19 C
আবহাওয়া
৬:৪৭ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কক্সবাজারে নৌকার মাঝি দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার

কক্সবাজারে নৌকার মাঝি দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার

কক্সবাজারে নৌকার মাঝি দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার

বিএনএ চট্টগ্রাম: কক্সবাজারের রামু উপজেলার রশিদ নগরের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন চট্টগ্রাম নগরীর দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার মোয়াজ্জেম মোর্শেদ। ২০১৪ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীর ওপর হামলা ও অপহরণের মূলহোতা তিনি। অথচ সেই মোয়াজ্জেম মোর্শেদই কক্সবাজারের নৌকার মাঝি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকেও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা ঝড় ওঠেছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, চট্টগ্রামের এক আতঙ্কের নাম মোয়াজ্জেম মোর্শেদ। তিনি চট্টগ্রাম কলেজ ও মহানগরে শিবিরের দুর্ধর্ষ ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। ওই ক্যাডারের হাতে এক সময় নিয়মিত মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির লোকজন নির্যাতনের শিকার হতেন। তার অত্যাচারে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কলেজেও যেত  না। মোয়াজ্জেমের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি মাহামুদুল করিমকে অপহরণ করে টর্চার সেলে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালায় শিবির ক্যাডাররা।

এ নিয়ে নুরুল আজিম রনির দেয়া ফেসবুক পোস্ট ৮২টি শেয়ার হয়েছে। সেখানে তিনি লিখেছেন, চট্টগ্রাম কলেজে পড়াশুনা করার সময় মোয়াজ্জেম মোর্শেদ ছিলেন শিবিরের দায়িত্বশীল নেতা। কলেজে ছাত্র শিবিরের রাজত্ব চলাকালে মাহমুদুল করিমকে ধরে নিয়ে গিয়ে টর্চার সেলে নির্যাতন চালানো হয়। কলেজ শিবিরমুক্ত হওয়ার পর চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে নিজ জেলা কক্সবাজারে ফিরে যান মোয়াজ্জেম। এরপরই দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার থেকে ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পুনর্জন্ম হয় তার। আর সে পরিচয় গ্রহণের কয়েক বছরের মধ্যেই রামু উপজেলার একটি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনের জন্য নৌকার মনোনয়ন পেয়ে গেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, স্থানীয় নেতারা দুই চার বছরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখে কাউকে পছন্দ করলে—তার কাছে বোন বিয়ে না দিয়ে নৌকার জন্য সুপারিশ করবেন কেন?

চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহামুদুল করিম বলেন, তিনি সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ২০১০ সালে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। সে সময় মোয়াজ্জেম মোর্শেদ চট্টগ্রাম কলেজ শিবির অন্যতম নীতি নির্ধারক ও ক্যাডার ছিলেন। মোয়াজ্জেমের নেতৃত্বে ২০১১ সালের জুলাইতে তাকে তুলে নিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দেয় শিবির ক্যাডাররা। সেখানে প্রচণ্ড মারধর করে বাসার ঠিকানা নেয়া হয়। পরে বাবা-মাকেও হুমকি দেয় মোয়াজ্জেম মোর্শেদ।

মাহামুদুল করিম আরও জানান, ২০১৩ সালে ২৯ অক্টোবর পরীক্ষা দিতে গেলে বিকেল ৫টার দিকে তাকে হল থেকে তুলে নিয়ে যায় মোয়াজ্জেম মোর্শেদ ও তার দলবল। প্রথমে তারা তখন নির্মাণাধীন স্টাফ ভবনে নিয়ে মারধর করে। এরপর সেখানে লোক জমায়েত হতে শুরু করলে  সোহরাওয়ার্দী হলের তখনকার পরিত্যক্ত হিন্দু হোস্টেল নিয়ে আঙুলের নখ তুলে গুরুতর জখম করে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে রাখে বলে জানান এই ছাত্রলীগ নেতা।

কক্সবাজার শহর কৃষক লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক শাহাদাত হোসাইন ফেসবুকে লিখেছেন, রামুর রশিদ নগর ইউনিয়নের নৌকার মাঝি মোয়াজ্জেম মোর্শেদ চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল হককে শিবিরের কর্মীদের নিয়ে হত্যা চেষ্টার উৎসবে মেতেছিলেন। আজ নৌকার মাঝি কেমনে হলো? ধিক্কার জানাই, যারা তাকে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসাইন বলেন, মোয়াজ্জেম মোর্শেদ তার পাশের ইউনিয়নের ছেলে। তিনি অতীতে কখনও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িতে ছিল না। বরং শিবিরের ক্যাডার হিসেবে বিভিন্ন সময়ে কাজ করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু ছাত্রলীগ তাকে গ্রহণ করেনি বলে জানান সাদ্দাম হোসাইন।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে রশিদ নগরের নৌকার কাণ্ডারি মোয়াজ্জেম মোর্শেদ দাবি করেন, তিনি ২০১০ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বের হয়েছেন। এর পরে সেখানে কি হয়েছে তার জানা নেই। মাহামুদুল করিম নামের কাউকেই চেনেনা বলেও জানান তিনি।

মোয়াজ্জেম বলেন, কক্সবাজার কলেজে অনার্স পরার সময় তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির জড়িত হন। কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্রলীগের প্রথম কমিটি তার। এছাড়া ২০১৮ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু আইন ও ছাত্র পরিষদের অ্যাডভোকেট নোমান ও নাজিম কমিটির কক্সবাজার জেলা সভাপতি তিনি। কাজেই একটি মহল তার জয় ঠেকাতেই পরিকল্পিত অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মোয়াজ্জেম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রামুর রশিদ নগরের মঞ্জুর মোর্শেদের ছেলে মোয়াজ্জেম মোর্শেদ ২০১৭ সালে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন অনুষদে ৬ষ্ঠ ব্যাচের ছাত্র হিসেবে ভর্তি হন। তবে সেখানে কখনও  ছাত্রলীগের রাজনীতি করেননি তিনি। কিন্তু জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি আসার পর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসাইনকে খালাত ভাই দাবি করে নিজেকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সংযুক্ত করার চেষ্টা করেন এই শিবির ক্যাডার।

বিএনএনিউজ/আরকেসি

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ