বিএনএ, বিশ্বডেস্ক : প্রাকৃতিক গ্যাসের নির্দিষ্ট একটি মূল্য বেধে দেয়া নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য দূর করা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে সোমবার আবার তারা বৈঠকে বসবে।
জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও নেদারল্যান্ডস এমন নীতির ব্যাপারে সন্দিহান। তবে, সংবেদনশীল এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ফ্রান্সের ভূমিকা হবে মুখ্য।
মঙ্গলবার গ্যাসের সুনির্দিষ্ট মূল্য নির্ধারণ করার প্রস্তাবের উপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ব্রাসেলসে বৈঠকে বসে জ্বালানি মন্ত্রীরা। কিন্তু বিভক্তির কারণে ইউরোপের জন্য অতি জরুরি বিষয়টি নিয়ে কোন সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারেনি তারা।
রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে গ্যাসের সংকট ও মূল্য দুটোই বৃদ্ধি পেলে গ্যাসের দাম বেধে দেয়ার জন্য গত মাসে ইউরোপীয় কমিশনের একটি প্রস্তাবনা দেয়। কিন্তু সেটা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়।
মঙ্গলবারের বৈঠকে কি হয়?
জ্বালানি সমস্যা দূরীকরণে মন্ত্রীরা দুটি ব্যাপারে একমত হয়। তা হল, যৌথভাবে গ্যাস ক্রয়ের পাশাপাশি প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য চূড়ান্তকরণের সাথে সাথে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উদ্যোগ গ্রহণ করা।
“চুক্তি উদযাপন করার জন্য আজ আমি একটি শ্যাম্পেনের বোতল খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, কিন্তু সেটার জন্য আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে,” এভাবেই বলছিলেন চেক শিল্পমন্ত্রী জোজেফ সিকেলা।
চেক প্রজাতন্ত্র বর্তমানে ইইউ-র প্রেসিডেন্ট এবং তিনি এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
সাংবাদিকদের তিনি জানান, “সোমবার মূল্য নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা শুরু করার পর আমাদের লক্ষ্য থাকবে একটি প্যাকেজে তিনটি আইটেম অনুমোদন করা।”
ইউরোপীয় কমিশন প্রতি মেগাওয়াট মূল্য ২৭৫ ইউরো নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছিল শুধু ওই মূল্য যদি কমপক্ষে দুই সপ্তাহের জন্য এই মূল্য স্তরের উপরে থাকে এবং যদি তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম ঐ দুই সপ্তাহের মধ্যে ৫৮ ইউরোর উপরে চলে যায়।
একটি চুক্তিতে পৌছানোর জন্য ইইউ মন্ত্রীদের মূল্য সীমা কত বেশি হওয়া উচিত, কি ধরনের চুক্তিতে এটি প্রয়োগ করা উচিত এবং কি ধরনের সুরক্ষা নীতি প্রণয়ন করা উচিত বিষয়গুলোতে একমত হতে হবে। এছাড়াও, অনাহূত পরিস্থিতে ইইউ কর্তৃপক্ষ যেন অবিলম্বে নির্ধারিত গ্যাসের মূল্য স্থগিত করতে পারে তার ব্যবস্থাও থাকতে হবে।
ইইউতে দুর্বল ভারসাম্য
গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো এক ধরনের অস্বস্তির ভিতরে রয়েছে।
জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও অস্ট্রিয়াসহ কিছু দেশের আশঙ্কা যে, গ্যাসের মূল্য বেধে দিলে যারা বেশি দাম দিয়ে গ্যাস কিনতে পারে সব সরবরাহ তাদের আয়ত্ত্বে চলে যাওয়া ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
“আলোচনায় আমরা এগিয়েছি, কিন্তু এখনও সবকিছু চূড়ান্ত করা যায়নি,” বৈঠকের পর জার্মান অর্থমন্ত্রী রবার্ট হ্যাবেক জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, গ্রীস, বেলজিয়াম, ইতালি এবং পোল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশগুলো একটি নির্দিষ্ট মূল্য বেধে দেয়ার অনুরোধ করছে, যা গ্যাসের উচ্চ দামের মধ্যে তাদের অর্থনীতিকে রক্ষা করবে বলে তারা মনে করে।
‘‘ইউরোপীয় নাগরিকরা কষ্টের মাঝে রয়েছে, ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং আমরা অকারণে বিতর্ক করছি,” বৈঠকের আগে এভাবেই বলছিলেন গ্রীসের জ্বালানি মন্ত্রী।
ইতালির ইউরোপ বিষয়ক মন্ত্রী রাফায়েল ফিত্তো বৈঠকে যাওয়ার সময় বলেছিলেন, ‘‘পরামর্শ করার সময় শেষ হয়ে গেছে।”
এমন পরিস্থিতিতে ভোটের মাধ্যমে গ্যাসের মূল্য বেধে দেয়ার প্রস্তাব অবরুদ্ধ করা যেতে পারে, তবে ফ্রান্সের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
সিকেলা বলেছেন, গ্যাসের মূল্য বেধে দেয়ার বিষয়টা ‘অত্যন্ত সংবেদনশীল’ এবং এটা ইউরোপীয় ইউনিয়নে একটি দুর্বল ভারসাম্য প্রকাশ করেছে।
বিএনএনিউজ/এইচ.এম।