বিএনএ, ঢাকা: বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশকে হত্যা করা হয়নি। তিনি ডেমরার সুলতানা কামাল ব্রিজ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ফারদিন হত্যার তদন্তের নতুন মোড় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
সংবাদ সম্মেলনে মঈন জানান, মামালার প্রেক্ষিতে তদন্তকারী সংস্থা ছাড়াও র্যাব এ মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে। আমরা ফারদিনের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে কথা বলি। এ ঘটনা দেশজুড়ে বেশ আলোচিত হয়। আমরা বিভিন্ন তথ্য-প্রযুক্তি, গোয়েন্দা নজরদারি, তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করি।
র্যাব জানায়, গত ৪ নভেম্বর বিকেলে রাজধানী ডেমরার কোনাপাড়া নিজ বাসা থেকে পরীক্ষার কথা বলে বুয়েটের হলের উদ্দেশে বের হয় ফারদিন। বিকেল আনুমানিক ৫ ঘটিকায় ফারদিন সায়েন্স ল্যাব মোড়ে তার পরিচিতার সঙ্গে দেখা করে। অতঃপর সেখান থেকে নীলক্ষেত ও ধানমন্ডিসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করে। পরবর্তীতে সাত মসজিদ রোডে একটি রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা করে।
অতঃপর রাত আনুমানিক ৮ ঘটিকায় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করে। পরবর্তীতে তিনি রিক্সাযোগে রামপুরায় যান। পরে আনুমানিক রাত পৌনে ১০ ঘটিকায় রামপুরা ব্রিজ এলাকায় তিনি রিক্সা হতে নেমে যায় এবং কিছুক্ষণ রামপুরা ব্রিজ এলাকায় ঘোরাফেরা করেন।
র্যাব আরও জানায়, প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে দেখা যায়, পরবর্তীতে তিনি কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, বাবুবাজার ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা, পুরান ঢাকার জনসন রোড, গুলিস্তানের পাতাল মার্কেট এলাকায় গমন করে।
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে আরও জানা যায় যে, রাত ২.০১ ঘটিকায় (সিসিটিভি ফুটেজ টাইম ২.০৩ ঘটিকা) যাত্রাবাড়ীর বিবিরবাগিচা হতে নিহত ফারদিনকে লেগুনায় উঠতে দেখা যায়। রাত আনুমানিক ২.২০ ঘটিকায় সুলতানা কামাল ব্রিজের অপর পাশে তারাবো বিশ্বরোডের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লেগুনা থেকে নেমে যায় ফারদিন।
তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জানা যায় যে, রাত ২.২৬ ঘটিকায় সুলতানা কামাল ব্রিজের তারাবো প্রান্তে ফারদিনের অবস্থান ছিল। অতঃপর রাত ২.৩৪ ঘটিকায় সুলতানা কামাল ব্রিজের প্রায় মাঝখানে আসে ফারদিন।
এদিকে, একই দিন সন্ধ্যায় নিজ কার্যালয়ে একই ঘটনা নিয়ে বিফ্রিং করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি জানান, ফারদিন হতাশায় ভুগছিলেন এবং সেটা থেকেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর মিন্টুরোডের ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিবি প্রধান হারুন বলেন, ‘তার (ফারদিন) স্পেন যাওয়ার কথা ছিলো, টাকা ম্যানেজ হয়নি। তার পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হচ্ছিলো। সবকিছু মিলেই মনে হয়েছে সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলো।
ডিবি প্রধান বলেন, ‘অনেক দিন ধরে আমরা এর তদন্ত করছি। ঘটনার দিন তিনি ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করেছেন। তিনি ওই রাতে এলোমেলো ঘুরে বেড়িয়েছেন। তার মানসিক সমস্যা ছিলো বলেই তিনি এরকম এলোমেলো ঘুরে বেড়িয়েছেন।’
‘ফারদিন ৪টা টিউশন করাতেন’ উল্লেখ করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এই টাকা দিয়ে তিনি নিজের ও ছোট ২ ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতেন। তারপরও তার বাড়িতে শাসন ছিলো, তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার নির্দেশ ছিলো। হলে থাকা যাবে না। তিনি এক ধরনের চাপের মধ্যে ছিলেন, যেটা তিনি মানতে পারেননি।’
ফারদিনের গ্রামীণফোনের নম্বর ট্র্যাক করে তার অবস্থান ডেমরা সেতুর উপর অনুমান করা হয়েছে এবং এই লোকেশনটিতে তিনি লেগুনা থেকে নেমেছিলেন বলে লেগুনা চালক জানিয়েছিলেন। এই দুই লোকেশনের মধ্যে মিল পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেন ডিবি প্রধান। আরও পড়ুন: বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন আত্মহত্যা করেছে: ডিবি
ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘ফারদিন সাঁতার জানতো না। সবকিছু মিলে আমরা মনে করছি এটি আত্মহত্যা।’
ফারদিন নূর পরশ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। গত ৪ নভেম্বর রাতে তিনি নিখোঁজ হন। এর তিন দিন পর গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। এ ঘটনায় তার বান্ধবী বুশরাসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন ফারদিনের বাবা কাজী নুরুদ্দিন।
বিএনএ/এমএফ