24 C
আবহাওয়া
৩:২৯ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ১৯, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » এম এ জি ওসমানীর ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

এম এ জি ওসমানীর ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

এম এ জি ওসমানীর ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বিএনএ, ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিবাহিনী ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। আজকের এই দিনে ৬৬ বছর বয়সে তিনি লন্ডনের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এম এ জি ওসমানী। তার বাবার নাম খান বাহাদুর মফিজুর রহমান, মাতা জোবেদা খাতুন।

তার পিতৃপুরুষের বাড়ি সিলেট জেলার বালাগঞ্জ থানার বর্তমানে ওসমানীনগর থানার দয়ামীরে। খান বাহাদুর মফিজুর রহমানের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট ছেলে ওসমানী।

পিতার চাকরির সুবাদে জেনারেল ওসমানীর শৈশব-কৈশোর কেটেছে বিভিন্ন জায়গায়। ১৯২৩ সালে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় এবং মাত্র ১১ বছর বয়সে ১৯২৯ সালে আসামের কটন স্কুলে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু করেন তিনি।

১৯৩৪ সালে তিনি অসাধারণ নম্বর পেয়ে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাস করেন। ফলাফলের জন্য প্রিটোরিয়া পুরস্কার লাভ করেন তিনি। মেট্রিক পাস করার পর তিনি আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকেই ওসমানী আইএ ও বিএ পাস করে এমএ ১ম পর্ব শেষ করেন। ইতিমধ্যে তিনি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ফেডারেশন পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন।

কমিশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে যোগ না দিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। ১৯৩৯ সালে জুলাই মাসে ওসমানী ব্রিটিশ ভারতের সেনাবাহিনীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪০ সালের ৫ অক্টোবর তিনি ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমি দেরাদুন থেকে সামরিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মিতে কমিশনপ্রাপ্ত হন। এরপর দ্রুত পদোন্নতি লাভ করে ১৯৪১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ক্যাপ্টেন এবং ১৯৪২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজের সর্বকনিষ্ঠ মেজর হন।

১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ওসমানী ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে লং কোর্স পরীক্ষা দিয়ে উচ্চস্থান লাভ করেন। দেশবিভাগের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। এ সময় তার পদমর্যাদা ছিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল। পরবর্তী সময়ে তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব বাংলার আরো কয়েকটি আঞ্চলিক স্টেশনের দায়িত্বও তিনি সফলতার সঙ্গে পালন করেন। পরবর্তীকালে তিনি ১৪তম পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ৯ম ব্যাটালিয়নের রাইফেলস কম্পানির পরিচালক, (ইপিআর)-এর অতিরিক্ত কমান্ড্যান্ট, সেনাবাহিনীর জেনারেল স্টাফ অফিসার প্রভৃতি দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৫৬ সালে তিনি কর্নেল পদমর্যাদা লাভ করেন এবং সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টারের জেনারেল স্টাফ অ্যান্ড মিলিটারি অপারেশনের ডেপুটি ডিরেক্টরের দায়িত্ব পান। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে তিনি পাকিস্তানের হয়ে যুদ্ধ করেন। পাক-ভারত যুদ্ধ যখন শেষ হয় তখন তার বয়স চল্লিশের ওপরে। ১৯৬৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি অবসর গ্রহণ করেন তিনি।

১৯৭০ সালের জুলাই মাসে তিনি রাজনীতিতে যোগদান করেন এবং ওই বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ থানার সমন্বয়ে গঠিত পাকিস্তানের বৃহত্তম নির্বাচনী এলাকা থেকে তার নিকটতম চারজন প্রতিদ্বন্দ্বীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে জাতীয় পরিষদে জয়লাভ করেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জাতির সংকটময় মুহূর্তে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত হন এবং শত্রুর বিরুদ্ধে মোকাবেলা করার স্বার্থে একটি সেনাবাহিনী, একটি গেরিলা বাহিনী গড়ে তোলেন। চরম বিপর্যয়ের মোকাবেলায় অসম ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি একটি সুশিক্ষিত ও সুসজ্জিত শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধ বিজয়ের দিকে ধাবিত করেন।

জাতির প্রতি তার চরম ত্যাগ ও মহান সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্নেল ওসমানী পিএমসিকে জেনারেল পদে উন্নীত করেন। ১৯৭২ সালের ৭ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়কের পদ বিলুপ্ত হওয়ায় তিনি সামরিক বাহিনী থেকে ছুটি নেন এবং বাংলাদেশ গণপরিষদের সদস্য হিসেবে পরিষদের আসন গ্রহণ করেন।

সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ও আজীবন গণতন্ত্রী জেনারেল ওসমানী ১৯৭২ সালের ১২ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের জাহাজ চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ ও বিমান চলাচল মন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের জন্য একটি সুষ্ঠু নৌপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানী তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুইবার মন্ত্রী হন এবং ১৯৭৪ সালের ১ মে তিনি একযোগে মন্ত্রিসভা ও সংসদ সদস্য পদ থেকে এবং বাকশাল গঠনের বিরোধিতা করে আওয়ামী লীগ থেকেও পদত্যাগ করেন।

১৯৭৫ সালের ২৯ আগস্ট তিনি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদের অনুরোধে প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করলেও ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে পদত্যাগ করেন এবং ১৯৭৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর নিজস্ব রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় জনতা পার্টি’ গঠন করেন।

তিনি ১৯৭৮ এবং ১৯৮১ সালে মোট দুইবার রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট জেনারেল ওসমানী চিরকুমার থেকেও রাজনীতি থেকে তথা জনগণের কল্যাণ থেকে কখনো সরে দাঁড়াননি। আজীবন সংগ্রামী এই মহান বীরের শেষের জীবনে স্বাস্থ্য ভালো যাচ্ছিল না। তার সার্বিক সুচিকিৎসার জন্য তাকে লন্ডন হাসপাতালে পাঠানো হয়।

দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর এই মহান নেতা ১৯৮৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৬৬ বছর বয়সে লন্ডন হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তার ইচ্ছামতো তাকে হযরত শাহজালাল (র.)-এর দরগায় তার মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

এই মহান নেতার সুবিশাল কর্মময় জীবন ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ওসমানী উদ্যান’, ‘ওসমানী মেমোরিয়াল হল’, সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতাল, ‘ওসমানী জাদুঘর’ এবং ওসমানী বিমানবন্দরের নামকরণ তার নামে করা হয়েছে।

বিএনএনিউজ/ বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ