বিএনএ, ডেস্ক : ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নেপালের জলবিদ্যুৎ সরাসরি বাংলাদেশে আসা শুরু হয়েছে। ১৪ জুন শনিবার রাত থেকে ৩৩ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ আসা শুরু হয়। এরপর ১৫ জুন রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় ৩৮ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ আসছে বলে জানায় পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।

ভারতের মুজাফফরপুর-বাহারামপুর হয়ে বাংলাদেশের ভেড়ামারা গ্রিড দিয়ে এই বিদ্যুৎ আসছে। এটি শুধু দুটি দেশের সম্পর্ক নয়, বরং ভারতের ভূরাজনৈতিক সমর্থনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় বহুপাক্ষিক জ্বালানি বাণিজ্যের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
পিজিসিবির এক কর্মকর্তা জানান, নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে হওয়া ত্রিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় এই বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে বিদ্যুৎ কেনাবেচার বিশেষ সুযোগ রয়েছে। কারণ, নেপাল জলবিদ্যুৎনির্ভর দেশ এবং তাদের বিপুল পরিমাণ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। গ্রীষ্ম মৌসুমে (জুন-নভেম্বর) নেপালে চাহিদার চেয়ে বেশি জলবিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, যা ওই সময়ে, বাংলাদেশ, চাহিদা পূরণে ব্যবহার করতে পারে।
আবার শীত মৌসুমে (নভেম্বর-মার্চ) নেপালের অধিকাংশ জলভাগ জমে বরফ হয়ে যায়। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস পায়। সেই সময় বাংলাদেশে চাহিদা কমে ৭-৮ হাজার মেগাওয়াটে নেমে আসে। উৎপাদন সক্ষমতার বড় অংশ অলস থাকে। বাংলাদেশ উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ শীত মৌসুমে নেপালে রপ্তানি করতে পারে। এতে উভয় দেশেরই লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
গত বছরের ৩ অক্টোবর নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে হওয়া ত্রিপাক্ষীক চুক্তি অনুযায়ী নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানির সিদ্ধান্ত হয়।
চুক্তি অনুসারে, ১৫ জুন থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসের জন্য ভারতের ৪০০-কেভি ট্রান্সমিশন গ্রিড ব্যবহার করে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানি করবে নেপাল। ২০২৯ সাল পর্যন্ত বছরের নির্দিষ্ট পাঁচ মাস ঢাকায় আসবে নেপালের বিদ্যুৎ।
নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি করতে প্রায় ছয় বছর ধরে ভারত ও নেপালের সঙ্গে দেন দরবার করেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। নেপাল রাজি থাকলেও নানান শর্তের বেড়াজালে ভারত সেই উদ্যোগ পেছাতে থাকে। শেষ পর্যন্ত গতবছর এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
চুক্তি অনুযায়ী প্রতি ইউনিটের দাম পড়ছে ৭ টাকা ৮৭ পয়সা। যা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয়ের চেয়ে কম। বাংলাদেশে এখন প্রতি ইউনিটের উৎপাদন ব্যয় ১১ টাকার বেশি।
নেপালের বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসা শুধু একটি আমদানির ঘটনা নয়। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তির যুগপৎ ব্যবহার, সহযোগিতা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার সম্ভাবনার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সৈয়দ সাকিব