বিএনএ, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আবাসিক হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে মধ্যরাতে দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, পাল্টাপাল্টি স্লোগান ও মুখোমুখি অবস্থান নেয় শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীরা। সোমবার (১৩ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১টা থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলের ৩২২ নম্বর কক্ষ থেকে বিবেক নামের এক শিক্ষার্থীকে রাত সাড়ে ৮টার দিকে নামিয়ে দেয় তাসকিফ আল তৌহিদ নামের আরেক শিক্ষার্থী। পরে সেই সিটে তার এক কর্মীকে তুলে দেন।
বিবেক নাট্যকলা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও নবাব আব্দুল লতিফ হলের সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেনের অনুসারী। অপরদিকে তৌহিদ আরবি বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। অন্যদিকে, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শামীম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহিনুল ইসলাম সরকার ডনের অনুসারী।
বিবেককে হল থেকে নামিয়ে দিলে শামীম তার কর্মীদের নিয়ে তৌহিদের কর্মীকে সিট থেকে নামিয়ে দেন। এরপর শামীম ও তার নেতাকর্মীরা হলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শোডাউন দেয়। পরে, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের বিভিন্ন হলের অনুসারীরাও হলের সামনে জড়ো হয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শোডাউন দেন। এরপর, দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা পাল্টাপাল্টি স্লোগান ও মুখোমুখি অবস্থান নেন। শোডাউনের সময় তাদের হাতে চাপাতি, ছুরি, লোহার রড, পাইপ, স্টাম্প ও বাঁশ দেখতে পাওয়া যায়। এসময় শামীমের অনুসারীরা হলের ভেতরে অবস্থান নেন এবং সভাপতি-সম্পাদকের অনুসারীরা হলের বাইরে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে অস্ত্রপাতি নিয়ে তারা হলের ভিতরে ঢুকার চেষ্টা করলে সভাপতি-সম্পাদক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। পরে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করে দুই গ্রুপের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শামীম হোসেন বলেন, “তৌহিদ হঠাৎ করে গত রাতে ৩২২নং রুম থেকে আমার কর্মীকে হল থেকে নামিয়ে দেয়। যাকে নামিয়ে দেয় সে হলের আবাসিক ছাত্র ও দীর্ঘদিন ধরে আছে। আর যাকে তুলেছিল সে হলে নতুন আর অনাবাসিক ছাত্র। আমি ভাল করে তাকে চিনিও না। তারা আমার কর্মীকে হল থেকে নামিয়ে দিয়েছিল। তাই, আমরা প্রতিবাদ করেছি।”
মধ্যস্থতা শেষে গত রাতে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, “ছাত্রলীগের কর্মীদের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি বা সমস্যা হলে, আগে আমাদের জানাতে হবে। যেকোন সমস্যা দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তি করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। এসময় ২ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থল ছেড়ে নেতা-কর্মীদের হলে ফিরে যাওয়ার নির্দেশও দেন তিনি।”
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, “গত রাতে নবাব আব্দুল লতিফ হলের একটা সিট নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছিল। সাধারণ সম্পাদকসহ আমরা সেখানে গিয়ে বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি। এখন সবকিছু স্বাভাবিক আছে।”
এ বিষয়ে নবাব আব্দুল লতিফ হলের প্রভোস্ট ডক্টর এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান বলেন, “গতকালের ঘটনাটি আমি শুনেছি; ছাত্রলীগের ছেলেরা স্লোগান দিচ্ছিল। তবে অস্ত্র প্রদর্শনীর বিষয়ে আমার জানা নেই। হলের কোনো সাধারণ শিক্ষার্থীও আমাকে কোনো অভিযোগ দেয়নি। যতটুকু পরে জেনেছি, ওরা নিজেদের মধ্যেই বিষয়টি মীমাংসা করে নিয়েছে।”
বিএনএ/সাকিব, এমএফ