22 C
আবহাওয়া
২:১৩ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল:সংসদীয় আসন-৬৪ (সিরাজগঞ্জ-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল:সংসদীয় আসন-৬৪ (সিরাজগঞ্জ-৩)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের হালচাল।

সিরাজগঞ্জ-৩ আসন 

সিরাজগঞ্জ-৩ সংসদীয় আসনটি রায়গঞ্জ এবং তাড়াশ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৬৪তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আব্দুল মান্নান তালুকদার বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫ হাজার ৮ শত ২০ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২০ হাজার ৮ শত ৮২ জন। নির্বাচনে বিএনপির আব্দুল মান্নান তালুকদার বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৬ হাজার ১ শত ১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের ইসহাক হোসেন তালুকদার। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪১ হাজার ৬ শত ৯২ ভোট।

ষষ্ঠ  সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আব্দুল মান্নান তালুকদারকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে ক্ষান্ত হননি, প্রতিহতও করেন। এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। বিএনপির আব্দুল মান্নান তালুকদারকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আব্দুল মান্নান তালুকদার নির্বাচিত

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১১ হাজার ২ শত ৭৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮ শত ৭৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির আব্দুল মান্নান তালুকদার বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৪ হাজার ১ শত ৯২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের ইসহাক হোসেন তালুকদার। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭০ হাজার ৯ শত ৭৫ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আব্দুল মান্নান তালুকদার বিজয়ী হন

২০০১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬৯ হাজার ৯ শত ৮৬ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২৭ হাজার ৯ শত ৪২ জন। নির্বাচনে বিএনপির আব্দুল মান্নান তালুকদার বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৭ হাজার ৭ শত ৮০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ নাসিম। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৯৭ হাজার ৬ শত ৯ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ইসহাক হোসেন তালুকদার বিজয়ী 

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৯৮ হাজার ৪ শত ৫৫ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫ শত ৮৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইসহাক হোসেন তালুকদার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬৪ হাজার ৭ শত ৫২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আব্দুল মান্নান তালুকদার। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৯ হাজার ৫ শত ২৫ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ইসহাক হোসেন তালুকদার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইসহাক হোসেন তালুকদার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আব্দুল আজিজ বিজয়ী হন
২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৫ শত ৪৯ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ২৯ হাজার ৫ শত ৮০ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৭ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আব্দুল আজিজ, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আব্দুল মান্নান তালুকদার, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আয়নুল হক, কাস্তে প্রতীকে সিপিবির শেখ মোহাম্মদ মোস্তফা নুরুল আমিন, গোলাপফুল প্রতীকে জাকের পার্টির আলমগীর হোসেন, বাঘ প্রতীকে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের নুরুল ইসলাম, সিংহ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আহসান হাবিব সুজন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল আজিজ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫ শত ১৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আব্দুল মান্নান তালুকদার, ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ২৭ হাজার ২ শত ৪৮ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করেন।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জ-৩ {রায়গঞ্জ এবং তাড়াশ} উপজেলা নিয়ে গঠিত এই সংসদীয় আসনটিতে পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম সংসদে একাধারে বিএনপি এবং নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একাধারে বিজয়ী হন।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর সিরাজগঞ্জ- ৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৮.৭৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৪.৪৯%, বিএনপি ৩৮.১৪%, জামায়াতে ইসলামী ২০.৮৭% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৬.৫০% ভোট পান।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৮.৯৯%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪২.৫৩%, বিএনপি ৪৪.৪৬%, জামায়াতে ইসলামী 10.৬৯%, জাতীয় পাটি ১.৪১% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৯১% ভোট পান।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৪.৪৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪২.৮২%, ৪দলীয় জোট ৫৬.০৬%, জাতীয় পার্টি ০.৮১%,স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৩১ % ভোট পান।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯৩.০১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৯.৩৫%, ৪ দলীয় জোট ৩৯.৪৬%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ১.১৯% ভোট পান।

সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ): চলনবিল অধ্যুষিত এই আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের ডা. আবদুল আজিজ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন।

আওয়ামী লীগ থেকে আরও মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেনের মেয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হোসনে আরা পারভীন লাভলী, সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এ টি এম লুৎফর রহমান দিলু,আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. হোসেন মনসুর, রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাদী আলমাজি জিন্নাহ, রায়গঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ইমন তালুকদার, রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফ, তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সনজিত কর্মকার ও কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহ-সভাপতি কৃষিবিদ সাখাওয়াত হোসেন সুইট।

বিএনপির থেকে মনোনয়ন চাইবেন চারবারের সাবেক এমপি প্রভাবশালী প্রার্থী আবদুল মান্নান তালুকদার। এ ছাড়া সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আয়নুল হক, তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার সেলিম জাহাঙ্গীর ও বিএনপির কেন্দ্রীয় গ্রাম সরকার বিষয়ক সহ-সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শিশির ।

এছাড়াও ইসলামী আন্দোলন থেকে সিরাজুল ইসলাম, জেলা সহ-সভাপতি গাজী মো. আয়নুল হক ও রায়গঞ্জ উপজেলা সভাপতি মাওলানা মো. ইয়াকুব আলী দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনটি বিএনপির শক্ত ঘাটি। নবম জাতীয় সংসদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ এ আসনটির দখলে নেয়। সেই সূত্রে আওয়ামী লীগ তার সাংগঠনিক অবস্থা সুসংহত করেছে। তবে দলীয় কোন্দলও রয়েছে। বিএনপিতে দলীয় কোন্দল নেই বললেই চলে। জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৬৪তম সিরাজগঞ্জ -৩ আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে লড়াই হবে তুমুল।

বিএনএ/ শিরীন,ওজি,ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ