বিএনএ ডেস্ক: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর ছয় মাস বাকি। আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন আয়োজন করতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে। মাত্র ছয় মাস মেয়াদের জন্য সংসদ সদস্য হতে ১৫ প্রার্থী দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
ভোটের মাঠে প্রার্থী হতে ২০ জন মনোনয়নপত্র তুললেও শেষ দিনে এসে বৃহস্পতিবার ১৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আগামী ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচন হবে। এই নির্বাচন হবে ব্যালটে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরা। ১২ আগস্টের মধ্যে উপনির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এই আসনে মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১৮ জুন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৫ জুন।
ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান। যিনি ফারুক নামে বেশি জনপ্রিয়। দীর্ঘদিন রক্তে সংক্রমণজনিত রোগে ভুগে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে গত ১৫ মে মারা যান। এরপর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে সংসদ সচিবালয়।
বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪১টি। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড় থাকা দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তবে দলীয় প্রতীকে অংশ নিচ্ছেন আটটি রাজনৈতিক দলের ১০ জন প্রার্থী। বাকিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষের দিকে। আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা আছে। ফলে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মাত্র মাস ছয়েকের মতো সংসদ সদস্য থাকার সুযোগ পাবেন।
ঢাকার অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান, বনানী, ক্যান্টনমেন্ট ও ভাসানটেক এলাকা নিয়ে ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসন। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগেই ভোটের মাঠে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে নৌকার মাঝি হিসেবে আলোচনায় আসেন সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আরাফাত।
মনোনয়ন জমা দেয়ার আগেই এই আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় এসেছেন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। জাতীয় পার্টির দুই অংশের পক্ষ থেকে পৃথক প্রার্থী ঘোষণা দেয়া হয়। এতে জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আবারও প্রকাশ্যে চলে আসে।
২০১৮ সালে চিত্রনায়ক ফারুক নির্বাচিত হওয়ার আগে ঢাকা-১৭ আসনে ২০১৪ সালে বিএনপি জোটের বর্জনের মধ্য সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ। এর আগে ২০০৮ সালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন।
মনোনয়নপত্র জমা দিলেন যারা
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত, জাতীয় পার্টির (রওশনপন্থি) কাজী মামুনুর রশীদ, জাতীয় পার্টির (জি এম কাদেরপন্থি) মেজর (অব.) সিকদার আনিসুর রহমান, গণতন্ত্রী পার্টির অশোক কুমার ধর ও মো. কামরুল ইসলাম, মুক্তিজোটের মো. আক্তার হোসেন, তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী রেজাউল ইসলাম স্বপন, জাকের পার্টির প্রার্থী কাজী রাশেদুল হাসান।
এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তারিকুল ইসলাম ভূঞা, আবু আজম খান, মো. আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম, মুসাউর রহমান খান, শেখ আসাদুজ্জামান বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেন।
পর্দার অন্তরাল থেকে ভোটের মাঠে আরাফাত
স্বল্প সময়ের জন্য ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, দলের নেতা ও চিত্রজগতের এক ডজনের বেশি ব্যক্তি দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা গেছে। উপনির্বাচনে মনোনয়ন পেলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন নিশ্চিত-এমনটিই ভেবেছিলে মনোনয়ন প্রার্থীরা।
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে প্রথমে ১২ জন দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ আলী আরাফাতও (মোহাম্মদ এ আরাফাত) ছিলেন। সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আরাফাত আওয়ামী লীগের হয়ে নানা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত ছিলেন। টকশোতে আওয়ামী লীগ ও সরকারের পক্ষে কথা বলেন তিনি। গত ডিসেম্বরে প্রথমবার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য হন তিনি। এবার সংসদ সদস্য হওয়ার দৌড়ে তিনি শামিল হলেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া শেষে সাংবাদিকদের মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতির মানুষ। রাজনীতির কর্মী এবং রাজনীতিবিদ। রাজনীতির বিভিন্ন ধরনের শাখা-প্রশাখা আছে, যেখানে কাজ করা যায়। আমি মাঠেঘাটে কাজ করেছি। তবে পর্দার অন্তরালে কাজ করেছি।’
‘ঘোমটা পরে বিএনপি ঢাকা-১৭ আসনেও আছে’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ আরাফাত বলেন, ‘তারা (বিএনপি) সব জায়গায় আছে। প্রতিপক্ষ তো বিভিন্নভাবে নিয়োজিত আছে। আমাদের পরাজিত করা, ছোট করা, হিউমিলিয়েট করা, সেটি আমরা হতে দেব না। আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষ যারা, তারা নির্বাচনে আসুক, থাকুক এটি আমরা চাই। আমরা নির্বাচনকেন্দ্রিক দল। কিন্তু যারা গণতন্ত্রবিরোধী অবস্থান নিচ্ছে, তারা নির্বাচনে থাকছে না।’
মোহাম্মাদ এ আরাফাত বলেন, ‘আরও অনেকেই প্রার্থী আছে। তবে কার ঘাড়ে তারা (বিএনপি) চাপবে, এটি আমরা বলতে পারছি না। তবে তারা সক্রিয়ভাবে আছে। তারা অদৃশ্যভাবে থাকবে। নৌকার বিপক্ষে তারা সব সময় সক্রিয়। কোথাও ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
জাপায় ফের দেবর-ভাবি দ্বন্দ্ব
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের দ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে এসেছে। এই আসনের উপনির্বাচনে দেবর-ভাবি দুজনই তাদের প্রার্থী দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র জমা দেন জি এম কাদেরের প্রার্থী মেজর (অব.) আনিছুর রহমান ও রওশন এরশাদের প্রার্থী কাজী মামুনুর রশীদ। তবে কার প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীক পাচ্ছেন, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আগামী রোববার বেলা ১১টার মধ্যে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ঢাকা জেলার জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মুনীর হোসাইন খান। তিনি বলেন, ‘আইন-বিধি ও আরপিও দেখে যাচাই-বাছাইয়ের দিন আগামী রোববার বেলা ১১টায় জানানো যাবে।’
এ ছাড়া এই আসনের নির্বাচনে জাকের পার্টির প্রার্থী কাজী রাশেদুল হাসান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী রেজাউল ইসলাম স্বপন ও গণতন্ত্রী পার্টির প্রার্থী অশোক ধর মনোনয়ন জমা দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম ও তারিকুল ইসলামও মনোনয়নপত্র জমা দেন।
বগুড়ায় হেরেও আত্মবিশ্বাসী হিরো আলম
চলতি বছরের শুরুতে বগুড়া-৬ (সদর) ও বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেন আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। বগুড়া-৬ উপনির্বাচনের ভোটে বড় ব্যবধানে হেরে গেলেও বগুড়া-৪ আসনে লড়াই করেন হিরো আলম। এই উপনির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের কাছে মাত্র ৮৩৪ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান।
এবার ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন হিরো আলম। বৃহস্পতিবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমাকে হারাতে পারবে না। আর যদি বগুড়ার মতো নয়ছয় হয়, তাহলে তো বুঝতেই পারছেন সেটা হবে ষড়যন্ত্র। গাজীপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। সেই বিশ্বাস থেকে প্রার্থী হয়েছি। তবে বরিশাল সিটির মতো নির্বাচন হলে জিততে পারব না।’
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ