বিএনএ নোবিপ্রবি: নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষা বিভাগের আয়োজনে এডুকেশন এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সাস্টেইনেবিলিটি কোর্সের উপর প্রজেক্ট ফেয়ার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সহকারী অধ্যাপক ওয়ালিউর রহমান আকন্দ এবং সহকারী অধ্যাপক এস. এম মুশফিকুর রহমান আশিক এর তত্ত্বাবধানে এই প্রজেক্ট ফেয়ারটি অনুষ্ঠিত হয়।বুধবার (১৫ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী ভবনের তৃতীয় তলায় মুক্ত মঞ্চে প্রজেক্ট ফেয়ার অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রজেক্ট ফেয়ারে শিক্ষা বিভাগের ১৩ তম ব্যাচের ৯টি গ্রুপ অংশ নেয়। গ্রুপগুলো পরিবেশের উপযোগী বিভিন্ন প্রজেক্ট বানিয়ে তা প্রদর্শন করে।
সহকারী অধ্যাপক ওয়ালিউর রহমান আকন্দ বলেন, “প্রজেক্ট ফেয়ারটি খুব সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ। শিক্ষার্থীরা সবাই আজকের দিনটি উপভোগ করেছে। অন্যান্য বিভাগের শিক্ষক- শিক্ষার্থীরাও প্রজেক্ট ফেয়ার দেখতে এসেছেন, উপভোগ করেছন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে কেন্দ্র করেই আজকের প্রজেক্টগুলো শিক্ষার্থীরা সাজিয়েছে । পরিবেশগত বিভিন্ন সময়োপযোগী প্রজেক্ট শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে উঠে এসেছে যা বাস্তবায়ন করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনেক উপকার বয়ে আনবে। আর শিক্ষার্থীরাও এমন সৃজনশীল কাজে দ্বিগুন উৎসাহিত হবে।” পরিশেষে তিনি প্রজেক্ট ফেয়ারটি বাস্তবায়নে কাজ করে যাওয়া সকলের প্রতি আবারো কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
এ ব্যাপারে সহকারী অধ্যাপক এস. এম মুশফিকুর রহমান আশিক বলেন,”এ প্রজেক্ট ফেয়ারটি মূলত এনভায়রনমেন্টাল এডুকেশন এন্ড সাস্টেইনেবিলিটি কোর্স ওয়ার্কের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই কোর্স ওয়ার্কের মূল উদ্দেশ্য ছিলো এনভায়রনমেন্টাল লিটারেসি’র(Environmental Literacy) বা পরিবেশ সাক্ষরতা, এনভায়রনমেন্টাল বিভিন্ন ইস্যু এবং সাসটেইনেবলিটির সাথে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করানো।
এই ফেয়ারে শিক্ষার্থীরা নোবিপ্রবির পরিবেশের কন্টেক্সট চিন্তা করে বেশ কিছু দারুন প্রজেক্ট তুলে ধরেছে । শিক্ষার্থীরা নিজেরা গ্রুপওয়ার্কের মাধ্যমে যে প্ল্যানগুলি ভিত্তি করে কাজ করেছে তা তাদের চমৎকার সৃজনশীলতা ও সৃষ্টিশীলতার পরিচায়ক।
আমাদের যে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে এদের নিয়ে আমরা সবাই সচেতন। এই প্রজন্ম চাইলেই ক্রিয়েটিভ এবং ইনোভেটিভ কাজ করতে পারে।”
তিনি তাঁর বক্তব্যে আরো বলেন, “প্রজেক্টগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরিবেশ ও এ সম্পর্কিত ইস্যু নিয়ে আরো গভীরভাবে অনুধাবনের সুযোগ পাবে। পরিবেশগত বিভিন্ন ইস্যুর সমাধানে আমরা যে কৌশল অনুসরন করি তা টেকসই করার লক্ষে শিক্ষার্থীদের এ ধরনের কার্যক্রম তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে।”
এ ধরনের একটি সফল প্রজেক্ট ফেয়ার আয়োজনের জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
উল্লেযোগ্য প্রজেক্টগুলো হলো- সেক্স স্টিগমা; স্প্রিংক্লিং ওয়াটার; মেন্সট্রুয়াল হাইজিন এন্ড রিকোয়ারমেন্ট অফ ভেন্ডিং মেশিন; ফুয়েল এনার্জি প্রডাকশন ফ্রম নন- বায়োডিগ্রেডেবল সাবস্টেন্স; বায়োডিগ্রেডেবল ওয়েস্ট রিসাইকেল ইন স্কুল; গ্রিন হাউজ; মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা; এবং কালার ইউর লিভিংস। শিক্ষা বিভাগের ৪টি ব্যাচসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের শিক্ষক- শিক্ষার্থীরাও প্রজেক্ট ফেয়ারটি পরিদর্শন করেন।
কালার ইউর লিভিংস প্রজেক্ট গ্রুপের পক্ষ থেকে মাকসূদা মীম বলেন, “বর্জ পৃথকীকরণ এর এই প্রজেক্টটি আমাদের ক্যাম্পাসের বর্জ্য সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি বর্জ্যগুলোকে রিসাইকেল করার সুযোগ করে। পচনশীল বর্জ্য দিয়ে সার তৈরি করে কৃষিবিভাগ এটি কাজে লাগাতে পারবে।”
সেক্স স্টিগমা প্রজেক্ট গ্রুপের পক্ষ থেকে তাসনিম সুলতানা বলেন, “পিরিয়ড, সেক্স হেলথ, করনীয়, বর্জ্যনীয়, বাই সেক্সুয়্যালিটি, ট্রান্সজেন্ডার, ইত্যাদি এসব খুবই গুরুত্বপূর্ণ মানুষের জীবনের জন্য, কিন্তু এসব টপিকগুলো বিদ্যালয় ও পরিবার এ শিক্ষার্থীদের শেখানোর পরিবর্তে এড়িয়ে চলা হয়। যা হতে সচেতনতার মাধ্যমে, ওয়ার্কশপ, সেমিনার, ও বিজ্ঞাপন এর মাধ্যমে সবাইকে আরো শিক্ষিত ও সচেতন করা যাবে৷ তাছাড়া কারিকুলামে এসব বিষয় ভালোভাবে শিখানোর জন্য তাগিদ দিতে হবে। ”
দর্শনার্থীদের মধ্য থেকে মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, “পরিবেশ গঠিত বিভিন্ন বিষয়ে তাদের নতুন এবং চিন্তাশীল ধারনা উপস্থাপন দেখে খুবই ভালো লেগেছে। এই পরিবেশনা শিক্ষনীয় এবং এসব ধারনা নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা ও মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। আশা করি, আগামীতেও এমন প্রদর্শনী শিক্ষার্থীদের সাহায্য করবে।”
এছাড়াও আদিবা ইসলাম শ্রেয়া নামের এক দর্শনার্থী বলেন, “১৩ তম ব্যাচের প্রজেক্ট ফেয়ার এক কথায় দূর্দান্ত ছিলো! এই ফেয়ারের কারণে জানতে পারলাম বড় আপু ভাইয়াদের কত্ত সুন্দর চিন্তাভাবনা। একেবারে প্রতিটি প্রজেক্টই অসাধারণ হয়েছে।”
উল্লেখ্য, নোবিপ্রবিতে বর্তমানে শিক্ষা বিভাগের ৪টি ব্যাচ চলমান রয়েছে। বিভাগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের অন্তর্ভুক্ত।