দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোল। জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ এ বন্দর এলাকার বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাধীনতার ৫০ বছরেও গড়ে ওঠেনি সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতাল।
কাগজকলমে ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকলেও তার কোনো অস্তিত্ব নেই। তাই গুরুতর কিছু হলে ৩৮ কিলোমিটার দূরে যশোর শহরে চিকিৎসার জন্য দৌড়াতে হয়। অবশ্য ১১ কিলোমিটার দূরে নাভারণ হাসপাতালেও চিকিৎসা নেন অনেকে।
তবে তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন পাসপোর্টধারী যাত্রী, বন্দর ব্যবহারকারীসহ ও এলাকাবাসীরা। বঞ্চিত হচ্ছে ১ লাখ ২ হাজার পৌর নাগরিক। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে কাস্টমস ও বন্দরে কর্মরত ১০ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী।
ভারতের সঙ্গে এ বন্দর দিয়ে বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য সম্পন্ন হয়। বিভিন্ন খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট বেনাপোল দিয়ে করোনার আগে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত ভারতে যাতায়াত করে এসেছে। বেনাপোলে আছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক বীমা অফিস।
বন্দর ও পৌর এলাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় গুরুতর কিছু হলে যশোর শহরে রোগী নিতে নিতে বেশিরভাগ সময় রোগীর মৃত্যু হয়।
গত ৬ মাসে এ এলাকায় ৭৫টি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে। এতে ১২ জন নিহত ও ৯১ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া বেনাপোল পৌরসভা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় ১৩০ জনের মৃত্যু সনদ দিয়েছে।
বেনাপোল স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিকরা বলেন, বন্দরে একটি হাসপাতাল, একটি অ্যাম্বুলেন্সের কথা বন্দর পরিচালককে একাধিকবার বলা হয়েছে। মালামাল লোড-আনলোড করতে গিয়ে অনেক শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। পঙ্গু হয়ে বাড়িতে অসহায় অবস্থা রয়েছে অনেকে। চিকিৎসা করতে না পেরে অনেকে ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। বন্দর কর্তৃপক্ষের স্বার্থে এখানে একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সম্পাদক আজিম উদ্দিন বলেন, ‘বেনাপোল বন্দর এলাকায় একটি হাসপাতাল খুবই জরুরি। ট্রাকের অনেক চালক দুর্ঘটনায় পড়লে ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্সে করে যশোর হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। পথে অনেকে মারাও গেছেন। এখানে হাসপাতাল হলে বন্দর ব্যবহারকারী প্রতিটি সংগঠনসহ এলাকাবাসী তাদের সেবার জায়গাটা খুঁজে পাবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি, বেনাপোলে দ্রুত একটি আধুনিক মানের হাসপাতাল নির্মাণ করা হোক।’
বেনাপোল মরিয়ম মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক রমজান আলী বলেন, ‘এখানে একটি উন্নতমানের হাসপাতাল হলে শিক্ষার্থীসহ জনগণের সুবিধা হবে। বর্তমানে যে সমস্যা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী একটি হাসপাতাল নির্মাণ করে দিলে সব সমাধান হয়ে হবে।’
বেনাপোল কাস্টম ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ‘দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর বেনাপোল। দুঃখজনক যে, এখানে একটি হাসপাতাল নেই। দেশের একটি বৃহৎ বন্দর, কাস্টমস হাউজ, থানা, পৌরসভার মত স্থাপনা থাকার পরও এখানে কোনো হাসপাতাল নেই। এখানে ৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল দ্রুত নির্মাণের জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’
যশোর সিভিল সার্জন ডাক্তার শেখ আবু শাহীন বলেন, ‘বেনাপোল স্থলবন্দরে শুধুমাত্র করোনার জন্য পাসপোর্টযাত্রী ও ট্রাক ডাইভারদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। বেনাপোলে যদি বড় আকারে একটি হাসপাতাল করা হয়, তাহলে বন্দর ব্যবহারকারীসহ এ অঞ্চলের সকল মানুষের চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। বেনাপোলে একটি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য সুপারিশ করে উচ্চ পর্যায়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’