েছে। তবে জামায়াত ইসলামী ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলো নতুন দলকে কিংস পার্টির তকমা দিয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা ছেড়ে কথা বলছেন না। তারাও পাল্টা জবাব দিয়ে বলেছে, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিও কিংস পার্টি। তাদের জন্ম হয়েছে সেনা ছাউনিতে। কেমন হবে নতুন ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন নতুন কিংস পার্টি? এই নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ তোলপাড় চলছে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশটিতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি হয়েছে। কোনোটি টিকে আছে, কোনোটি হারিয়ে গেছে। এই দলগুলোর কোনোটি ডান, কোনোটি বামপন্থি আদর্শের। কোনো দল জাতীয়তাবাদকে প্রাধান্য দেয়, আবার কোনোটি ধর্মনিরপেক্ষ কিংবা ধর্মভিত্তিক আদর্শকে সামনে রেখে এগিয়েছে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাঙালি কিংবা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনীতি যেমন আছে, তেমনি ধর্মনিরপেক্ষ কিংবা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলও আছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, আমরা বাম-ডান এমন যে বিভাজন আছে সেগুলোতে ঢুকতে চাই না। আমরা বাংলাদেশ প্রশ্নে এক থাকতে চাই। ইসলাম ফোবিয়ার রাজনীতি অথবা উগ্র ইসলামপন্থি বা উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির মধ্যেও আমরা নেই।” বলেন আখতার হোসেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেছেন “আমরা ডানের দিকেও ঝুঁকবো না, বামের দিকেও ঝুঁকবো না। সাম্য, ন্যায়বিচার, সুশাসনকে ঘিরে আমরা হবো একটা মধ্যপন্থী দল যেন আমরা সব ধরনের মানুষকে ধারণ করতে পারি।” বলেন জুনায়েদ।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিনের অভিমত নতুন দলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে শুধু বাংলাদেশ, এই দেশের মানুষের অধিকার এবং রাষ্ট্র গঠনের কাজ। এখানে যে কোনো ধর্মের মানুষ, যে কোনো মতের মানুষ, যে কোনো আদর্শের মানুষ তার নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে।”
ছাত্র সমন্বয়কদের নজর কেড়েছে তুরস্কের রিচেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের একে পার্টি, পাকিস্তানের ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ এবং ভারতের অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নতুন দল গঠনের সঙ্গে জড়িত জনৈক সমন্বয়ক বলেছেন, নতুন রাজনৈতিক দলটি হবে তুরস্কের রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান এর জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পাকিস্তানের ইমরান খানের ‘পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ–পিটিআই, ভারতের অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ‘আম আদমি পার্টি’র আর্দশ অনুসরণে। গঠনতন্ত্রে হবে ধর্ম নিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, সাম্য ও ইনসাফের মিশেল। এই পার্টিগুলো আসলে কীভাবে জনগণের কাছে গিয়েছে, জনগণের ভাষা বোঝার ক্ষেত্রে তারা কোন ধরনের কৌশল নিয়েছে, তাদের গঠনতান্ত্রিক কাঠামোটা কেমন -এসব বিষয় নিয়ে চলছে গবেষণা।
বিএনএ নিউজ টুয়েন্টিফোর/ সাকিব