বিএনএ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার হওয়া নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সংগঠক মোহাম্মদ শামীমুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর আগে গ্রেপ্তার সিরিয়া ফেরত আনসার আল ইসলামের ‘আইটি বিশেষজ্ঞ’ সাখাওয়াত আলী লালুকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শামীমুরকে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)।
বুধবার (১৬ জুন) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম হোসেন মোহাম্মদ রেজা এ আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন মামলার বাদী সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এসআই রাসিব খান।
তিনি বলেন, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট তার বিরুদ্ধে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। আদালত তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।
গ্রেপ্তার মোহাম্মদ শামীমুর রহমান প্রকাশ শামীম হুজুর (৪৩) চট্টগ্রাম নগরীর ফিরোজ শাহ কলোনি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি উপজেলার মহেশপুর গ্রামে। গ্রেপ্তার শামীম হেফাজতে ইসলামের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন বলেও তথ্য পেয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সূত্র জানায়, শামীম ২০ বছর ধরে ফিরোজ শাহ কলোনি এলাকার বড় মাদরাসা হিসেবে পরিচিত কওমি মাদরাসাটিতে শিক্ষকতা করে আসছিলেন। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তার বাসায় আনসার আল ইসলামের সাংগঠনিক বৈঠক হত। এসব বৈঠকে থাকতেন সাখাওয়াতও। সিরিয়ায় জঙ্গি প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধ শেষে দেশে ফেরার পর সাখাওয়াতের সঙ্গে আবারও শামীমের বৈঠক হয় বাসায়।
এর আগে গত শুক্রবার (১১ জুন) বিকেলে দক্ষিণ খুলশী আবাসিক এলাকাস্থ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় আহলে হাদীস জামে মসজিদের সামনে থেকে সিরিয়া ফেরত জঙ্গি নেতা আনসার আল ইসলামের ‘আইটি বিশেষজ্ঞ’ সাখাওয়াত আলী ওরফে লালুকে (৪০) গ্রেপ্তার করে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম। তার বিরুদ্ধে খুলশী থানায় সন্ত্রাস বিরাধী আইনে একটি মামলা করেছে কাউন্টার টেরোরিজম।
পরদিন তাকে আদালতে হাজির করে পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত সাখাওয়াতের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। প্রথম দফায় তিনদিনের রিমান্ড শেষে গতকাল মঙ্গলবার (১৫ জুন) তাকে দ্বিতীয় দফায় আবারও রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত আরও তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, সাখাওয়াত চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়ায় পুলিশ লাইন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর ভারতে চলে যান। সেখান থেকে এইচএসসি পাস করেন। সেখানে বসবাসরত আরিফ নামে এক বাংলাদেশির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ভারতে থাকা অবস্থায় আরিফের শ্যালিকাকে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে তিনি স্ত্রীসহ চলে যান লন্ডনে। ২০০৯ সালে গ্রিনিজ ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সাইয়েন্সে এমএসসি সম্পন্ন করেন। ২০১০ সালে তিনি বাংলাদেশে ফেরেন।
কয়েক বছর বেকার থাকার পর ২০১৪ সালে ‘কম্পিউটার অনলাইন ওয়েব ফার্ম’ নামে একটি অনলাইন ব্যবসা শুরু করলেও মাত্র ছয় মাসের মধ্যে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৫ সালে তিনি কিছুদিন চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লায় ‘তাজ সায়েন্টিফিক’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ২০১৬ সালে তাদের পারিবারিক ব্যবসা ‘ওয়াশো ড্রাই ক্লিনার্স’এ বসতে থাকেন। ২০১৭ সালে তুরস্কে চলে যাবার আগপর্যন্ত তিনি সেখানেই বসতেন।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট জানায়, মূলত লন্ডন থেকে ফেরার পর ২০১২ সালের দিকে সাখাওয়াতের মধ্যে পরিবর্তন আসতে থাকে। এসময় সে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তার স্ত্রীর দুই ভগ্নিপতি আরিফ ও মামুনই মূলত তাকে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের যুক্ত করে।
২০১৩ সালে আনসার আল ইসলামের সামরিক কমান্ডার বরখাস্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়ার সঙ্গে আরিফ ও মামুনের মাধ্যমে বৈঠক করেন সাখাওয়াত। তখন বরখাস্ত মেজর জিয়াকে মোয়াজ নামে তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সে জিয়ার ভাবশিষ্যে পরিণত হয় এবং পুরোপুরি সশস্ত্র জিহাদি কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশ করেন। এছাড়া আনসার আল ইসলামের পক্ষ থেকে দায়িত্ব পেলে সংগঠনটির তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডও পরিচালনা করতে থাকেন সাখাওয়াত। অর্থাৎ অনলাইনের মাধ্যমে জিহাদের প্রচার করতে থাকেন। এছাড়া চট্টগ্রাম নগরীর মনসুরাবাদ এলাকার হুজুর শফিক, লালখান বাজার এলাকার একটি এসির দোকানে কর্মচারি ওমর ফারুককে নিয়ে দেশজুড়ে আনসার আল ইসলামের সদস্যদের সংগঠিত করার কাজ শুরু করেন।
বিএনএনিউজ/মনির