বিএনএনিউজ২৪: মহামারিতে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হলেও সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাবে মাথাপিছু আয় আগের অর্থবছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার হয়েছে।এরআগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২০২৪ মার্কিন ডলার।
বিবিএস ২০২০-২১ অর্থবছরের সাময়িক আর এর আগের অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরের চূড়ান্ত জিডিপির হিসাব প্রকাশ করেছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথা পিছু আয় কত?
বিবিএসের সদ্য প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি চূড়ান্ত হিসেবে বেড়েছে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ, যা সাময়িক হিসেবে ছিল ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে সাময়িক হিসাবে জিডিপি বেড়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ যা বাজেটে ধরা হয় ৬ দশমিক ১০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান হচ্ছে, ঠিক করোনার বছরেই মোট ১০ হাজার নতুন কোটিপতি যুক্ত হয়েছেন ব্যাংক ব্যবস্থায়। আর ৫০ কোটি টাকার ওপরে আমানত রেখেছে, এমন হিসাবের সংখ্যাই বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৯০-তে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ওয়েলথ-এক্সের প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পেরেছিলাম, আড়াই শ কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিকদের সংখ্যা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি হারে বাড়ছে। এদিকে মহামারির মধ্যেও অবিশ্বাস্য খরুচে সব প্রকল্পের কাজও থেমে নেই। তার মানে আয়রোজগার কাদের বাড়ছে, কিছুটা আন্দাজ করা হচ্ছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সন্মানীয় ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্বল্প জিডিপি প্রবৃদ্ধির মধ্যেও আয় বৈষম্য বেড়েছে। ফলে গরিবসহ অনেকেই নতুনভাবে দরিদ্র হয়েছেন। তাদেরকে দারিদ্র্য থেকে টেনে তুলতে সরকারকে লক্ষ্যভিত্তিক কর্মসূচি নিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক কমেছে ২০ শতাংশ। মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যেও অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ছিল আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বা ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে ১৬৪ কোটি ৭০ লাখ (এক দশমিক ৬৪ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে) যার পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। যা গত দেড় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন আয়। এর আগে গত বছরের মে মাসের পরে এক মাসে এত কম রেমিট্যান্স আর আসেনি। ওই মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১৫০ কোটি ৪৬ লাখ মার্কিন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) দেশে সিংহভাগ রেমিট্যান্স এসেছে পাঁচটি দেশ থেকে। এ সময়ে সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাজ্য এ পাঁচ দেশ থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৪৩৮ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। এ পাঁচ দেশসহ রেমিট্যান্স পাঠানো শীর্ষ ১০টি দেশ হলো: সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, ওমান, কাতার, ইতালি ও সিঙ্গাপুর।
অর্থনীতিবিদ ড: ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, এই পরিসংখ্যানে দেশের মানুষের আয়ের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় না। এর পেছনে যুক্তি দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে দ্রুত ধনী এবং অতি ধনী হওয়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু গরীব মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। একইসাথে সমাজে বৈষম্য এবং মানুষের আয়ের ফারাক অনেক বেশি হচ্ছে। এই পরিস্থিতির প্রতিফলন সরকারি পরিসংখ্যানে বা হিসাবে আসছে না। সেজন্য তা মানুষের কাছে গুরুত্ব পায় না।
এমএইচ,জিএন