বিএনএ,ঢাকা: দেশের কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে কানাডা পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ভাইস চেয়ারম্যান নাহিদা রুনাইকে গ্রেপ্তার করেছে দুদক। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত এমডি সৈয়দ আবেদ হাসান ও সিনিয়র ম্যানেজার রাফসান রিয়াদ চৌধুরীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) বিকেলে সংস্থার উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বাধীন দুদকের টিম সেগুনবাগিচা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। বিষয়টি নিশ্চিত দুদক পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য করেছেন।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ারের নেতৃত্বে একটি টিম ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ভারপ্রাপ্ত এমডি সৈয়দ আবেদ হাসান ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নাহিদা রুনাই এবং সিনিয়র ম্যানেজার রাফসান রিয়াদ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে। এ বছরের জানুয়ারি মাসে দুদকের দায়ের করা একটি মামলায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিদের বিরুদ্ধে অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পরের সহায়তায় প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির আশ্রয়ে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ভুয়া/অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠান আনান কেমিক্যাল লিমিটেডের নামে জাল রেকর্ডপত্রাদি প্রস্তুত করে তা সঠিক হিসাবে ব্যবহার করে উক্ত অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের মালিককে ভুয়া ঋণ পেতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেন।
সংশ্লিষ্ট ঋণের গ্রহীতা আনান কেমিক্যাল লিমিটেডের পরিচালকরা ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ মাধ্যমে ৭০ কোটি ৮২ লাখ টাকার ভুয়া ঋণের কাগজপত্র প্রস্তুত করে তা সঠিক হিসাবে ব্যবহার করে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড কর্মকর্তা ও বোর্ড সংশ্লিষ্ট সদস্যদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ৭০ কোটি ৮২ লাখ তুলে আত্মসাৎ করেন।
পরবর্তীসময়ে বিভিন্ন লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে ওই অর্থ বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যক্তির হিসাবে স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপন করে পাচার করে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২), (৩) ধারায় অপরাধ করেছেন। এই সব অপরাধে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে নাহিদা রুনাইয়ের সব আর্থিক হিসাব তলব করে ৮০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সকালে এনবিআরের সিআইসি বিভাগ থেকে ওই চিঠি দেওয়া হয়েছে। নাহিদা রুনাই ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
৮০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর দেওয়া চিঠিতে নাহিদা রুনাইয়ের সঞ্চয় হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ হিসাব ও বিদেশি মুদ্রার হিসাব, ক্রেডিট কার্ড, ভল্ট, সঞ্চয়পত্র, ডিপোজিট স্কিম ও বিও (বেনিফিসিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্টসহ সব ধরনের হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে রুনাইয়ের বাবা মফিজুর রহমান ও মা তাহমিনা খানমের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আর ঠিকানা হিসেবে চট্টগ্রামের খুলশী ও ঢাকার রমনার দু’টি ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে হালনাগাদ তথ্য বিবরণী সাত কার্যদিবসের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে ওই চিঠিতে। একইসঙ্গে আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া হিসাবেরও তথ্য চেয়েছে এনবিআর।
জানা গেছে, পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী হিসেবে পরিচিত নাহিদা রুনাইয়ে বাড়ি চট্টগ্রামের খুলশী থানার পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকায়। রুনাইয়ের বাবার নাম মফিজুর রহমান। তিনি চট্টগ্রামে একটি সরকারি দপ্তরে ‘করণিক’ পদে চাকরি করতেন।
নাহিদা রুনাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষে জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় এসে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডে চাকরি পান। চাকরির সুবাদে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয় পি কে হালদারের সঙ্গে। ২০০৯ সাল থেকে রিলায়েন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন পি কে হালদার। ২০১২ সালের দিকে পি কের সঙ্গে পরিচয় রুনাইয়ের। পি কে হালদারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এত বেশি হয়ে যায় যে, তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এসএমই লোন শাখার অফিস এক্সিকিউটিভ থেকে প্রতিষ্ঠান প্রধান পি কে হালদারের বান্ধবী ‘বড় আপা’ হিসেবে পরিচিতি পান তিনি।
২০১৫ সালের জুলাইয়ে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি পদে যোগ দেন পি কে হালদার। পি কে হালদার রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে নাহিদা রুনাইকে নিয়ে আসেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে। দ্রুত সময়ে তাকে ৪ টি পদোন্নতি দিয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট করেন পি কে হালদার।
পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে করা দুদকের পাঁচ মামলায়ও নাহিদা রুনাই অন্যতম আসামি। অর্থ লোপাটে সংশ্লিষ্টতায় দুদকের আসামিদের আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতেও নাহিদা রুনাই এর বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ৭২ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য আছে।
গতকাল সোমবার (১৫ মার্চ) পি কে হালদারের সহযোগী ১২২ জনের ওপর বিদেশ যাওয়ার নিষেধাজ্ঞার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বিএনএনিউজ/মনির