বিএনএ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা খুনিদের মানবাধিকার রক্ষা করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (১৪ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আয়োজিত আলোচন সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের আশ্রয় দেয়ার প্রসঙ্গ টেনে আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুনি রাশেদ এখন আমেরিকায়। বার বার আমরা অনুরোধ করছি ওই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ফেরত দিন। সেই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে দেয় না। খুনির মানবাধিকার রক্ষা করছে তারা। অর্থাৎ মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীকে তারা রক্ষা করছে। মেজর নূর এখন কানাডায়। বার বার অনুরোধ করলেও কানাডা সরকার ফেরত দেয় না। খুনিদের মানবাধিকার রক্ষা করতে তারা ব্যস্ত। তাহলে আমরা যারা স্বজন আপনজন হারিয়েছি, আমাদের অপরাধটা কী? আমি জাতির কাছে জিজ্ঞাসা করি বিএনপি বা জামাতের জন্য যারা হাপিত্যেশ করে, কান্নাকাটি করে- তারা জবাব দিক।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ এদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে না, সুরক্ষা দেয়। আওয়ামী লীগ মানুষের অধিকার নিশ্চিত করে। আওয়ামী লীগ দেশের সমস্যা সমাধান করে। মানুষের জন্য কাজ করে।
মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রশ্নে বিএনপির নাম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা খুনিদের বিচারের হাত থেকে রেহাই দিয়ে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে তখন মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় না? আমি নিজেও বলতে পারি আমার মানবাধিকার কোথায় ছিলো? কেন আমি বাবা মায়ের লাশ দেখতে পাইনি। কেন খবর পাইনি। কেন আমাকে ৬ বছর দেশে আসতে দেয়নি। কেন রেহানার পাসপোর্ট জিয়াউর রহমান রিনিউ করতে দিলো না। সে জবাব কি তারা দেবে? কোন সন্ত্রাসী, কোন জঙ্গি, কোন ড্রাগ ডিলার মারা গেছে তাদের মানবাধিকার নিয়ে ব্যস্ত। এরা যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। তার কোন কথা নেই।’
বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, আমার আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে না? কত নেতাকে গুম করেছে না? বহু লোককে অত্যাচার করেছে। এমন ভাবে অত্যাচার করেছে যে বেশিদিন আর বাঁচতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা উন্নয়নশীল করে করেছি। তো আমরা দেশের সর্বনাশটা কী করলাম? খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো কী সর্বনাশ হয়ে গেল? তবে হ্যাঁ হতে পারে। কাদের হতে পারে? যারা মনে করে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না। অর্থ্যাৎ তাদের নীতি বাংলাদেশ সারাজীবন খাদ্যে ঘাটতি থাকবে। বিদেশ থেকে ভিক্ষা চেয়ে আনবে। ভিক্ষার খাবার খাবে। আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচবে না। নিজের পায়ে দাড়বে না। দুঃখটা তাদের। এজন্য তাদের চোখে দেশের কোন উন্নতি হয়নি। তারা লুটে খেতে পারছে না বলে দাবি করছে বাংলাদেশের নাকি কিছুই হয়নি।
বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বিএনপির লোকেরা দেখি গুম গুম নিয়ে কথা বলেন। আরে এদেশে গুমের কালচার তো শুরু করেছে জিয়াউর রহমান। একেক রাতে জিয়া সেনা, বিমান বাহিনীর অফিসার সৈনিকদের হত্যা করেছে। সেই সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। গুম করেছে। একই দিনে একই সাথে ১০ জন করে ফাঁসি। তার লাশ আত্মীয় স্বজনদের দেয়া হয়নি। মাটিচাপা দিয়ে লাশ কোথায় লুকিয়েছে কেউ আজ পর্যন্ত বলতে পারে না। এখনো আত্মীয় স্বজন খুঁজে বেড়ায় কোথায় লাশ। এমন কোনো কারাগার নেই যেখানে ফাঁসি দেয়া হয়নি। হত্যা করে লাশ গুম। পরিবার কখনো লাশ দেখতে পারেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড এদেশের মানুষ মেনে নেয়নি। প্রতিবাদ করেছে। আর যারাই প্রতিবাদ করেছেন তাদেরই জিয়া হত্যা করেছে। সেই পরিবারগুলো আজও লাশের জন্য কেঁদে ফেরে। তো বিএনপি কোন মুখে গুম-খুনের কথা বলে। জিয়াউর রহমান যেটা করেছে। খালেদা জিয়াও সেই একই কাজ।
সরকার প্রধান বলেন, আমরা বুদ্ধিজীবী দিবসে কর্মসূচি পালন করি। বিএনপির কোনো কর্মসূচি আছে? তার মানে সেদিন যারা হত্যা করেছিল এদেরকে জিয়াউর রহমান খালেদা জিয়া ক্ষমতায় বসিয়েছিল। মন্ত্রী-উপদেষ্টা বানিয়েছিল। এরশাদ এসে আরেক ধাপ উপরে। রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করলো খুনি ফারুককে।
তিনি বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যা, আওয়ামী লীগকে নিহ্নিত করা.. অপরাধটা কী? অপরাধ এদেশের স্বাধীনতা আমরা এনেছি। জাতির পিতা যদি স্বাধীনতা না আনতেন ওই মেজর জিয়া কি মেজর জেনারেল হতে পারতো? জীবনেও পারতো না। মেজর থেকেই স্যালুট দিতে দিতে বুট ক্ষয় হতো। পা ক্ষয় হতো। ওই খানেই শেষ হতো। খালেদা জিয়াকে মেজর জেনারেলের বউও হতে হতো না। তারেক জিয়াকে মেজর জেনারেলের ছেলেও পরিচয় দিতে হতো না। এটাই বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা খাদ্য নিরাপত্তা দিয়েছি। খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়েছি। বিএনপি কত লক্ষ্য মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন করেছে। এক কোটি ৬৯ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ছিলো। আজকে আমরা চার কোটি ৭২ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করছি। চালই করেছি চার কোটি ৪ মেট্রিক টন। গম ভুট্ট সব আমরা উৎপাদন করছি। স্বল্পমূল্যে ও বিনা পয়সায় খাদ্য দিচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করার জন্য খালেদা জিয়ার ন্যায্য বিচার হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আমরা কিন্তু মামলা দেইনি। মামলা দিয়েছিল তারই প্রিয় মইন ইউ আহমেদ, ফখরুদ্দীন আহমেদ আর তার ইয়েস উদ্দিন। মামলা হয়েছে। সাজা পেয়েছে। আওয়ামী লীগের দোষ দিয়ে তো লাভ নেই। বরং আমার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া ১২টি মামলা দিয়েছিল। এরপর মইন ইউ আহমেদ, ফখরুদ্দীন আহমেদ-ইয়েস উদ্দিন এসে আমার বিরুদ্ধে মামলা দিলো। আমার একটা মামলাও নির্বাহী আদেশে নিষ্পত্তি হয়নি। প্রত্যেকটি মামলা তদন্ত করে কিছু পেলে বিচার করতে বলেছি। না হলে ডিসমিশ করতে বলি। প্রত্যেকটি মামলার তদন্ত হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে তো কিছু পাইনি। পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে কানাডার ফেডারেল আদালতও তদন্ত করে কিছু পাইনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা সোনার বাংলার পথে এগিয়ে যাচ্ছি। এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। আগামী বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। মানুষের যাতে কষ্ট না হয় তারজন্য যা যা করনীয় সবই করে যাচ্ছি।
বিএনএ/এ আর