বিশ্ব ডেস্ক : সোমালি জলদস্যুদের হাতে মাল্টিজ-পতাকাবাহী বাল্ক কার্গো জাহাজ রুয়েন এর ১৭ নাবিক ৪ মাস ধরে জিন্মি রয়েছে। মুক্তিপণ না পাওয়ায় তারা জাহাজসহ নাবিকদের জিন্মি করে রেখেছে। তবে গুরুতর অসুস্থতার কারণে একজন নাবিককে মুক্তি দিয়েছে। জাহাজ রুয়েন ও ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ আবদুল্লাহকে একইভাবে জিন্মি করেছে সোমালি জলদস্যুরা। খবর সোমালি মিডিয়া হিরান ডটকম এর।
সোমালি জলদস্যুরা ২০১৮ সাল পর্যন্ত এক দশক ধরে গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক জলপথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আসছিল, কিন্তু গত বছরের শেষের দিকে আক্রমণের পুনরুত্থানের আগ পর্যন্ত তারা গা ঢাকা দিয়ে ছিল।
এডেন উপসাগর এবং ভারত মহাসাগরে ছিনতাই বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর ব্যাপক মহড়ার পর ২০১৮ সাল থেকে রুয়েন জিন্মি ঘটনা ছিল সোমালি জলদস্যুদের জড়িত প্রথম সফল ছিনতাই।
ব্রিটিশ মেরিটাইম সিকিউরিটি ফার্ম অ্যামব্রে গত বৃহস্পতিবার জানায়, রুয়েনের অপহৃত ক্রুদের মুক্তিপণ পরিশোধ করা হয়নি, মিডিয়া রিপোর্ট বলছে যে জলদস্যুরা চিকিৎসার কারণে একজনকে ছেড়ে দেওয়ার পরে ১৭ জন ক্রুকে ধরে রেখেছে।
সোমালিয়ার রাজধানী নাইরোবি থেকে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানায়, সোমালি জলদস্যুরা যারা ডিসেম্বরে মাল্টিজ-পতাকাবাহী বাল্ক কার্গো জাহাজ রুয়েন আটক করেছিল তারা দুই দিন আগে সোমালিয়ার উপকূলে বাংলাদেশের পতাকাবাহী পণ্যবাহী জাহাজটি পুরোপুরি দখলে নিতে জাহাজটিকে ব্যবহার করতে পারে।
ইইউ-এর জলদস্যুতা বিরোধী অভিযান EUNAVFOR অনুযায়ী, ভিজ্যুয়াল তথ্যে দেখা গেছে যে অন্তত ১২ জন সশস্ত্র জলদস্যু জাহাজ আবদুল্লাহর উপরে উঠেছে।
“এটা সম্ভব যে জলদস্যুদের এই ছিনতাই [SIC]-এ অংশ নেওয়ার উত্স MV RUEN-এর মতোই,” এটি বলে, আব্দুল্লাহর ক্রু নিরাপদ বলে জানা গেছে।
মেরিটাইম সিকিউরিটি সেন্টার – হর্ন অফ আফ্রিকা, EUNAVFOR এর পরিকল্পনা ও সমন্বয় কেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্য দেখায় যে, নভেম্বর থেকে এডেন উপসাগর এবং সোমালি উপকূলে ২০ টিরও বেশি হাইজ্যাকিং বা জাহাজ হাইজ্যাক করার চেষ্টা করা হয়েছে৷
ভারতীয় নৌবাহিনী
ভারতীয় নৌবাহিনী জানিয়েছে, এমভি আবদুল্লাহর হাইজ্যাক হওয়ার খবর পেয়ে গত মঙ্গলবারই ভারতীয় নৌবাহিনী দূরপাল্লার মেরিটাইম পেট্রল এয়ারক্র্যাফট এলআরএমপি পি-৮১ মোতায়েন করে। পরে ভারতীয় নৌবাহিনী একটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে। এমভি আবদুল্লাহর অবস্থান শনাক্ত করার পর জাহাজের নাবিকদের অবস্থা নিশ্চিত করার জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেছে এলআরএমপি। তবে জাহাজ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে ভারতীয় নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন এবং জাহাজটি সোমালিয়ার জলসীমায় পৌঁছানো পর্যন্ত কাছাকাছি এলাকায় থেকে নজর রাখে।
এমভি আবদুল্লাহ
গত ৪ মার্চ বাংলাদেশের এস আর শিপিংয়ের ১৩ মিটার গভীরতার জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে রওনা দেয়। এর পর গত মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে খবর আসে, ভারত মহাসাগরে জাহাজটি ছিনতাই হয়েছে।
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে থাকা নাবিকদের মধ্যে চট্টগ্রামের বাসিন্দা আছেন ১১ জন। বাকিরা ফেনী, নোয়াখালী, খুলনা, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার। আক্রান্ত নাবিকদের সবাই সুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন এসআর শিপিংয়ের কর্মকর্তারা।
জাহাজটি ছাড়িয়ে আনতে কাজ শুরু করেছে এসআর শিপিং। এ জন্য সরকার ও আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।
এসআর শিপিংয়ের মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সব সংস্থার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা আমাদের কাজ পরিচালনা করছি। তারা আমাদের যেভাবে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন আমরা সেভাবেই এগোচ্ছি।’
সোমালিয়ার উপকূলে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ ও ২৩ নাবিককে উদ্ধারে ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।
আরও পড়ুন : এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে জলদস্যুদের নতুন দল
এসজিএন