জনগণ চারদিকে অন্ধকার দেখছিল। তাদের একমাত্র ভরসা ছিল শহীদ সাহেব দেশে ফিরে আসবেন এবং পাকিস্তানের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব নিবেন।
আজ প্রকাশিত হলো পর্ব : ৩৪৩
আমাদের নেতারা কি পরামর্শ শহীদ সাহেবকে দিয়েছিলেন জানি না, তবে শহীদ সাহেব ভুল করলেন, লাহোর ও ঢাকায় না যেয়ে, দেশের অবস্থা না বুঝে মন্ত্রিত্বে যোগদান করে। কৃষক শ্রমিক দলের নেতারা যাই বলুক না কেন, ঢাকায় এসে যদি যুক্তফ্রন্ট পার্টির সভা ডাকতে বলতেন এবং সদস্যদের সাথে পরামর্শ করে তারপর কোনো কিছু করতেন তা হলে কারও কিছু বলার থাকত না। জনগণের চাপে কৃষক শ্রমিক দলের নেতারা তাঁকে সমর্থন করতে বাধ্য হত।
জনগণ চারদিকে অন্ধকার দেখছিল। তাদের একমাত্র ভরসা ছিল শহীদ সাহেব দেশে ফিরে আসবেন এবং পাকিস্তানের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব নিবেন। আমরা জেলের ভিতরে বসে খুবই কষ্ট পেলাম এবং আমাদের মধ্যে একটা হতাশার ভাব দেখা নিল। আমি নিজে কিছুতেই তাঁর আইনমন্ত্রী হওয়া সমর্থন করতে পারলাম না। এমনকি মনে মনে ক্ষেপে গিয়াছিলাম। অনেকে আমাকে অনুরোধ করেছিল শহীদ সাহেব রোগমুক্ত হয়ে ফিরে এসেছেন দেশে, তাঁকে টেলিগ্রাম করতে। আমি বলে দিলাম “না, কোন টেলিগ্রাম করব না, আমার প্রয়োজন নাই।”
রেণু টেলিগ্রাম পেয়েছে। আব্বার শরীর খুবই খারাপ, তাঁর বাঁচবার আশা কম। ছেলেমেয়ে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে রওয়ানা করবে আব্বাকে দেখতে। একটা দরখাস্তও করেছে সরকারের কাছে, টেলিগ্রামটা সাথে দিয়ে। তখন জনাব এম. এম. খান চিফ সেক্রেটারি ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে পাকিস্তান হওয়ার পূর্ব থেকেই তিনি আমাকে স্নেহ করতেন। রাত আট ঘটিকার সময় আমার মুক্তির আদেশ দিলেন। নয়টার সময় আমাকে মুক্তি দেওয়া হল।
পরিকল্পনা : ইয়াসীন হীরা
গ্রন্থনা : সৈয়দ গোলাম নবী
সম্পাদনায় : মনির ফয়সাল
সূত্র: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, প্রকাশনা- দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, পৃষ্টা নম্বর:২৮৩-২৮৫।
আগের পর্ব পড়ুন : বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পর্ব : ৩৪২