বিএনএ ডেস্ক : গত ১৭ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কাজ শুরু হওয়ার পর শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১৮ নভেম্বরের মধ্যে শেখ হাসিনাসহ পলাতকদের আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এই অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘পলাতক ফ্যাসিস্ট চক্র পৃথিবীর যে দেশেই থাকুক, ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের ধরে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’
ইন্টারপোলে রেড নোটিশ দিয়ে শেখ হাসিনাসহ পলাতকদের কবে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ, কিংবা ভারতে পলাতকদের ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফেরত আনা সম্ভব কি না সেই প্রশ্নও উঠছে।
কেননা, ইন্টারপোলের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩, রাজনৈতিক, সামরিক, ধর্মীয় বা জাতিগত চরিত্রের কোনো হস্তক্ষেপ বা কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বিষয়টি জানেন। জেনে শুনে তিনি ইন্টারপোলের রেড নোটিশের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করার কথা বলেছেন। এটি আইন উপদেষ্ঠার ‘ম্যাকিয়াভেলীজম পলিটিক্সেরই’ অংশ। যার রাজনৈতিক পরিভাষা চলচাতুরির মাধ্যমে জনগণকে ধোকা দেয়া এবং শান্ত রাখা।
অনুসন্ধানে জানা যায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ বিভিন্ন মামলার তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ২০১৫ সালে ২রা জুলাই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছিল। এই রেড় নোটিশের বৈধতা নিয়ে আইনি লড়াইয়ে নামেন তারেক রহমানের আইনজীবীরা। পরে শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ ইন্টারপোলের ৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রেড নোটিশের তালিকা থেকে তারেক রহমানের নাম প্রত্যাহারের আদেশ দেয় ইন্টারপোল কমিশন। বর্তমানে ইন্টারপোলের তালিকায় যে ৬৪ জন বাংলাদেশি আপরাধীর নামে রেড নোটিশ নিয়েছে তাতে তারেক রহমানের নাম নেই।
এর আগে ২০১৩ সালে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে আবুল কালাম আযাদকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
কিন্তু বিচার শুরু হওয়ার পর আবুল কালাম আযাদ বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান। তাকে ফেরত আনতে রেড এলার্ট জারি করেছিল ইন্টারপোল।
ইন্টারপোলের তালিকায় এখন যে ৬৪ জনের নাম আছে সেখানে আবুল কালাম আযাদের নামও দেখা গেছে। কিন্তু তাকে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক নূরুল হুদা বলেন, ‘যার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা তাকে যে দেশে নেয়া হবে সেই দেশের পরিস্থিতি কেমন। কিংবা রাজনৈতিক কোনো কারণ আছে কি না সেগুলোও বিচার বিশ্লেষণ করা হয়। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক কাউকে ফৌজদারি অপরাধে আটক দেখিয়ে আনা খুব একটা সহজ নয়।’
এক্ষেত্রে ইন্টারপোল যদি সহযোগিতা করে থাকে তাহলে শেখ হাসিনাসহ পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের দেশে ফেরত আনা সম্ভব কি না এমন প্রশ্নে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা নূরুল হুদা সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেছেন, ‘ফেরত পাঠানোর বিষয়টা শুধু রেড নোটিশের মাধ্যমেই সম্ভব হয় না। সেটা সেই দেশের জুডিশিয়াল অথরিটিরও বিষয় রয়েছে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিশ্চিত হয়েছে, গত ৫ই আগষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলিকাপ্টার যোগে ভারতে পালিয়ে গেছেন। ভারত সরকার তাকে যথাযথ মর্যদা দিয়ে গ্রহণও করেছেন।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ‘প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধের মামলা’য় অভিযুক্ত বা ফেরার আসামি ও বন্দীদের একে অপরের কাছে হস্তান্তরের জন্য একটি চুক্তি আছে ২০১৩ সাল থেকেই। চুক্তি অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তির নামে মামলা বা অভিযোগ দায়ের হয় বা তিনি দোষী সাব্যস্ত হন অথবা দেশের আদালতের কর্তৃক প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধ করার জন্য তাকে ফেরত চাওয়া হয় তাহলে তাকে ফেরত দেবে বাংলাদেশ ও ভারত।
তাহলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেন সেই চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে ফেরত না চেয়ে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাচ্ছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে।
এর উত্তর রয়েছে দুই দেশের অপরাধী বিনিময় চুক্তিতে। এতে বলা হয়েছে, অপরাধটি ‘রাজনৈতিক প্রকৃতির’ হলে যেকোনো দেশ প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বর্তমান সম্পর্কের জায়গা থেকে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ চুক্তি কিংবা ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফেরত আনা সম্ভব না।
সৈয়দ সাকিব