23 C
আবহাওয়া
১১:১৭ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১৯ (মাদারীপুর-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১৯ (মাদারীপুর-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১৯ (মাদারীপুর-২

বিএনএ , ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০শ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে মাদারীপুর – ২ আসনের হালচাল।

মাদারীপুর – ২ আসন 

মাদারীপুর – ২ সংসদীয় আসনটি মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর, ঝাউদি, ঘটমাঝি, মোস্তফাপুর ও কেন্দুয়া ইউনিয়ন ব্যতীত এবং রাজৈর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২১৯ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আব্দুর রাজ্জাক বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬০ হাজার ২ শত ৮৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩২ হাজার ৫ শত ২৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুর রাজ্জাক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬১ হাজার ৫ শত ৩২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাসদের শাহজাহান খান । মশাল প্রতীকে তিনি পান ৩০ হাজার ১ শত ৫৬ ভোট ।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মাহবুব আহমেদ (মিলন) কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি,প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির মাহবুব আহমেদ (মিলন) কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শাহজাহান খান বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬ শত ৭৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শাহজাহান খান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৯২ হাজার ৪ শত ৯২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির কাজী মাহবুব আহমেদ । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৫ হাজার ৩ শত ৯৭ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শাহজাহান খান বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৭ হাজার ৮ শত ১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৮ হাজার ১ শত ৯৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শাহজাহান খান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সিরাজুল ইসলাম ভুঁইয়া। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৬ হাজার ২ শত ৩৪ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শাহজাহান খান বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬৭ হাজার ৩ শত ৩৭ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১৭ হাজার ১ শত ৬৩ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শাহজাহান খান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৮০ হাজার ৫ শত ২০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির হেলেন জেরিন খান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৮ হাজার ২ শত ৩৯ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শাহজাহান খান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শাহজাহান খান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শাহজাহান খান বিজয়ী হন 

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৪৭ হাজার ২ শত ৩০ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ১৯ হাজার ৮ শত ৮৪ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের শাহজাহান খান, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মিল্টন বৈদ্য, সিংহ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আল আমিন মোল্লা, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের লোকমান হোসেন এবং গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির আসাদুজ্জামান আকন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শাহজাহান খান বিজয়ী হন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩ লাখ ১১ হাজার ৭ শত ৪০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মিল্টন বৈদ্য । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ২ হাজার ৫ শত ৮৮ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়,শুধুমাত্র ষষ্ঠ সংসদে বিএনপি ,পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ,নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর মাদারীপুর -২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, মাদারীপুর -২ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫০.৯২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৬.৪৩%, বিএনপি ১১.৬৫%, জাতীয় পাটি ৭.৪৫%, জামায়াত ইসলামী ৪.৮০%স্ব সতন্ত্র ও অন্যান্য ২৯.৬৭% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৮.৮২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৬৩.৪৯%, বিএনপি ১৭.৪৩% জাতীয় পাটি ১১.৬৯%, জামায়াত ইসলামী ১.৯২% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫.৪৭% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৭.৭৫ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৭৩.৯১%, ৪ দলীয় জোট ২৪.৫৭%, জাতীয় পাটি ১.২৯%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.২৩% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮১.২৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৮৩.১৩%, ৪ দলীয় জোট ১৩.০০% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.৮৭% ভোট পায়।

মাদারীপুর-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান খান। তার মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত। তবে এবার এই আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম মনোনয়ন চাইতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে।

এ ছাড়া মনোনয়ন চাইবেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও তৎকালীন মাদারীপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত হাজি আনোয়ার ফরাজীর ছেলে মো. সাহাবুদ্দিন ফরাজী।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন একাদশ জাতীয় সংসদের প্রার্থী কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও মাদারীপুর জেলা বিএনপির সদস্য মিল্টন বৈদ্য, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, মাদারীপুর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহান্দার আলী জাহান।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে জানা যায়, মাদারীপুর- ২ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান রয়েছে। এখানে বরাবরই বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন শাহজাহান খানের বাবা প্রয়াত মৌলভি আছমত আলী খান। পরবর্তীতে এই আসন থেকে তিনি একনাগাড়ে সাতবার আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন । তিনি নানা উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে রাজৈর ও মাদারীপুরের চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। বিশেষ করে গত ১৫ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন দৃশ্যমান। একদিকে সাংগঠনিক শক্তি, অন্যদিকে উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে এই আসনে আওয়ামী লীগ জনগণের আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা নড়বড়ে। দলীয় কর্মসূচী পালিত হয় বিবৃতি ও প্রেসরিলিজের মাধ্যমে। আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনকে ঘিরে এলাকায় বিএনপির তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। তাছাড়া বিএনপিতে জনপ্রিয় নেতা সংকট রয়েছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২১৯তম সংসদীয় আসন (মাদারীপুর-২) আসনটিতে আওয়ামী লীগ আবারও বিজয়ী হবে এমন নিশ্চয়তা দেয়া যায়।

বিএনএ/ শাম্মী, রেহানা, ওজি,ওয়াইএইচ

আরও পড়ুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১৮ (মাদারীপুর-১)

Loading


শিরোনাম বিএনএ