বিএনএ, চট্টগ্রাম: শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা ২৪ সাবেক এমপির গাড়ি বিক্রির নিলাম দরপত্র খোলা হচ্ছে আজ। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম শাখায় গাড়িগুলোর প্রকাশ্য নিলামে দরপত্র যাচাই করা হবে। গত জানুয়ারিতে সাবেক এমপিদের ব্র্যান্ড নিউ ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত ১৭ জানুয়ারি (রোববার) দুপুর ২টা পর্যন্ত নিলাম দরপত্র জমা নেওয়া হয়। কাস্টমসের শেডে গত ২ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি গাড়িগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করার সুযোগ দেওয়া হয় ক্রেতাদের। ক্রেতাদের অনেকে নিলাম শেডে রাখা গাড়িগুলো ঘুরে দেখেন। তবে কাস্টমস নিলাম ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রথম নিলামে দাম বেশি রাখায় প্রত্যাশিত ক্রেতা নাও মিলতে পারে। তা ছাড়া শুল্ক হার যুক্ত করা প্রতিটি গাড়ির দাম প্রায় ১০ কোটি টাকা। এত দামে ক্রেতারা গাড়ি কিনতে আগ্রহী নন। দামের ক্ষেত্রে ছাড় না দেওয়া হলে নিলামে গাড়ি বিক্রির উদ্যোগ দীর্ঘায়িত হতে পারে।
গাড়িগুলো নিলাম প্রক্রিয়ায় যুক্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার সাকিব হোসেন বলেন, আজ বিকালে গাড়ির নিলামের জন্য জমা নেওয়া দরপত্র খোলা হবে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের পাশাপাশি ঢাকার এক ভ্যাট কমিশনারের কার্যালয়ে টেন্ডার বাক্স রাখা হয়েছে। দুটি বাক্সে জমা দেওয়া দরপত্র সোমবার খোলার পর বোঝা যাবে কত দর জমা পড়ল। আমরা তো আশা করছি প্রত্যাশিত দর জমা দেবেন আগ্রহী ক্রেতারা।
শুল্কমুক্ত সুবিধায় সাবেক এমপিদের আমদানি করা সব গাড়ির শুল্কসহ গড় মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। এত টাকা দিয়ে গাড়ি কিনতে আগ্রহী ক্রেতা নেই। সে ক্ষেত্রে কাস্টম কর্তৃপক্ষ মূল্য ছাড় দিয়ে গাড়ি বিক্রি করবে কি না এ প্রশ্নে তিনি বলেন, শুল্কসহ আমরা সাবেক এমপিদের গাড়ির মূল্য নির্ধারণ করে নিলামে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। সে ক্ষেত্রে প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের এসব বিলাসবহুল গাড়ির প্রতিটি ৬ কোটি টাকা মূল্য পেলে নিলামে বিক্রি করে দেব। সোমবার প্রথম নিলামের দর যাচাই করা হবে। প্রথম নিলামে দর না পেলে দ্বিতীয় নিলামে আরও কম দাম নির্ধারণ করে দর জমা নেওয়া হবে। আশা করছি প্রথম নিলামে প্রত্যাশিত দর না পেলে সাবেক ২৪ এমপিদের গাড়ির দর দ্বিতীয় নিলামে পাব।
কাস্টমস সূত্র জানায়, মোট ৪৫টি বিলাসবহুল গাড়ি নিলামে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে আছে ২৪ সাবেক এমপির গাড়ি। সাবেক এমপিদের গাড়ি জাপানের ২০২৪ মডেলের ল্যান্ড ক্রুজার। এসব ছাড়াও এবারের নিলামে পাঁচটি টয়োটা হ্যারিয়ার, দুটি টয়োটা র্যাভ ফোর, একটি টয়োটা এস্কোয়ার ও চীনের তৈরি ১০টি হেভি ডিউটি সিনো ডাম্প ট্রাক নিলামে তোলা হয়েছে। চলতি মাসের ২ থেকে ৪ ফেব্রæয়ারি আগ্রহী ক্রেতাদের সরেজমিন নিলামের গাড়িগুলো দেখার সুযোগ দেওয়া হয়। ক্রেতারা ঘুরেফিরে গাড়িগুলো দেখেছেন। নির্ধারিত সময় পর্যন্ত কাস্টমসের নিলাম শেডে গাড়িগুলো দেখেন ক্রেতারা। ক্রেতাদের অনেকে গাড়ির অবস্থা দেখার পাশাপাশি ক্যাটালগ বই থেকে বিস্তারিত তথ্য যাচাই করে দেখেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পরিদর্শনে আসা ক্রেতারা বেশি দাম রাখা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কাস্টমসের নিলাম শাখা। তারা বলেন, নিলামে শুল্কসহ যোগ করে যে দাম দাঁড়ায় সেই দামে কিনলেও বিক্রি করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত ক্রেতা নাও মিলতে পারে। তাই প্রথম নিলামেই দাম কম রাখা উচিত ছিল।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, নিলামের স্থায়ী আদেশ অনুযায়ী নিলাম দর রাখতে হয় ৬০ শতাংশের ওপর। ৬০ শতাংশের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ১০ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়। সবমিলিয়ে ৮৫ শতাংশ দাম দিয়ে গাড়ি কিনলে বিক্রি করার মতো ক্রেতা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তা ছাড়া গাড়ির কোটেশন মূল্যের ওপর ১০ ভাগ পে-অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফট চট্টগ্রাম কাস্টম কমিশনারের অনুক‚লে জমা দিতে হয়েছে দরদাতাদের। নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে সতর্ক করে বলা হয়, কোটেশন মূল্যের ১০ ভাগ অর্থ জমার পে-অর্ডার কপি দরপত্রে না পেলে তাৎক্ষণিক টেন্ডার বাতিল করা হবে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. এয়াকুব চৌধুরী বলেন, সাবেক এমপিদের ২৪ গাড়ি প্রথম নিলামে বিক্রি হবে বলে মনে হয় না। কারণ দাম অনেক বেশি। দ্বিতীয় বা তৃতীয় নিলামে গাড়িগুলো বিক্রি হতে পারে বলে মনে করছি।
তিনি বলেন, সোমবার বিকালে টেন্ডার বাক্স খোলা হবে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বিলাসবহুল ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ির যে দাম নির্ধারণ করেছে সেই অনুযায়ী গাড়িগুলো নিলাম ব্যবসায়ীরা কিনতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে প্রথম নিলামে প্রতিটি গাড়ির জন্য দরদাতারা দর জমা দিতে পারেন ৫০ কিংবা ৫৫ লাখ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে। সে ক্ষেত্রে সেই দরদাতারা দ্বিতীয় দরপত্রে কিছুটা দাম বাড়িয়ে গাড়ি কিনতে পারবেন। সেই কৌশলই নিয়েছেন নিলামে অংশ নেওয়া গাড়ির ক্রেতারা। দেখা যাক আজ কতজন কত দর জমা দেন।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা বিজন সরকার বলেন, গাড়ি নিলামের জন্য ঢাকায়ও টেন্ডার বাক্স রাখা আছে। সেখানে বাক্স খুলে খামগুলো সিলগালা করে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হবে। সোমবার ঢাকা ও চট্টগ্রামে জমা দেওয়া টেন্ডার বক্সের খামগুলো একসঙ্গে খোলা হবে। দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টার মধ্যে কাস্টম হাউসের নিলাম শাখায় টেন্ডার খোলার পর দর যাচাই করা হবে। এরপর কত দর জমা পড়ল তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।
প্রসঙ্গত, দ্বাদশ সংসদের অন্তত ৫০ সাবেক এমপি শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিদেশ থেকে ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি আমদানি করেন। প্রতিটি গাড়ির জন্য ৮২৪ থেকে ৮৩৬ ভাগ শুল্ক ছাড় পান সেসব সাবেক এমপিরা। তাতে প্রতিটি গাড়ির দাম পড়ে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা। বাজারে শুল্কসহ এসব গাড়ির সিসি ভেদে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা দাম। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগ মুহূর্তে অল্প কয়েকজন এমপি ছাড় করেন তাদের গাড়ি। বেশিরভাগ গাড়ি রয়ে যায় চট্টগ্রাম বন্দর ও খুলনার মোংলা বন্দরে। নিলামে তোলার আগে সাবেক এমপিদের শুল্কসহ গাড়িগুলো ছাড় করে নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু লাপাত্তা এমপিদের কেউ সাড়া দেননি। তাই গাড়িগুলো প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।
বিএনএনিউজ/ নাবিদ