বিএনএ, ঢাকা : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার চরম পারদে উঠেছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বুধবার তফসিল ঘোষণা করার পর কঠোর কর্মসূচীর দিবে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।অসহযোগ আন্দোলনের দিকে ধাবিত হচ্ছে তারা। এতদিন ধরে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী গ্রেফতার এড়িয়ে চললেও এখন আটঘাট বেঁধেই মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে দলটির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্র বলছে, চলমান আন্দোলন দীর্ঘায়িত হতে পারে বিবেচনায় এ কৌশল নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে রাজপথে তেমন দেখা যায়নি বিএনপি নেতাকর্মীদের। কারণ একই সময় সবাই গ্রেপ্তার বা কর্মসূচি পালনে শক্তি হারানোর পক্ষে নয় দলটি। যার কারণে প্রত্যেক নেতা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে সামান্য বিরতিতে বিএনপি লাগাতার হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি চলছে। । মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পরদিন গত ২৯ অক্টোবর দলটির পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন পর হরতালের ডাক দেওয়া হয়।
২৮ অক্টোবর সংঘর্ষের পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম, বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র সদস্য সচিব মো. আমিনুল হকসহ অনেককে। তাদের অনেককে রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। অনেকে আবার রিমান্ড শেষে কারাগারে আছেন।
এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবরের আগে গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, তাঁতীদলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, শেখ রবিউল ইসলাম রবি, যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, এসএম জাহাঙ্গীর, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্না, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন, যুবদলের সাবেক সহ সভাপতি আলী আকবর চুন্নু ও নরসিংদী জেলা ছাত্রদল সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদকে।
এ ছাড়া সারাদেশে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের প্রায় দুই কোটি নেতাকর্মী ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে দাবি করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
এমন পরিস্থিতিতে পুলিশি গ্রেপ্তার এড়াতে অনেক নেতাকে মাঠে দেখা না গেলেও তারা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দলের নানা কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
তফসিল ঘোষণার পরদিন থেকেই বিএনপি ‘অসহযোগ’ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে তা পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও সূত্র জানিয়েছে। দলীয় সূত্র আরও জানায়, সামনে বিএনপি আরও কঠোর আন্দোলনে যাবে। তখন সম্মিলিতভাবে সব নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যাবে।
তফসিল ঘোষণা পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, সমমনা জোট, এলডিপি ও গণঅধিকার পরিষদসহ যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে কথা বলছেন বিএনপির হাইকমান্ড। পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি ইসলামী দলকে তফসিলকেন্দ্রিক আন্দোলনের সময় পাশে চায় বিএনপি।
তফসিলের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইসির আওতায় থাকবে। তারপরও তফসিল ঘোষণার মুহূর্ত থেকেই মাঠে নামার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বিএনপি। তফসিলের পরদিন ‘অসহযোগ’ আন্দোলনের ঘোষণা দিতে পারে দলটি। পাশাপাশি সচিবালয় ঘেরাও, ইসি ঘেরাও করার মতো কর্মসূচিও রয়েছে তাদের আলোচনায়।
বিএনএ/ ওজি