31.3 C
আবহাওয়া
১২:৫৮ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বঙ্গবন্ধু একটি মানচিত্র, একটি আদর্শ

বঙ্গবন্ধু একটি মানচিত্র, একটি আদর্শ


।।মিজানুর রহমান মজুমদার।।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু একটি নাম নয়। একটি মানচিত্র, একটি আর্দশ, একটি স্বাধীনতার নাম! বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না। বাঙ্গালি জাতির আলাদা মর্যদা থাকতো না। নিজ দেশে পরবাসী হয়ে থাকতে হতো। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাগারে বন্দি ছিলেন।

১৯৩৯ সালে মিশনারি স্কুলে পড়ার সময় থেকেই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন মূলত শুরু হয়েছিল । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৪০ সালে নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। ১৯৪২ সালে এন্ট্রান্স পাস করার পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন।

১৯৪৩ সালে তিনি বেঙ্গল মুসলিম লীগে যোগ দেন বাঙালি মুসলিম নেতা আবুল হাসিম হুসেইন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসেন। ১৯৪৩ সালে তিনি বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

১৯৪৭ সালে অর্থাৎ দেশবিভাগের বছর মুজিব কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। ভারত ও পাকিস্তান পৃথক হওয়ার সময়ে কলকাতায় ভয়ানক হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা হয়। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মুসলিমদের রক্ষা এবং দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতায় শরিক হন।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলে পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালি জাতির ওপর শোষণ, জুলুম, নির্যাতন আর নিপীড়ন চালাতে থাকে। বঙ্গবন্ধু এর শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার লক্ষ্যে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরের বছরই ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন।

৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২-এর শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ৬৬-এর ঐতিহাসিক ছয় দফা উপস্থাপন, ৬৮-এর আগরতলা মামলা প্রতিহতকরণ, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান- এসবই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু এক ঐতিহাসিক, অবিস্মরণীয় ভাষণ প্রদান করেন। সেই ভাষণে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৭ কোটি বাঙ্গালি ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেন।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে এসে বঙ্গবন্ধু ব্যস্ত হয়ে পড়লেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে। একদিকে সংবিধান প্রণয়ন, মন্ত্রিসভা গঠন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়; অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণ, ভারতীয় সেনা বিদায়, ঘাতক-দালালদের বিচারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব রাজনৈতিক কাজ।

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কুচক্রী মহল তখনো চাইছে দেশটি স্বাধীন হিসেবে না থাকুক অথবা তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হোক। এত কিছুর পরও এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট থেকে ১০৮৪.৩৭ কোটি টাকার বাজেট প্রদান করেছেন।

স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরে বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশের স্বীকৃতি আদায় করেন। সেই সঙ্গে জাতিসংঘ, জোট নিরপেক্ষ সংস্থা, কমনওয়েলথ, ওআইসি, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক, আইএমএফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য পরিষদসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বঙ্গবন্ধুকে বিশ্বশান্তি পরিষদ জুরিও কুরি পদকে ভূষিত করে।

অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য- এই মৌলিক অধিকারগুলো পূরণের মাধ্যমে বাংলার মানুষের উন্নত জীবন প্রতিষ্ঠাই ছিল তার আদর্শ। বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং বাঙালি জাতি যেন একটি শোষণমুক্ত একটি সমাজ ব্যবস্থায় বসবাস করতে পারেন- এটাই তার সারা জীবনের স্বপ্ন।

কিন্তু পরাজিত শত্রুরা স্বাধীনতার মহানায়ককে সরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে আবারও গোলাম বানানোর নীলনকশায় মেতে ওঠে । কিছু কাছের মানুষের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের প্রথম প্রহরেই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙ্গালি শেখ মুজিব এবং তার পরিবারের ১৯ জন সদস্যকে হত্যা করে।কতিপয় দেশদ্রোহী সেনা সদস্য । এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শেকড় উপড়ে ফেলার নীল নকশা। কিন্তু ঘাতকদের এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে তারাই এখন ইতিহাসের আস্তাকুড়ে।

বঙ্গবন্ধু শুধু একজন জাতীয় নেতাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন ইতিহাসের এক মহানায়কও। যে কারণে ২০০৪ সালে বিবিসি এক বিশ্বজরিপে তাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে ঘোষণা করে। কালপরিক্রমায় বঙ্গবন্ধু এখন বিশ্ববন্ধুতে পরিণত হয়েছে।

Loading


শিরোনাম বিএনএ