বিএনএ, কক্সবাজার : সেন্টমার্টিন থেকে যাত্রী নিয়ে ফেরার পথে এমভি পারিজাত ও এসটি সুকান্ত নামে দুটি জাহাজ সাগরের মাঝামাঝি এসে দমকা হাওয়া ও তীব্র ঢেউয়ের কবলে পড়ে দুলতে থাকলে পর্যটকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করে৷ দুটি জাহাজে প্রায় ৭০০ যাত্রী ছিল বলে জানা গেছে।
এসময় জাহাজে থাকা শিশু, নারী ও পুরুষ পর্যটকেরা বমি ও আতংকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলের দিকে সেন্টমার্টিন জেটিঘাট থেকে এমভি পারিজাত ও এসটি সুকান্ত জাহাজ দুটি টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় । এর আগে মঙ্গলবার সকালে জাহাজ দুটি টেকনাফের দমদমিয়া বিআইডব্লিউটিএ এর জাহাজ ঘাট থেকে প্রায় সাতশো যাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিন গিয়েছিলেন ।
সোমবার ও মঙ্গলবার সকালে দ্বীপে বেড়াতে যাওয়া পর্যটক সেন্টমার্টিন জেটিঘাট থেকে ছেড়ে আসার ২০ মিনিটের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে ঢেউয়ের কবলে পড়লে পর্যটকেরা কান্নাকাটি ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এসময় অনেকেই বমি করার পাশাপাশি লাইভ জ্যাকেট পড়ে সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা করতে থাকেন।
এসটি সুকান্ত জাহাজের যাত্রী সোমেন শর্মা বলেন, বড় একটি দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। জাহাজটি যদি ডুবে যেতো কোন যাত্রী প্রাণে রক্ষা পেতেন বলে মনে হয়না। খুবই ভীতিকর একটি জার্নি ছিল। তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যতে সেন্টমার্টিন যাবো কিনা ভাবতে হবে।
এমবি পারিজাত জাহাজে থাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, জাহাজটিতে প্রায় তিন শতাধিক পর্যটক ছিল। সেন্টমার্টিন জেটি থেকে ছেড়ে আসার ২০ মিনিটের মধ্যেই বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়লেই জাহাজটি দুলতে থাকে। এই সময় জাহাজে থাকা শিশু, নারী ও পুরুষদের অনেকে কান্নাকাটি ও বমি করেন।
তিনি আরো বলেন, এই জাহাজে আমাদের ৩৭জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছিলেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তবে আল্লাহর রহমত বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে পর্যটকেরা রক্ষা পেয়েছেন। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে জাহাজটি টেকনাফের দমদমিয়া ঘাটে পৌঁছালে পর্যটকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। এরপর পর্যটকরা স্ব-স্ব উদ্যোগে নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
এসটি সুকান্ত জাহাজের ব্যবস্থাপক বাহাদুর হোসাইন বলেন, সেন্টমার্টিন থেকে ফিরে আসা প্রতিটি জাহাজই আজকে ঢেউয়ের কবলে পড়ে। সাগরে প্রচন্ড ঢেউ ও বাতাসের কারণে এমন হয়েছে।
তিনি বলেন, জাহাজে নির্ধারিত সীটের বাইরে অতিরিক্ত কোনো যাত্রী নেয়া হয়নি। পরিস্থিতি একই থাকলে আমরা আগামীকাল থেকে চেষ্টা করবো ছোট জাহাজগুলো না নামিয়ে বড় জাহাজ চলাচল করার জন্যে ।
এদিকে এমভি পারিজাত টেকনাফের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সোহেলের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, সেন্টমার্টিন রুটে চলাচলকারী অধিকাংশ জাহাজই ফিটনেস বিহীন। কেউ হাইকোর্টের আদেশে কেউ ক্ষমতার দাপটে পর্যটকদের মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলে বানিজ্য করে যাচ্ছে । এমনকি নদীর জাহাজ সমুদ্রে চলছে এধরনের জাহাজও রয়েছে সেন্টমার্টিন রুটে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ টেকনাফের উপ-পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম বলেন, দমকা হাওয়ার কবলে পড়ে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে পড়লে জাহাজটি হেলে-দুলে দুলতে থাকে। এতে করে পর্যটকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: কামরুজ্জামান জানান, আজকে বাতাস ছিল তাই বঙ্গোপসাগরে সমস্যায় পড়েছিল জাহাজ । পরে স্বাভাবিক হয়ে নিরাপদে টেকনাফ ঘাটে পৌছে। এখবর পাওয়ার পর সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখা হয়েছে।
বিএনএনিউজ/ এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন/এইচ.এম।