16 C
আবহাওয়া
৫:২০ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » পদ্মা সেতুতে বদলে যাবে অর্থনীতি

পদ্মা সেতুতে বদলে যাবে অর্থনীতি

পদ্মা সেতু

বিএনএ, ঢাকা: পদ্মা সেতু এখন বাস্তবতা। দেশের সবচেয়ে বড় নদীর ওপর সড়ক ও রেল সেতু নির্মিত হয়েছে। আগামী ২৫ জুন চালু হবে সেতুটি।নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু। আর এই সেতুর কারণে অর্থনীতির দ্বার খুলছে ফরিদপুরসহ দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের। এতোদিন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলাকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল পদ্মা। উন্নয়নের সামনে যে পদ্মা এতোকাল দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেখানে বাস্তবে রূপ নিচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। পায়রা ও মংলাবন্দর, বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এতে কেবল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতিই বদলে যাবে।

কেবল তো চলাচলের সেতু নয় এটি। এ সেতু দক্ষিণবঙ্গে নিয়ে যাবে গ্যাসের সরবরাহ। এতে শিল্প-কারখানা পাবে প্রয়োজনীয় জ্বলানি। তাই বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে এখন জমি কেনার হিড়িক পড়েছে। সংশ্লিষ্ট ২১ জেলায় জমির দাম বাড়ছে হুহু করে। সরকারও বসে নেই, শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় তৈরি হচ্ছে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী। এতে প্রায় ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ১ হাজার ৯১১ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করছে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড। এতে ৮ হাজার ৬৪টি তাঁতশেডে সমপরিমাণ তাঁতি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কাজ করবেন।

আশা করা হয়েছে, এখানে বার্ষিক উৎপাদন হবে ৪ দশমিক ৩১ কোটি মিটার কাপড়। এভাবে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তারাও শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগ করবেন। ফলে এলাকায় প্রচুর নতুন কর্মসংস্থান হবে।

খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোংলা বন্দর আরো গতিশীল হবে। ব্যবসায়ীরা আমদানি ও রপ্তানিতে উৎসাহ পাবেন। একই সঙ্গে পায়রা বন্দরের গুরুত্বও বাড়বে। আধুনিকায়ন হলে পায়রা বন্দর ভবিষ্যতে এক বৃহত্তম বন্দরে পরিণত হবে। এমনকি ভুটান, পূর্ব নেপাল ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব রাজ্যগুলো পায়রার মাধ্যমে পণ্য আমদানিতে উপকৃত হবে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, পদ্মা সেতু কেবল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতির চেহারা বদলে দেবে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণায় বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সড়ক ও রেলপথের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলকে কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ ও রপ্তানি বাড়াতে সহায়তা করবে।

সরকারের হিসাব অনুযায়ী, ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশে সার্বিক জিডিপির সঙ্গে পদ্মা বহুমুখী সেতু ১ দশমিক ২৩ শতাংশ জিডিপিতে অবদান রাখবে। আর প্রতি বছর দারিদ্র্য নিরসন হবে শূন্য দশমিক ৮৪ ভাগ। এর মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার প্রায় ৬ কোটি মানুষের ভাগ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। অর্থনীতিবিদদের মতে, সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা গেলে ভবিষ্যতে দেশের মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার আরো বাড়বে।

গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জিডিপিতে অবদান রাখার পাশাপাশি পদ্মা সেতুর মাধ্যমে যোগাযোগ, পরিবহন, বিপণন দ্রুততর হবে। এ কড়িডোরের বিভিন্ন জায়গায় প্রস্তাবিত ১৭টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন, বিনোদন কেন্দ্র, পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠবে। গড়ে উঠবে বিভিন্ন ধরনের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এগুলো জিডিপিতে এক ধরনের উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।

তিনি বলেন, এ সেতুর মাধ্যমে এশিয়ান হাইওয়ে, উপআঞ্চলিক এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার একটি উল্লেখযোগ্য হাব তৈরি হবে। এর মাধ্যমে মোংলা এবং পায়রা বন্দরে সংযোগ স্থাপনের ফলে নেপাল, ভুটান ও ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি সহজ হবে। এতে প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। যার অবদানও জিডিপিতে যুক্ত হবে। শুধু টোল সংগ্রহ নয়, পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বহুমাত্রিক এবং বহুমুখী অবদান রয়েছে বলে মনে করেন এ অর্থনীতি গবেষক।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র গবেষক এম আসাদুজ্জামান বলেন, কৃষকের উৎপাদিত পণ্য দ্রম্নত ভোক্তাদের কাছে কম খরচে পৌঁছাবে। বদলে যাবে কৃষিতে উন্নত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবনমান। সেতুটি দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে আঞ্চলিক বাণিজ্য সমৃদ্ধ হবে, কমবে মানুষ ও পণ্য পরিবহণের সময় ও অর্থ। এ সেতুর মাধ্যমে শিল্পায়ন ও বাণিজ্যিক কর্মকান্ড প্রসারের লক্ষ্যে পুঁজির জোগান বাড়বে।

বিএনএ/এমএফ

Loading


শিরোনাম বিএনএ