বিএনএ, ঢাকা : বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫০টি। নতুন নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছে ১৪৪ টি রাজনৈতিক দল। নির্বাচন কমিশন নতুন করে ১১৫ প্রতীক সংরক্ষিত রেখেছে। নতুন এই প্রতীক তালিকায় কলম ও মোবাইল ফোন থাকলেও রাখা হয়নি ‘শাপলা’।
সরকারি দলের তমকা পাওয়া নিবন্ধন প্রত্যাশী এনসিপি তাদের দলীয় প্রতীকের অগ্রাধিকারে রেখেছে ‘শাপলা’। ২২ জুন নিবন্ধন আবেদন জমা দেওয়ার সময় শাপলার সাথে আরও দুটি প্রতীক ‘কলম’ ও ‘মোবাইল ফোন’ চেয়েছে দলটি।
এর আগেই ১৭ জুন নিবন্ধিত দল নাগরিক ঐক্য তাদের ‘কেটলি’ প্রতীক পরিবর্তন চেয়ে শাপলা ও দোয়েল চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন নাগরিক ঐক্যের আবেদন নাকচ করে দেয়। জাতীয় প্রতীক হিসাবে উল্লেখ করে, ‘শাপলা’, প্রতীক তালিকায় না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এনসিপি বলেছে, আরও দুটি প্রতীক পছন্দ থাকলেও শাপলা ছাড়া তাদেরও কোনো বিকল্প নেই। শাপলা প্রতীক পেতে প্রয়োজনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পৃষ্টপোষকতায় নতুন আত্মপ্রকাশ করা দলটি রাজনৈকিভাবে লড়বে বলে হুঙ্কার দেয়।
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ৯ই জুলাই মধ্যরাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বলেছেন ‘শাপলা জাতীয় প্রতীক নয়। জাতীয় প্রতীকের একটি অংশ। একইভাবে ধানের শীষ, পাটপাতা এবং তারকাও জাতীয় প্রতীকের অংশ। শাপলা যদি রাজনৈতিক দলের প্রতীক না হতে পারে, তাহলে ধানের শীষও প্রতীক হতে পারবে না। আর যদি জাতীয় প্রতীকের যেকোনো একটি অংশ রাজনৈতিক দলের প্রতীক হতে পারে, তাহলে শাপলাও হতে পারবে।’
প্রসঙ্গত, শাপলাকে নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে বিধিমালার তফসিলভুক্ত না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর ফলে কোনো রাজনৈতিক দল তাদের দলীয় প্রতীক হিসেবে শাপলা পাবে না।
শাপলা প্রতীক নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি ও নাগরিক ঐক্যের মধ্যে বিরোধ মীমাংসিত না হতেই এবার নির্বাচন কমিশনে এনসিপির পছন্দের অন্য দুই প্রতীক মোবাইল ও কলম প্রতীক পাওয়ার দাবিতে একাধিক রাজনৈতিক দল এখন পাল্টাপাল্টি চিঠি দিচ্ছে কমিশনে।
এরইমধ্যে ‘কলম’ ও ‘মোবাইল ফোন’ প্রতীক তাদের বরাদ্দের জন্য আগেও আবেদনের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে মনে করিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি (বাজপা) ও জনস্বার্থে বাংলাদেশ।
জনস্বার্থে বাংলাদেশ দলের প্রেসিডেন্ট মো. বাবুল হোসেন নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ‘মোবাইল প্রতীক নিয়ে আমাদের রাজনৈতিক দল দেশে দীর্ঘ দিন যাবত প্রচার-প্রচারণা করে আসছে এবং নির্বাচন কমিশনও আমাদের দলের আবেদনে প্রস্তাবিত প্রতীকের ব্যাপারে অবগত আছে।’
চিঠিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘জনস্বার্থে বাংলাদেশ’ রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন আবেদন করে ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর, প্রতীক হিসেবে ‘মোবাইল’ চায়। গণমাধ্যম থেকে জানতে পারলাম জাতীয় নাগরিক পার্টিকে মোবাইল প্রতীক হিসাবে বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে। যদি তাই হয়, তাহলে আমরা এরকম সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ এবং বিষয়টি সুরাহার জন্য আলোচনা করতে নির্বাচন কমিশনকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাবো ।
এদিকে বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টির মুখপাত্র কাজী শামসুল ইসলাম নির্বাচন কমিশন সচিবকে লেখা চিঠিকে উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টির জন্য ‘কলম’ প্রতীক বরাদ্দ চেয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আবেদন তারাকরেছে।
গত ২২ জুন সকল রাজনৈতিক দলের আবেদন শেষে সংবাদ মাধ্যম বরাতে জানা যায়, বেশ কয়েকটি দল দলীয় প্রতীক হিসেবে কলম চেয়েছে। যখন ‘কলম’ প্রতীক চেয়ে আবেদন করে বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি, তখন অনেক রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আবেদনই করেনি। সুতরাং কলম প্রতীকের অগ্রণী দাবিদার একমাত্র বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি।
চিঠিতে বলা হয়, গত বছরের ২৮ নভেম্বর জাগ্রত পার্টির জন্মলগ্নে রেজ্যুলেশন ও পরবর্তীতে গঠিত গঠনতন্ত্র এবং ঘোষণাপত্রে দলীয় প্রতীক হিসেবে কলম ব্যবহার করা হয়। সবকিছু বিবেচনায় নৈতিকভাবে কলম প্রতীকের প্রথম হকদার একমাত্র বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি।
এই অবস্থায় বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি ও জনস্বার্থে বাংলাদেশ দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হলে এবং প্রতীকের দাবি না ছাড়লে, জাতীয় নাগরিক পার্টিকে নতুন প্রতীকের জন্য আবেদন করতে হবে।
প্রসঙ্গত, নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ ১৪৪টি রাজনৈতিক দল প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে নির্বাচন কমিশনের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। তবে তাদের নথিপত্র ও তথ্য সংশোধনের জন্য ১৫ দিনের সময় দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
বিএনএনিউজ/সৈয়দ সাকিব/এইচ.এম।