বিএনএ, গাজীপুর: গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ইমরান হোসেন শিশিরকে জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক নারীর ভিডিও প্রকাশের পর দলীয় পদ হারিয়েছেন। এ ঘটনার তিন দিনের মাথায় এবার ওই ছাত্র নেতার নামে থানায় ধর্ষণ মামলা হয়েছে। বুধবার (১৬ অক্টোবর) গাজীপুরের কাপাসিয়া থানায় ৩০ বছর বয়সী ওই নারী এ মামলা করেছেন বলে নিশ্চিত করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন।
অভিযুক্ত ইমরান হোসেন শিশির গাজীপুরের কাপাসিয়া সদরের সাফাইশ্রী আদালত পাড়া এলাকার আব্দুর রশিদের ছেলে।
বাদী তারই প্রতিবেশী। যাকে নিয়ে ভারতে ৯ দিন এবং কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে গিয়ে একসঙ্গে আবাসিক হোটেলে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ উঠে শিশিরের বিরুদ্ধে। এমনকি শিশিরের চাপে পাঁচবার গর্ভপাত করতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ওই নারী।
বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, তিনি কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজে পড়াকালীন শিশিরের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেই সুবাদে ২০১৯ সাল থেকে বাদীর বাড়িতে তার আসা-যাওয়া ছিল। এক পর্যায়ে বাদীকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। ঢাকায় এবং গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে নিয়ে বাদীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করতো শিশির। প্রথমে ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর কাপাসিয়ার রাওনাট বাজার সংলগ্ন শিশিরের বন্ধু মেহেদী হাসানের ফাঁকা বাড়িতে বাদীকে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়।
এরপর বাদীকে উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে একটি আবাসিক হোটেলে এবং শ্রীপুরের ফাওগান ইকো রিসোর্টে বহুবার নিয়ে বাদীকে ধর্ষণ করা হয়।
বাদী আরো অভিযোগ করেন, ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তারা ভারতে যান। সেখানে তারা ১০ দিন অবস্থান করেন এবং একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করেন। এছাড়াও ২০২৩ সালের ৩ অক্টোবর ও একই বছরের ৮ ডিসেম্বর কক্সবাজারের আবাসিক হোটেল কল্লোল, চলতি বছরের ১৯ মার্চ আবাসিক হোটেল কল্লোল ও নিসর্গ এবং গত জুলাইয়ে ফাওগান রিসোর্টসহ বিভিন্ন স্থানে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তারা হোটেলে রাত্রিযাপন করেছে এবং প্রতিবারই বিয়ের আশ্বাস দিয়ে বাদীকে ধর্ষণ করেন শিশির। যার ফলে বাদী কমপক্ষে পাঁচবার গর্ভবতী হয়ে পড়েন।
শিশির ছাত্র রাজনীতির পদ পদবীর বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে প্রতিবারই বাদীকে গর্ভপাত করাতে বাধ্য করেন। পরবর্তীতে বাদীর পরিবারও শিশিরকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে টালবাহানা শুরু করেন। সবশেষ গত ৩০ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে কাপাসিয়ার তরগাঁও ঋষিবাড়ি এলাকায় বাদীর ফাঁকা বাসায় যায় শিশির। তখন দ্রুতই বিয়ে করবে আশ্বাস দিয়ে আবারও বাদীকে ধর্ষণ করা হয়।
বাদী অভিযোগ করেন, সরকার পতনের একদিন পর ৬ আগস্ট শিশিরকে আবারও বিয়ের কথা বললে সে সম্পর্কের বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে বসে। এমনকি মুখ খুললে বাদীকে ভাড়াটে খুনি দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় শিশির। পরবর্তীতে প্রতিকার পেতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতির কাছে এসব বিষয়ে অভিযোগ করেন বাদী।
তারও আগে শিশিরকে জড়িয়ে ওই নারীর তিন মিনিট ৪১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও এবং দুজনের বেশকিছু আপত্তিকর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।
এরপর ১৩ অক্টোবর সকালে ওই নারীকে দলবল নিয়ে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে শ্রীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় সাজানো সংবাদ সম্মলন করানো হয়। সেখানে বাদীকে বলতে বাধ্য করা হয় সমস্ত ভিডিও সুপার এডিট করে বানানো হয়েছে। পরে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে ১৩ অক্টোবর রাতে শিশিরকে গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সাজানো সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার পর শিশিরের বিরুদ্ধে ওই নারীর মোবাইল ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ করা হয় মামলায়।
বিএনএনিউজ/ বিএম/হাসনা