24 C
আবহাওয়া
১০:৪৮ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » এমপি হতেই মিন্টুর ছকে আনার খুন!

এমপি হতেই মিন্টুর ছকে আনার খুন!

এমপি হতেই মিন্টুর ছকে আনার খুন!

বিএনএ, চট্টগ্রাম: যার কথা এতক্ষণ শুনলেন, তিনি ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। তার পাশে রয়েছেন কলকাতায় খুন হওয়া সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের কন্যা ডরিন। মিন্টুর কথা শুনে যে কারও মনে হতে পারে আনার হত্যায় তিনি গভীর শোকাহত! আনার হত্যায় মিন্টু কী কষ্টই না পেয়েছেন? দেশের ডিবি পুলিশের প্রতি তিনি বেশ আস্থাশীল।

কথায় আছে ‘সর্ষের মধ্যে ভূত।’ আদিকালে ভূতে ধরা বা ভূতের আছর থেকে মানুষকে চিকিৎসার জন্য ওঝাঁ বা কবিরাজ সরিষা ব্যবহার করতেন। কিন্তু কখনও যদি সরিষার মধ্যে কোন ত্রুটি থাকে তা হলে ভূত তাড়ানো যায় না। তবে ওঝা যদি জাঁদরেল হয় সরিষায় থাকা ভূতকেও বোতল বন্দি করতে সক্ষম হন। ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশ কতটা জাঁদরেল ওঝা তার প্রমাণ ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু নিশ্চয়ই ইতোমধ্যে টের পেয়েছেন!

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা চাউর হওয়ার পরপরই আলোচনায় আসে নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের রহস্য কী। কার হাত রয়েছে? কে নির্দেশদাতা? কে কিলারদের অর্থের জোগান দিয়েছে? এই নিয়ে ডিবি পুলিশের মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও গভীরভাবে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান করেছেন এবং করছেন। পাশাপাশি সারাদেশের মানুষের মধ্যে কৌতুহলের অন্ত নেই।

তিনবারের এই এমপি, প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীকে কলকাতায় নিয়ে হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে তদন্ত কর্মকর্তাদের কিছুটা সময় লাগলেও এখন পুরো বিষয়টা খোলাসা হয়ে গেছে। ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবু এবং আনারের হত্যায় সরাসরি জড়িত কিলার শিমুল ভূঁইয়ার ১৬৪ ধারায় আদালতে দেওয়া জবানবন্দি এই হত্যাকাণ্ডের জট খুলে দিয়েছে।
ডিবি পুলিশ অনেকটা নিশ্চিত হয়, আনার হত্যার আরেক মাষ্টার মাইন্ড ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। তিনি এই হত্যাকান্ডটি কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবু ও আনারের বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহীনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছেন। উচ্চ বিলাসী সাইদুল করিম মিন্টু, গ্যাস বাবুর সঙ্গে ২ কোটি টাকার চুক্তি করেছিলেন। এর মধ্যে ২০ লাখ টাকা অগ্রীম প্রদান করেন। তাদের মধ্যে দফায় দফায় একাধিক বৈঠক হয়। উদ্দেশ্য, মিন্টু জাতীয় সংসদে ঝিনাইদহ ৪ আসনের সংসদ সদস্যের আসনে বসবেন। সে কারণে কিলার শিমুল ভূঁইয়া আনারকে হত্যার পর মুখে কস টেপ লাগানো হাত পা চেয়ারের সঙ্গে বাঁধা আনারের নগ্ন ছবি তুলে তা গ্যাস বাবুর কাছে হোয়াটঅ্যাপ নম্বরে পাঠায়। গ্যাস বাবু ছবি পাওয়ার পর মিন্টুর কাছে বাকী ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা দাবি করে। ওই টাকা দেওয়ার জন্য গত ২৩ মে তারিখও নির্ধারণ হয়।

কিন্তু তার আগেই কিলার শিমুল ভূইয়া ও হানি ট্র্যাপার শিলাস্তি রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর দৃশ্যপট বদলে যায়। মাষ্টার মাইন্ড ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু কাজী কামাল আহমেদ প্রকাশ গ্যাস বাবুকে পরার্মশ দেয় তার ২টি মোবাইল যেন তাকে জমা দেয় এবং হারিয়ে গেছে মর্মে সাধারণ ডায়েরি করে। আর এই সাধারণ ডায়েরির সূত্র ধরে সরিষার ভিতরে থাকা ভূত ধরা পড়ে যায়। গ্রেপ্তার হন কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবু ও সাইদুল করিম মিন্টু। গ্যাস বাবু ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যাকান্ডের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে। তিনি বলেছেন, মিন্টুর ছকে হত্যা করা হয় আনারকে।

গ্যাস বাবু স্বীকার করেছেন, আনার হত্যাকাণ্ডের মূল ঘাতকের সঙ্গে মিটিং এবং একাধিকবার দেখা করেছেন তিনি। আখতারুজ্জামান শাহীনের পক্ষে কাজ করেছেন শিমুল ভূঁইয়া, অন্যদিকে সাইদুল করিম মিন্টুর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন গ্যাস বাবু।

এর আগে শিমুল ভূঁইয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে বলেছেন, আনারকে চোরাচালানে প্রলুব্ধ করে আখতারুজ্জামান শাহিন মিন্টুর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার কথা বলেন। আনার হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য টাকাও চেয়েছেন। মাস্টার মাইন্ড সাইদুল করিম মিন্টু এখন ডিবিতে রিমান্ডে আছে। এখন অপেক্ষা তার ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির।

প্রসঙ্গত, ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে ২০০৯ সালে উপজেলা নির্বাচন করে জামায়াত প্রার্থীর কাছে হেরেছিলেন মিন্টু। তবে ২০১১ সালে তার ভাগ্য খুলে যায়। ওই বছর ঝিনাইদহের পৌর মেয়র নির্বাচিত হন। এর পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সদর উপজেলার পাগলাকানাই ইউনিয়ন ও সুরাট ইউনিয়নের সঙ্গে পৌরসভার সীমানা জটিলতা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রায় ১১ বছর পৌরসভার নির্বাচন বন্ধ থাকে। সেই সুবাদে টানা প্রায় ১২ বছর পৌর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন মিন্টু। এ সময় জেলার রাজনীতির শীর্ষ পদে বসার পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে তার সম্পদ।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনারের বিপক্ষেও কাজ করেছিলেন। এমপি পদে মনোনয়ন ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে আনারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছিল। সর্বশেষ সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হতে চেয়েছিলেন আনার, কনক কান্তি দাস এবং মিন্টু। ভোটাভুটি ছাড়াই মিন্টুকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়।

বিগত পৌর, জেলা পরিষদ ও সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান ছিল মিন্টুর। এসব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা পরাজিত হন। সব মিলিয়ে কলকাতায় পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের শিকার সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের সঙ্গে সাইদুল করিম মিন্টুর সর্ম্পক ছিল সাপে নেউলে।

বিএনএনিউজ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী/ বিএম/এইচমুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ