25 C
আবহাওয়া
৯:২৩ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ১৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কালের সাক্ষী ধানমণ্ডি ৩২

কালের সাক্ষী ধানমণ্ডি ৩২

ধানমন্ডি ৩২

বিএনএ ডেস্ক: ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি সাধারণ কোনো বাড়ি নয়, রাজনৈতিক স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক এক বাড়ি। এই বাড়িতে সপরিবারে বসবাস করতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু এই বাড়িতে বসেই নেতাকর্মীদের সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনায় বসতেন। জনগণের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখতেন। এই বাড়িতেই সপরিবারের নিহত হয়েছেন তিনি। ৩২ নম্বরের বাড়ি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

১৯৭৫ থেকে ২০২২। ৪৭ বছর পেরিয়ে গেছে। এখনো বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জড়িত ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের সেই বাড়িটি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখন আর এটি বসবাসের বাড়ি নয়। রূপ দেওয়া হয়েছে জাদুঘর হিসেবে। বর্তমানে ভবনটির সামনে একটি টিকেট কাউন্টার করা হয়েছে। সেখান থেকে মাত্র ৫ টাকার টিকেট কেটে সর্বসাধারণ প্রবেশ করতে পারেন জাদুঘরে। তবে কোনো ধরণের ছবি তোলা বা ভিডিও করার অনুমতি নেই। ভবনে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবাসিক ভবন৷ যেখানে সপরিবারে বসবাস করতেন তিনি।

ভবনের নিচ তলায় অভ্যর্থনা কক্ষ। সেখানে সাজানো গোছানো অবস্থায় রয়েছে সোফা ও টেবিল। পাশের একটি কক্ষ ও বসার ঘরে রয়েছে বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে বঙ্গবন্ধুকে পাঠানো বিভিন্ন উপহার। রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহার করা চেয়ার-টেবিল, বিভিন্ন বই। নিচেতলা থেকে উপরে তলার উঠার আগেই বঙ্গবন্ধুর পরিবারের খাবার টেবিল। গত ৪৭ বছর আগে সেই টেবিলে বসে জাতির জনক তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খাওয়া দাওয়া করতেন। টেবিলে সাজানো আছে প্লেট, বাটি, চামচসহ সব কিছু।

টেবিলের পাশেই একটি বকুল গাছের শিকড়। গাছটি বঙ্গবন্ধুর রোপন করা ছিল। সেই গাছের শিকড়টিকে কাঁচের ফ্রেমে স্মৃতি হিসেবে রাখা হয়েছে। ভবনের প্রথম তলা থেকে দ্বিতীয় তলায় ওঠার সিঁড়ি এখন বন্ধ। ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ওঠা-নামার জন্য নতুন করে সিঁড়ি সংযোজন করা হয়েছে। সে সিঁড়ি দিয়ে উঠলেই চোখে পড়ে বঙ্গবন্ধুর কক্ষ। পাশে শেখ জামাল, শেখ রেহানার ঘর। প্রতিটি ঘরেই সকল বাসভাবপত্র আগের মতই রাখা আছে। তবে সেখানে স্পষ্ট হয়ে আছে ঘাতকের ছোড়া গুলির চিহ্ন।

দ্বিতীয় তলা থেকে নিচ তলায় নেমে যাওয়া সিঁড়িতেই গুলি করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে। সেখানে তাঁর পেটে ও বুকে মোট ১৮টি গুলি করা হয়। এছাড়া সেনারা ঘরের বিভিন্ন দিকে যে এলোমেলো গুলি করেছিল, সে চিহ্নও বর্তমান। ভবনের দ্বিতীয় তলায় ২০টি গুলির চিহ্ন দেখা যায়। সিঁড়িতে গুলির চিহ্ন ৯টি। আর তৃতীয় তলায় একটি। হয়ত আরও অনেক জায়গাতেই সেই গুলির চিহ্ন রয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর এই ভবনের সিঁড়িতে এখনো রয়েছে তার রক্তের দাগ। যা সিঁড়িতে কাঁচের ফ্রেম দিয়ে বাঁধাই করে রাখা হয়েছে।

ভবনের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে একটি খোলা বারান্দা। সেখানে অবসর সময়ে বসতেন জাতির জনক। সেখান থেকেই তার কাছে আসা নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে হাত নাড়তেন। নানা নির্দেশনা দিতেন বঙ্গবন্ধু। তিন তলা ভবনের তৃতীয় তলায় শেখ কামালের ঘর ছিল। শেখ কামাল ও তাঁর স্ত্রীর একটি বড় ছবি, তাদের ব্যবহার করা খাট, অন্যান্য আসভাবপত্র এখনো সেখানে রয়েছে। ঘরের এক কোণে রয়েছে একটি সেতার ও তবলা। শেখ কামালের ঘরের পাশেই বঙ্গবন্ধুর আবাসিক কার্যালয়। সেখানে চেয়ার-টেবিলের পাশাপাশি বিভিন্ন বই ও উপহার দেখা যায়।

ভবনের পেছনের অংশে রয়েছে রান্না ঘর। মূল ভবন থেকে রান্না ঘরে যেতে একটি সিঁড়ি আছে। সেই সিঁড়ি ধরেই বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব রান্না ঘরে যেতেন। রান্না ঘরের পাশেই কবুতরের ঘর। সেখানে এখনো রয়েছে অনেক কবুতর। নেই সেই কবুতরগুলোর মূল পালনকারীরা। বঙ্গবন্ধু ভবনের পেছনের দিকে নতুন একটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহার করা চশমা, গুলিবিদ্ধ বই থেকে শুরু করে নানা কিছু সংরক্ষিত রয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের সংবিধানও রাখা হয়েছে এই জাদুঘরে। এছাড়া মহান মুদ্ধিযুদ্ধের সময়কালের বিভিন্ন ছবিও দেখা যায় সেখানে। রাখা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের বিভিন্ন পত্রিকার অংশ বিশেষ।

৭ই মার্চ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সময়ের ছবি, বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানদের সঙ্গে ১৯৭১ সালের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ের জাতির জনকের নানা কার্যাক্রমের ছবি সংরক্ষণ করা হয়েছে জাদুঘরটিতে।

বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ