বিএনএ ঢাকা: এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের নামে প্রতারণার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রোববার (১৪ নভেম্বর) ঢাকার উত্তরা, গাজীপুরের পুবাইল ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ এলাকায় একাধিক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মশিউর রহমান।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- টঙ্গী সরকারি কলেজে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র কালিমুল্লাহ, মোহনগঞ্জ সরকারি কলেজের মানবিকের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আল-রাফি ওরফে টুটুল এবং হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজর অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আব্দুল্লাহ আল মারুফ ওরফে তপু। তাদের কাছ থেকে তিনটি স্মার্টফোন, দুইটি বাটন ফোন, নগদ ১২০০০ টাকা এবং ছয়টি সিম উদ্ধার করা হয়েছে।
অভিযানের বিষয়ে ডিসি মো. মশিউর রহমান বলেন, প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার সময় কিছু অসাধু চক্র টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার চেষ্টা করে থাকে। এতে ব্যর্থ হলে প্রশ্ন ফাঁস করার নামে প্রতারণার জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ নিয়ে ফেসবুক, মেসেঞ্জার এবং অন্যান্য ইন্টারনেটভিত্তিক মাধ্যমগুলোতে প্রচারণা চালায় তারা। এই সমস্ত প্রতারকদের বিরুদ্ধে সতর্ক দৃষ্টি রেখে সাইবার পেট্রলি করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ। সেই ধারাবহিকতায় রোববার দুইটি চক্রের তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের এই চক্রের কাছ থেকে সাহায্য নেয়ার জন্য পরীক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকদেরকে প্রাথমিকভাবে ৫শ থেকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে সদস্য হতে হতো। এরপর প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ৫শ থেকে ২ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতো তারা। এই চক্র বিভিন্ন পরীক্ষার্থী এবং পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদেরকে এই মর্মে সার্কুলেশন করতো যে ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলা এবং জেলা থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্ন বহনকালে দায়িত্বশীলদের একজন কৌশলে একাধিক প্রশ্নের সরিয়ে রেখে ছবি তুলে পাঠিয়ে দেবে। সেই ছবি তারা বিভিন্ন জনকে মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাফে এবং জি মেইলে সেন্ড করে দেবে। এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা নগদ, বিকাশ, রকেট এর মাধ্যমে পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এদের পরিচালিত প্রশ্নপত্র ফাঁসের মেসেঞ্জার, ফেসবুক পাবলিক গ্রুপ গুলো- কোয়েশ্চান ব্যাংক, এস এস সি কোয়েশ্চান ২০২১, এইচএসসি কোয়েশ্চান ২০২১, কোয়েশ্চান লিংক, PSC, JSC, SSC, HSC – All Exam Helping Zone এবং SSC 2021 All Board ইত্যাদি। এই প্রতারক চক্রের বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপের ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় ৪৭০০ জন।
ডিসি মশিউর রহমান বলেন, পাবজি খেলায় পটু আল রাফি ওরফে টুটুল সাইবার সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধ বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান রাখে। সে ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য ‘আলমগীর হোসেন’ নামে একটি ফেক আইডি খুলে। আইডিটি খোলার জন্য সে একটি টেম্পোরারি মেইল আইডি নিদিষ্ট ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করেছে। এই ভুয়া অ্যাকাউন্ট ও টেম্পোরারি মেইলটি দুই থেকে তিন দিন সক্রিয় থাকার পরে অটোমেটিক্যালি ডিঅ্যাক্টিভেটেড হয়ে যায়।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিলো। তাদের পক্ষে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা অসম্ভব। কিছু ছাত্র এবং অভিভাবক পড়াশোনাতে মনোযোগ না দিয়ে ইন্টারনেট ভিত্তিক বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ক্রয়ের জন্য ব্রাউজ করতে থাকে। প্রতারকরা মূলতঃ এদেরকেই টার্গেট করে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার নানান রকমের আকর্ষণীয় প্যাকেজের কথা বলতো বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা।
বিএনএনিউজ/আরকেসি