বিএনএ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে হাসপাতাল চাই,তবে সিআরবিতে নয়। বীর চট্টগ্রামের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। সিআরবি’তে হাসপাতাল নির্মাণ পরিকল্পনা গণবিরোধী ও প্রকৃতি বিধ্বংসী উন্নয়ন।
শুক্রবার (১৬ জুলাই) দুপুরে সিআরবি সাতরাস্তার মোড়ে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সিআরবি বাঁচাও, চট্টগ্রাম বাঁচাও আন্দোলনে এমন মন্তব্য করেন তারা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সিআরবি’র কোনো বিকল্প শুধু চট্টগ্রাম শহরে নয়, বাংলাদেশের কোথাও নেই। চাইলে এরকম শত শত হাসপাতাল করা যাবে। কিন্তু একটি সিআরবি চাইলেও গড়ে তোলা সম্ভব নয়। নগরীর ফুসফুসখ্যাত জায়গায় একটি হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত ধ্বংসাত্মকমূলক এবং গণবিরোধী। অবিলম্বে সিআরবি’তে বেসরকারি হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। একইসাথে প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস না করে বিকল্প কোন স্থানে হাসপাতাল করতে হবে।’
বক্তারা আরও বলেন, চট্টগ্রাম শহরে যত প্রকৃতির নিসর্গময় স্থান ছিল তার সবগুলোই ধ্বংস করা হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের কমতি নেই। নগরীর শ্রমিক শ্রেণী তো বটেই, মধ্যবিত্ত জনগণের পক্ষেও এসব বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা নেওয়া অসম্ভব। নগরীর এ মূহূর্তে একটি সরকারি হাসপাতাল খুবই জরুরি। আমরা জোড় দাবি জানাই বিকল্প স্থানে একটি আধুনিক সুবিধা সম্বলিত সরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা করা হোক।’
আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়ে বক্তারা বলেন, সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিল ও বিকল্প স্থানে সরকারি হাসপাতালের ঘোষণা না আসা অবধি আমরা চট্টগ্রামের ছাত্র-জনতাকে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাব।
এদিকে পাহাড় ও গাছগাছালিতে ঘেরা এ অঞ্চলে রয়েছে প্রায় আড়াই শ প্রজাতির উদ্ভিদ ও পাখি, কয়েক শ প্রজাতির কীটপতঙ্গ, স্তন্যপায়ীসহ নানা প্রাণের সমারোহ। আছে রেইনট্রিগাছ, যাতে বসবাস অন্তত দেড় শ প্রজাতির শৈবাল, ছত্রাক, মস আর পোকামাকড়। রয়েছে ঔষধি আর বিপন্ন প্রজাতির গাছও। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ (চবি) বেশ কয়েকটি গবেষণায় সিআরবি এলাকার পরিবেশগত গুরুত্বের এই চিত্রটি পাওয়া যায়। দুই মাস ধরে একটি জরিপ পরিচালিত হয় চবির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেলের তত্ত্বাবধানে। এতে সহায়তা দিয়েছেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকোর সদস্যরা। অপর গবেষণা কার্যক্রমটি চালান ভেনম রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশের সহকারী গবেষক ও চিটাগং বার্ড ক্লাবের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান। তিন বছর ধরে নগরীর গাছপালা, বন আর পাখপাখালি নিয়ে পরিবেশগত গবেষণা করছেন তিনি।
জানতে চাইলে মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল বলেন, আমাদের গবেষণা শেষ হতে আরও মাসখানেক লাগবে। তবে প্রাথমিক গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যও তাজ্জব বনে যাওয়ার মতো।’ তাঁর জরিপে সিআরবির পাহাড়ি এক বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ১৯২টি উদ্ভিদ প্রজাতি রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে বড় বৃক্ষ ৭৪ প্রজাতি, মাঝারি ৩৭ প্রজাতি, গুল্ম প্রজাতি আছে ৬৭ টি, আর লতাজাতীয় উদ্ভিদ ১৪ প্রজাতির। এর মধ্যে ১৫৪টি প্রজাতিই ঔষধি গাছ। আর বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ আছে ৯ প্রজাতির। কেবল গাছপালায় নয়, পাখি, উভচর আর স্তন্যপায়ী নানা প্রাণের বৈচিত্র্য খুঁজে পাওয়া যায় সিআরবিতে।
বিএনএনিউজ/মনির