।। আজিজুল হাকিম।।
বিএনএ, ঢাকা : ‘লকডাউনে রাস্তায় নেই যাত্রী। তবুও বের হইছি। আয় না করলে খামু কি স্যার ? একদিন রিকশা না চালাইলে চুলায় আগুন জ্বলে না। ছেলে সন্তান না খাইয়া থাকে’। আজ শুক্রবার লকডাউনের তৃতীয় দিনে রাজধানীর রামপুরা টিভি সেন্টারের সামনে বেশকিছু রিকশা আটকিয়ে রেখেছে পুলিশ। তাদের একজন কবির হোসেন কান্না কন্ঠে এ সব কথাগুলো বলছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা কি করবো। ঘরে বসে থাকলে তো খাবার দিবে না। আয় না করলে ছেলে-মেয়ে না খেয়ে থাকবে। পুলিশ আমাদের উপর অত্যাচার করছে। তারা তো মাস শেষে বেতন পায়। আর আমরা রিকশার প্যাডেল ঘুরালেই দুই এক টাকা পাই। তা দিয়ে কোনো মতে জীবন চলে’।
এদিকে, কাকরাইল মোড়ে একই চিত্র। পুলিশ রিকশা ধরে উল্টো করে রেখেছে। আর রাস্তার পাশে বসে আছেন রিকশা চালকরা। তারা সবাই মুখ অন্ধকার করে বসে আছেন। সবার চিন্তা কিভাবে রিকশা পুলিশের কাছ থেকে নিবে।
কথা হয় রিকশা চালক সাজ্জাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, পুলিশ স্যারদের পা ধরে ক্ষমা চেয়েছি। কিন্তু তারা রিকশা ছাড়ছে না। রিকশা চালাতে না পারলে চাল কিনতে পরবো না। না খেয়ে থাকতে হবে। গরীব বলেই তো রাস্তায় বের হয়েছি। ঘরে থাকলে খাবার দিবে কে?
আরেক রিকশাচালক সুলতান হাওলাদার বলেন, দিন এনে দিন খাই। এই জীবন। আমার দুই ছেলে অসুস্থ। রিকশা চালিয়ে আয় করতে না পারলে ওষুধ কিনতে পারবো না। সকাল থেকে এসেছি, আমার সন্তানদের খুব জ্বর। ওষুধ কিনতে না পারলে ওরা আরো অসুস্হ হয়ে পড়বে। তাই রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। কি দোষ করলাম? সব গাড়ীতো চলছে আমাদের কি অপরাধ।
তিনি আরো বলেন, পুলিশ স্যারদের কি দয়া হয় না? গরীবের পেটে লাথি মারে। পল্টনে কথা হয় রিকশা চালক সোলায়মানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, করোনার কারণে আয় কমে গেছে। মানুষ আর আগের মত রিকশায় উঠে না। তা ছাড়া লোকজন কম। তাই খুব একটা টাকা পয়সা আয় হয় না। আমাদের তো আর ব্যাংকে কাড়িকাড়ি টাকা নেই যে জমানো টাকা উঠিয়ে চলবো। গত বছর লকডাউনে ২ লাখ টাকা দেনা হয়েছি। সেই টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারি নাই। এভাবে লকডাউন চলতে থাকলে আমার পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে।
শান্তিনগরে রিকশা চালক বশির আহমেদ বলেন, ঘরে খাবার নাই। গাড়ি না চালাইলে খামু কি। গরিবদের খাবার দেওয়ার কেউ নেই। তার পরে পুলিশ যেনে শুনে আমাদের উপর জুলুম চালায়। গত দুই দিন যা আয় করেছি, জমা খরচ নিয়ে অল্প কিছু টাকা ছিলো। তা দিয়ে কোনো মতে চাল-ডাল কিনে ঘরে ফিরেছি।
রাজধানীর শাহবাগ, নীলক্ষেত, কাওয়ানবাজার, প্রেসক্বাব, রামপুরা, মৌচাক, মগবাজার, শান্তিনগর, কাকলাইল, পল্টন, মতিঝিলসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে এসব চিত্র। বের হওয়ার অপরাধে রিকশা রাস্তার পাশে উল্টো করে রেখেছে পুলিশ। করোনা সংক্রমণ রোধে ৮ দিনের বিধিনিষেধের তৃতীয় দিন চলছে আজ শুক্রবার।
পুলিশ বলছে, রাস্তা রিকশা বের হলেই রিকশাসহ চালকদের আটক করা হবে। উপরের নির্দেশ অনুযাযী আমরা কাজ করছি। রামপুরা ব্রিজের ঢালে সারি সারি রিকশা। পাশে বসে আছে চালকরা। তারা বলছেন, পুলিশ গায়ের জোরে রিকশা চালকদের সঙ্গে জুলুম করছে। রিকশা না চালালে খামু কি। না খেয়ে খাকতে হবে।
রিকশা চালিক মনির বলেন, পুলিশকে বলেছি খাবার দেন, ঘর থেকে বের হবো না। ঘরেই থাকবো। গরীবের দু:খ কেউ বোঝে না।
উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত লকডাউন চলছে ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত। এ জন্য রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চেকপোস্ট বসিয়েছেন।
বিএনএনিউজ/ এইচ.এম।