বিএনএ ডেস্ক : ধামরাইয়ে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মো. আতাউর রহমান (৩৮) নামে এক যুবককে বেধড়ক মারধর করে গ্রাম ছাড়া করার ঘটনা ঘটেছে। এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অপরাধ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য ভুক্তভোগী আতাউরকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মানবন্ধন করেছে অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন ও তার সঙ্গীরা। ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সত্য ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে মাস্টার প্ল্যানে ভুক্তভোগীর বাবা ও আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগী আতাউরের স্ত্রী ঝুমুর বেগম ধামরাই থানায় আনোয়ার হোসেনকে প্রধান আসামি করে ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু মিথ্যা অপবাদের মানববন্ধন নাটকে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়। এরফলে আতাউর রহমান ও তার স্ত্রী গ্রাম ছাড়া হয়ে অসুস্থ শরীরে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়- ধামরাই উপজেলার আমরাইল মধ্যপাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের সাথে দীর্ঘদিন ধরে গোমগ্রামের আতাউর রহমানের সাথে বিরোধ লেগে আছে। সেই বিরোধের জের ধরেই আনোয়ার হোসেন ১৮-২০ জন স্থানীয় সন্ত্রাসী নিয়ে আতাউরের বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায়। লোহার রড দিয়ে আতাউরকে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে। মারধরের এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে সন্ত্রাসীরা ভাবে আতাউর মারা গেছে। তখন আনোয়ার তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে চলে যায়। এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অপরাধ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ঘটনার পরের দিন বৃহস্পতিবার মাদক ব্যবসায়ীর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ভুক্তভোগী আতাউরের বিরুদ্ধে মানবন্ধন করে।
অনুসন্ধানে স্থানীয় এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জানা যায়- আতাউর রহমান একজন মাদক ব্যবসায়ী। তবে উল্লেখিত মারামারির ঘটনা মাদক সংক্রান্ত বিষয়ে হয়নি। আনোয়ার হোসেনকে পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় আতাউরের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। এই সন্ত্রাসী হামলা ও ন্যাক্কারজনক ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য মাদক ইস্যুকে সামনে এনে আতাউরের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করা হয়। যাতে হত্যা চেষ্টার মামলা থেকে রক্ষা পায়।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন প্রায় ২৫ বছর আগে বিয়ে করে। বিয়ের পর সংসার জীবন ভালোই চলছিল তাদের। আনোয়ার বৈবাহিক জীবনে ৪ সন্তানের বাবা হয়। সুখের সংসারে বউ ও চার সন্তান রেখে স্থানীয় এক যুবতীর সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়ে পড়ে সে। পরকীয়ায় আসক্ত হওয়ার পর থেকেই সংসারে অশান্তি দেখা দেয়। রাত দিন ওই যুবতীর বাড়িতে যাওয়া আসা করলে স্থানীয় আতাউর রহমান তাকে বাধা দেয়। এবং বিয়ে করে থাকলে বিয়ের কাগজ দেখাতে বলা হয় আনোয়ারকে। ওই বাড়িতে যাইতে বাধা দেওয়া এবং বিয়ের কাগজ দেখতে চাওয়াকে কেন্দ্র করেই আতাউরের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়।
কোন অপরাধী বা মাদক ব্যবসায়ীকে তার বাড়িতে গিয়ে মারধর করতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী মো: আমিনুর রহমান জানান- আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। যদি কোন ব্যক্তি অপরাধী বা অপরাধ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকে তাহলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শরণাপন্ন হতে পারে। এবং অপরাধীকে আইনের হাতে তুলে দেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে পারে।
ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান বলেন- গোমগ্রামে মারামারি ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ হয়েছে। এবং মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মানববন্ধনও হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
বিএনএ/ ইমরান খান, ওজি